সাইফুল ইসলামঃ- পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এমপি বলেছেন- ২০০৮সাল থেকে নাঙ্গলকোটের মানুষকে বিকশিত করার জন্য সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮সালের নির্বাচনের পূর্বে নাঙ্গলকোট থেকে আমার নির্বাচন করার কথা ছিল না। আমি সদর দক্ষিণ থেকে নির্বাচন করার জন্য ফরম ক্রয় করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন তোমাকে নাঙ্গলকোট থেকে নির্বাচন করতে হবে। আমি কে এম সিংহ রতনকে নাঙ্গলকোটের ফরমও ক্রয় করতে বলি। আমি মনোনয়ন ফরম জমা দিচ্ছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে বললেন, তুমি ফরম জমা দিচ্ছ না কেন? তোমাকে কুমিল্লার যে কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তুমি ছাড়া অন্য কেউ নাঙ্গলকোটকে উপরে তুলতে পারবে না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নাঙ্গলকোট পিছিয়ে পড়া এলাকা তুমি কাজ শুরু কর। ২০০৮সালে নাঙ্গলকোটের চাহিদা ছিল বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন। আমি সাধ্যমত উন্নয়ন করছি। আমরা আবার নির্বাচিত হলে আমার প্রথম কাজ হবে নাঙ্গলকোটের ঘরে-ঘরে গ্যাস সংযোগ দেয়া। আমার দ্বিতীয় কমিটমেন্ট হলো এলাকার অসংখ্য ছেলেমেয়ে বি এ, মাষ্টার্স পাস করছে। তাদের কর্মসংস্থান নেই। আমরা প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি গতকাল নাঙ্গলকোটের পেড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্যোগে কাকৈরতলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঐতিহাসিক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। পেড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ আহবায়ক মাষ্টার ইসমাঈল হোসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ আহবায়ক রফিকুল হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন কালু, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা জজকোর্ট পিপি এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম আহবায়ক অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন ভুঁইয়া, শাহজাহান বাবলু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ করিম মজুমদার, নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক ও পৌর মেয়র আবদুল মালেক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ভুঁইয়া, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হামিদ, পেড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মজুমদার। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মামুন, আওয়ামীলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, পেড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, পেড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আবু ইসহাক প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন-আমি বলেছিলাম সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে নাঙ্গলকোটে কাজ বেশি হবে। আমরা এক পরিবারের এবং এক আত্মার মানুষ। আমাদের বিরুদ্ধে হাজার-হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। পুকুরের মাছ লুট করা হয়েছে। বাড়ি ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। ঘর থেকে গরু নিয়ে গেছে। আমরা সেসব ভুলিনি। আমরা তাদেরকে মাফ করে দিয়েছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে স্পর্শ করা, মানুষকে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করা। আমি মানুষের মন জানি। আমার অনেক দায়িত্ব। স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, তাদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন আজকে সব জায়গায় প্রচার হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু তাকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত সব কাজ শেষ করা হবে। প্রত্যেক দলীয় নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করবো আপনারা মানুষের কাছে যান। আপনারা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। এলাকায় আগে যা হয়েছে ভুলে যাবো। হানাহানি-মারামারি চাই না।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন-আগামী নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করবো। আমার বিশ্বাস আমাদের প্রতিপক্ষ নির্বাচনে আসবে। আমি মা-বোনদের বলবো ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাবেন। আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। আমার মা-বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তাদের কাছে অনেক ঋণ। আপনাদেরকে মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। মা-বাবাকে চোখে-চোখে রাখতে হবে। যতœ করতে হবে। আমি মানুষকে ভালোবাসি। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করি। হানাহানির রাজনীতি বন্ধ করুন। আমার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা দেয়া হয়েছে। খুনের মামলার আসামি ছিলাম। তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ইঙ্গিত করে বলেন- আমাদের বিরুদ্ধে হাজার-হাজার মামলা করেছেন। আপনারা যে ক্ষতি করেছেন, আগে ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। তারপর রাজনীতি করেন। তিনি আওয়ামীলীগ দলীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারদের উদ্দেশ্যে বলেন যেসব এলাকা পিছিয়ে আছে আপনারা সবাই কাজ করার জন্য প্রতিযোগিতায় লেগে যান। এলাকার একটা লোকও যেন কষ্ট না পায়, সে কাজটা আপনারা করবেন। আমরা সম্মিলিতভাবে এলাকাকে ঢেলে সাজাবো। সবাই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সবাইকে উন্নয়নের স্্েরাত ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাই। আজকের এ জনসভার মাধ্যমে আমরা নির্বাচনী কাজ শুরু করেছি। নাঙ্গলকোটের যেসব এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান রয়েছে। এগুলোকে আমরা রক্ষাণাবেক্ষন করবো। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করবো। পেড়িয়া ইউনিয়নে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
জনসভায় পেড়িয়া ইউনিয় বিএনপি সাবেক সভাপতি এনায়েত উল্লা মজুমদার, বটতলী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা, কাদবা গ্রামের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বজলু, শাকতলী গ্রামের শফিকুর রহমান, আবদুল মন্নান পৈশাগি গ্রামের শাহজাহানসহ বিপুল সংখ্যক বিএনপি দলীয় নেতাকর্মী আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।