১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

শিরোনামঃ-




আইসিএল গ্রুপের এমডি শফিক স্ত্রীসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

মোঃ শাহীন আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : মে ২৭ ২০২১, ১৯:০২ | 819 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

আইডিয়েল কো-অপারেটিভ লিমিটেড (আইসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচএনএম শফিকুর রহমান ও ঁতার স্ত্রী শামছুন্নাহার মিনাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। রাজধানীর বাংলামটর বাসা থেকে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানায়, আইসিএল শফিকের বিরুদ্ধে অর্থ আতœসাৎ, প্রতারনা ও অপহরনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শফিক রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার ওয়ারেন্ট ও সাজা রয়েছে। তিনি অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারন মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, গ্রাহকদের টাকাসহ লভ্যাংশ ফেরত চাইতে গেলে হুমকি দামকিসহ অপহরন করতেন। আগেও আমানত গ্রাহকের মামলায় তিনি ও তার স্ত্রী আটক হয়েছিলেন বলে র‌্যাব জানায়। গ্রাহকদের অর্থ আতœসাতের অভিযোগে শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার সাজা রয়েছে তাছাড়া প্রায় ২৫টি মামলার ওয়ারেন্ট ভূক্ত আসামী তিনি। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের শতাধিক মামলা রয়েছে।
জানা যায়, লক্ষ লক্ষ মানুষের পথের ভিখারী বানানোর, তাদের আত্মসাত, হাহাকার, আত্মচিৎকার ও অনেক পরিবার ভাঙ্গার খলনায়ক আইসিএল গ্রুপের এমডি এইচ এন এম শফিকুর রহমান। কারো পেনশনের টাকা, কেউ ব্যাংকের জমানো টাকা উত্তোলন, কেউবা জমি বিক্রির টাকা আইডিয়েল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে (আইসিএল) আমানত ও ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পে বিনিয়োগ করে কয়েক হাজার পরিবার সর্বস্ব খুইয়ে এখন দিশেহারা। সারা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের হাজার হাজার কোটি নিয়ে আত্মগোপন করলেও সে প্রতিনিয়ত আড়ালে থেকে নতুন নতুন প্রতারনা কৌশল বের করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছিলো। প্রতারণার অনেক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে তাদের সহযোগিতায় প্রতিনিয়ত সে নতুন নতুন অপকর্ম করত। শত শত প্রতারনার মামলা থেকে বাচঁতে জামাত রোকন শফিক জাতীয় পাটিতে যোগ দিয়ে সুবিদা করতে পারেনি অবশেষে স্থানীয় জাতীয় পাটির নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৫নং শুভপুর ইউনিয়নের ধনিজকরা গ্রামের বাসিন্দা শফিক। তার বাবা সাবিত আলীর ছিলেন একজন কৃষি শ্রমিক। অভাব অনটনের কারনে সে স্কুল জীব থেকেই বিভিন্ন বাসায় গৃহ শিক্ষক ছিলেন। তখন থেকেই তিনি শিবিরের রাজনৈতির সাথে জড়িত হন। শিবিরকর্মী থেকে ধাপে ধাপে তিনি শিবির সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে তিনি কুমিল্লা শহরে আসেন। শিবির থেকে তিনি জামায়াতে যোগ দেন। জামাত কর্মী থেকে জামাতের সবোর্চ্চ পদ রুকন হন। শহর জামাতের মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত হন। কুমিল্লা নগরীর চকবাজার বর্জ্রপুরে গৃহ শিক্ষক থাকাকালে সে বাসার প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজে ধরা পড়লে স্থানীয়রা তাকে গনপিঠুনি দেয়। সেখান থেকে তিনি ঠাকুরপাড়ায় চলে আসেন। তারপর যোগদান করেন ইসলামী ব্যাংকে। সেখানেও তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আতœসাতের অভিযোগে চাকুরি থেকে বহিষ্কৃত হন। এর পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতি ও প্রতারনার পর তিনি নিজেই গড়ে তুলেন প্রতারনার নতুন প্রতিষ্ঠান আইডিয়েল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে এ কোম্পানি।

এ কোম্পানির মাধ্যমে প্রতারনার করে গ্রাহকদের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আতœগোপন করে। একজন কৃষি শ্রমিকের সন্তান অভাব অনটনের মাধ্যমে বড় হয়ে এখন প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান এই শফিক। গড়ে তুলেন দেশের বাহিরে বিশাল সম্পদের পাহাড়। পুরানা পল্টনের দেওয়ান কমপ্লেক্সে আইডিয়েল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া প্রতারক মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ‘আইসিএল গ্রুপ’ গ্রাহকদের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ায় সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরছে বিনিযোগকারীরা। এভাবে প্রধান কার্যালয়ের মত দেশের বিভিন্ন স্থানের ৩৪টি শাখা বন্ধ করে পালিয়ে যায় আইসিএস গ্রুপ। আইসিএল গ্রুপের অধিকাংশ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাচারে সক্ষম হন তারা। প্রতারক চক্রটির মূল হোতারা সেখানেই গড়ে তুলেছেন নিজেদের সেকেন্ড হোম। গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক শফিক গা ঢাকা দেয়। হুন্ডির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বিদেশে। হাজার হাজার অসহায় মানুষকে নিঃস্ব করে লুটে নেওয়া টাকায় প্রতারকরা গড়ে তুলেছিলেন নিরাপদ আবাস, অভিজাত জীবন।
আইসিএল শফিক এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহে সক্ষম হয়। ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইসিএলের জমি ও সম্পদের বেশির ভাগই গোপনে বিক্রি করে টাকা পাচার করা হয়েছে মালয়েশিয়ায়। রাজধানীর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লার মিঞাবাজার, ধনিজকরা, চৌদ্দগ্রামসহ অন্যান্য স্থানে থাকা আইসিএলের বাকি সম্পদও বিক্রি করে দিয়েছে। এভাবেই সাধারণ মানুষের কষ্টে জমানো আমানত লুটে নিয়ে সংঘবদ্ধ প্রতারকরা রাতারাতি উধাও হয়ে যায়। গ্রাহকরা জানান, আইডিয়াল কো-অপারেটিভ সোসাইটি ২০০১ সাল থেকে দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হজ¦ আমানত, ডিপিএস, মাসিক মুনাফা, দ্বিগুণ বৃদ্ধি আমানত, শিক্ষা আমানত, আবাসন আমানত, ব্যবসায়িক আমানত, দেনমোহর আমানত, কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম, লাখপতি ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পের নামে অর্থ সংগ্রহ করে। অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এমডি শফিকুর রহমানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও আইসিএল গ্রুপের পরিচালক কাজী সামসুন নাহার মিনা।
কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়, পদুয়ারবাজার এলাকাসহ চৌদ্দগ্রামে ৬টি শাখা অফিস খুলে দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় এক লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে হজ আমানত, ডিপিএস, মাসিক মুনাফা, দ্বিগুণ বৃদ্ধি আমানত, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায়িক, দেনমোহর আমানত এবং লাখপতি ও কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পের নামে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে মাত্র তিন বছরে রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনের প্রধান অফিসসহ কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য জায়গার ৩৬টি শাখা অফিসের মাধ্যমে কয়েক লাখ গ্রাহকের ৮হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তারমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের একটি বড় অংশ কুমিল্লার।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে আইসিএল বন্ধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ায় কুমিল্লার বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চেক জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাতের মামলা করে। অন্যদিকে দুদকও অনুসন্ধান এবং তদন্তে নামে।
এদিকে সমন্বয়ের নামেও শফিকুর প্রতারনা করেছেন। আইসিএল শফিক নিজের এলাকার বিভিন্ন মানুষের মামলা থেকে রক্ষা পেতে তার আশে পাশের কিছু গ্রাহকদের টাকার পরিবর্তে জমি দিবেন বলে সমন্বয়নের নামে প্রতারনা করেছেন বলে জানান ভূক্তভোগিরা। সে ১ লক্ষ টাকার মূল্যও জমি ১০ লক্ষ টাকা দাম ধরে কিছু মানুষকে দেয়। আবার অনেককে জমি দিবে বলে কাগজপ্রত্র নিয়ে আর জমি দেয় না। অনেক গ্রাহকের মামলা ঢাকার হাইকোটে নিয়ে স্থগিত করে রাখে। এভাবে নানা কৌশলে সমন্বয়ের নামে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করেন।
প্রতারনার শিকার আইসিএল গ্রাহকদের সমন্বয় পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে তাদের অর্থ ফেরত পেতে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। কুমিল্লায় আইসিএলের প্রতারনার শিকার হাজার হাজার গ্রাহক তাদের টাকা ফেরতের দাবীতে সমন্বয় পরিষদ গঠন করে বিভিন্ন আন্দোলন সভা মানববন্ধন করে সরকারের দৃষ্টি আর্কষন করছেন। কুমিল্লা নগরীর টাউন হল সম্মেলন কক্ষে ভূক্তভোগী গ্রাহক ফোরাম আইসিএল এর আয়োজনে সভায় কুমিল্লা সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক বিবর্তন সম্পাদক অধ্যাপক দীলিপ মজুমদার আইসিএল গ্রুপের এমডি শফিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার দ্রুত বিচার করে আইনের আওতায় এনে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
আইসিএল গ্রুপের গ্রাহক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ময়নামতি এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব কাপ্তানবাজারের আজমির হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান কুমিল্লার লাখো লোকের সঙ্গে প্রতারণা করে কমপক্ষে দুইশো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে শফিকুর রহমানের সহযোগীদের মধ্যে তার স্ত্রী কাজী শামসুন নাহার মীনা, শ্যালক কাজী ফখরুল ইসলাম, ভাগ্নে শেখ আহাম্মেদ জড়িত ছিল। শফিকের কারণে কুমিল্লার কয়েক হাজার পরিবার আজ নি:স্ব। আইসিএলে বিনিয়োগ করা কুমিল্লার সকল গ্রাহক ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শফিকের বিনিয়োগের অর্থ ফেরতের দাবী জানান।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET