
নয়া আলো ডেস্ক- বিশ্বাস্য! এমন খেলাও হারে কেউ? একেবারে হাতের মুঠো থেকে ছিটকে গেল জয়। হ্যাঁ, এমন নজির ক্রিকেটে ভুরি ভরিই। তবে বাংলাদেশ বলেই দুঃখটা আমাদের বেশি, এই যা। তা না হয়, ক্রিকেটটা এমনই। রহস্য প্রতি পরতে। ক্রিকেটের মাহাত্ম তো এখানেই। হারতে হারতে জেতা আর জিততে জিততে হারা। ভুলে গেছেন! এই তো দু’সপ্তাহ আগে ২৫শে সেপ্টেম্বর এ মাঠেই ঠিক এমনিভাবে হারতে বসা এক খেলায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। ৩১০ রানের লক্ষ্যে নেমে ২৮৮ রানে অলআউট হতেই পারে যে কোন দল। কিন্তু ২৭১ রানে চার উইকেট থেকে ২৮০ রানে নবম উইকেটের পতন ইতিহাসে বিরলই। ডাচবাংলা ব্যাংকের সৌজন্যে রকেট সিরিজে এমনই দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব।
প্রিয় পাঠক, অবস্থাটা আবার একটু ভাবুন। ৫২ বলে চাই ৩৯ রান। ইমরুল কায়েস আর সাকিব আল হাসান কী সাবলীল ব্যাট করছেন। দারুণ জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের দিকে। হাটে-ঘাটে-মাঠে তর্ক- এ জুটিই শেষ করবে খেলা না অন্য কেউই। অনেকের সংশয় যে কয় বল বাকি আছে তাতে সাকিবের সেঞ্চুরিটা হয় কি হয় না!। সাকিব ছুটছেন বেশ নির্ভয়ে। মঈন আলীর ওভারে ছক্কার পর চার মেরে ফিফটি। এরপরের ওভারে ওকসের বল তিনবার সীমানা পার করান। তর্ক না জমে উপায় কী। ৩৯ বলে ফিফটি। এরপর ১৫ বলে ২৯। ৪২তম ওভারে বল করতে এলেন জ্যাকব বল। এর আগে ৬ ওভারে তিনি ২ উইকেট নিয়েছেন ৩৯ রানে। তার প্রথম বলে দুই দ্বিতীয় বলে চার। দেশজুড়ে উল্লাস বাড়ছেই। যেখানেই বাংলাদেশি আর যেখানেই টেলিভিশন সেখানেই খেলা। এমন জয়ের সাক্ষী কে না হতে চায়। ৩১০ রানের লক্ষ্য-তাও যেন পানি-ভাত। তৃতীয় বলটা খেলার আগে একটু থমকে গেলেন সাকিব। কেমন যেন খোঁড়াতে লাগলেন। শুরুর হলো তার যতœ আত্তি। মুহূর্তেই গাজি টেলিভিশন দর্শকদের নিয়ে গেলেন বিজ্ঞাপন বিরতিতে। ব্যবসাটাই তো আগে। সুযোগ হারাবেন কেন। এ ফাঁকে সবাই একটু নড়ে চড়ে বসলেন। কিন্তু এতে বাংলাদেশের ইনিংসও যে নড়বড়ে হয়ে যাবে তা কে ভেবেছিল। হ্যাঁ, এবার তৈরি সাকিব। বল করলেন বল। বুক সমান বলে সাকিবও ব্যাট চালালেন সমান আত্মবিশ্বাসে। তার পুল শটের বল উড়ে ঠাঁই নিলো মিডউইকেটে দাঁড়ানো উইলির হাতে। সবার আফসোস সেঞ্চুরি হলো না সাকিবের। ৫৫ বলে ৭৯। ১০টি চার আর একটি ছক্কা। দুটি উইকেটও ছিল বলে ম্যাচসেরাও হতে পারতেন তিনি। হঠাৎই উল্লাস থেমে গেল। শতভাগ জয়ের সম্ভাবনায় যেন চিড় ধরলো। সাকিবের বিদায়ে মন খুব কাঁপেনি কারও। জয়তো নিশ্চিতই। এলেন মোসাদ্দেক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ নজর কেড়েছেন এ নবাগত। সবার আস্থা আছে তার ওপর। কিন্তু না, এ-তো ইংল্যান্ড। এটাও খাটো লেন্থের বল ছিল। ব্যাট চালান মোসাদ্দেক। কিন্তু ব্যাটের পেটে নয়, কোনায় লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ২৭১/৪ থেকে স্কোর ২৭১/৬। অভিষেক হওয়া জ্যাকব টিমোথি বলের উইকেট দাঁড়ালো চার-এ। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে যোগ দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। চরম হতাশাবাদীরা ছাড়া সবাই তখনও বাংলাদেশের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত।
নতুন করে শুরু করতে চাইলেন ততক্ষণে শতরানে পৌছে যাওয়া ইমরুল আর মাশরাফি। কিন্তু এবার বাদ সাধলেন স্পিনার, লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। আফগানিস্তানের স্পিনার রশিদকে খেলে এ রশিদকে গুরুত্ব খানিকটা কমে গিয়েছিল। কব্জির মোচড়ে ভেল্কি দেখালেন তিনি। ৪৩তম ওভারে তার বলে কট বিহাইন্ড হলেন মাশরাফি। পরের ওভারে মোশাররফ-ইমরুল মিলে পাঁচ রান তুললেন বলের কাছ থেকে। ফের এলেন রশিদ। প্রথম বলেই সুইপ করার চেষ্টায় জায়গা ছেড়ে অনেকটা বাইরে বেরিয়ে এলেন ইমরুল। কিন্তু বল হঠাৎ বাঁক খেয়ে তার নাগালের বাইরে দিয়ে চলে গেল। ওয়াইড!। কিন্তু সেই বল হাতে নিয়ে বাটলার ভেঙে দিলেন উইকেট। ১১২ রান করে স্টাম্পড ইমরুল। তার ক্যারিয়ারের ঠিক এক ম্যাচ আগে গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭৩ রান করে স্টাম্পড হয়েছিলেন। কপাল মন্দ হলে নাকি এমনই হয়! সেই ২০১০ সালে ক্রাইস্টচার্চে ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার পরে অনেকবার ফিফটি করলেও তিন অংক হচ্ছিল না। দলে জায়গাও ছিল নড়বড়ে। প্রস্ততি ম্যাচে সেঞ্চুরি আর সৌম্যের ব্যর্থতায় দলে ফিরে ছয় বছর পর স্বপ্নের সেঞ্চুরি। উইলির বলে চার মেরে শয়ের ঘরে যান। মনে হচ্ছিল দলকে জিতিয়েই ফিরবেন তিনি। পারলেন না। ১১৯ বলে ১১২ রান, ১১ চার, দুই ছক্কা। তাতে কি একটু হাসি ছিল তার মুখে? না মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়লেন। সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। ৬ বল খেলে রান আউট শফিউল। আর শেষ পেরেকটা ঠুকে অভিষেকেই পাঁচ উইকেট তুলে নিলেন নটিংহামশায়ারের জ্যাক বল। তাসকিন কট বিহাইন্ড হন যখন কখনও ১৩ বল বাকি ছিল খেলঅর। বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৮৮। এর আগে সেই ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডেতে অভিষেকে চার উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন অ্যাডাম হোলিয়ক। ম্যাচ সেরাতো তিনিই হবেন! অভিষিক্ত বোলারের কাছেই হারলো বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসির হোসেন ধারাভাষ্যে বলছিলেন আধ ঘন্টা আগেও যে ম্যাচ হারা অসম্ভব মনে হচ্ছিল তাই বাংলাদেশ হারলো ২১ রানে।
বিশাল লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। তামিম ইকবালের ১৭ রানের পর সাব্বির রহমান ফেরেন ১৮ রানে। এরপর থিতু হয়েও মাহমুদুল্লাহ ফেরেন ২৫ রানে। আর সর্বশেষ মুশফিকুর রহীম ফিরলেন ১২ রানে। ২৬ ওভারে ৪ উইকেট হারানোর পর ইমরুল আর সাকিব ধীরে ধীরে রান বাড়াতে থাকেন। ১৫৩তে শুরু করা জুটি থামে ২৭১এ। ১১৮ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিটা ব্যর্থ হয়ে গেলো।
বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার। বেন স্টোকসের ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ করে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান। ইংল্যান্ড শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন শফিউল ইসলাম। দলীয় ৪১ রানের মাথায় জেমস ভিন্সকে ফেরান তিনি। ভিন্স করেন ২০ বলে ১৬ রান। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জেসন রয়কে (৪১ রান) ফেরান সাকিব আল হাসান। এর ঠিক পরের ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের তৃতীয় বলে রানআউট হয়ে ফেরেন জনি বেয়ারস্টো। শুরুতে ৬৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। বেন স্টোকস ও অভিষিক্ত বেন ডাকেট ১৫৩ রানের জুটি গড়েন। ডাকেট ৭৮ বলে ৬০ রানে ফেরার পর স্টোকস ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ১০০ বলে ১০১ রান করেন। আর শেষের দিকে অধিনায়ক জস বাটলার ৪ ছক্কা ও ৩ চারে মাত্র ৩৮ বলে করেন ৬৩ রান। এর আগে ৭ বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারায় তারা।