
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ
সরকারীভাবে কৃষক পর্যায়ে বোরো মৌসুমে ধান-চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত থাকলেও বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বাম্পার ফলনের পরেও খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওই এলাকার চাষীদের কাছ থেকে কোন ধান না কেনার সিদ্ধান্ত সরকারীভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় চরম হতাশ হয়ে পরেছেন এ জনপদের চাষীরা। বৈরী আবহাওয়া, মিল মালিক সিন্ডিকেটের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রন, শ্রমিক সংকট, দাদনের টাকা পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পরেছেন কৃষকেরা। আগৈলঝাড়ায় বর্তমানে চলছে বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিনিয়ত বৃষ্টির কারণে বোরো ক্ষেতে পানি জমায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকদের ধান কাটতে বিড়ম্বনায় শিকার হতে হচ্ছে। আবার অনেকে শ্রমিক ধান না কেটে রাতের আধারে পালিয়ে গেছে বলেও জানান কৃষকেরা। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়া, শ্রমিক সংকট, উঠতি ফসলেল বাজার মূল্য কম ও সরকারীভাবে ধান বিক্রি করতে না পারায় উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন তারা। সূত্র মতে, গত ৮ মার্চ সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইমলামের সভাপতিত্বে খাদ্য ও পরিকল্পনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ মে থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত সরকারীভাবে খাদ্য শষ্য ক্রয় বিশেষ করে ধান, চাল ক্রয় মৌসুম নির্ধারণ করা হয়। ওই সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদের উপস্থিতিতে ৩৮ টাকা কেজি দরে চাষিদের কাছ থেকে প্রতি মন চাল ১৫২০ টাকায় ও ২৬ টাকা কেজি দরে প্রতি মন ধান ১০৪০ টাকায় ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তর থেকে বরিশাল জেলার অন্যতম কৃষি প্রধান এলাকা আগৈলঝাড়া উপজেলায় কোন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত দেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়। শুধুমাত্র মিল মালিকদের কাছ থেকে সরকারী ভাবে চাল ক্রয়ের চিঠি পেয়েছেন উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর। ফলে ৭শ টাকা দরে স্থানীয় বাজার মূল্যে ধান বিক্রি করে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। সরকারীভাবে কোন ধান না ক্রয়ের সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় ধানের বাজার মিল মালিক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে চলে যাবার আশংকায় উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা করছেন কৃষকেরা। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দ্বায়ীত্বে থাকা উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক শাহাদাৎ হোসেন জানান, সরকারীভাবে উপজেলায় ৩১৮ মেট্টিক টন চাল ক্রয়ের চিঠি পেয়েছেন তারা। ওই চিঠিতে কোন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত তারা পাননি। তিনি আরও বলেন, পূর্বের ৪ টি লাইসেন্সকৃত মিলসহ এবার নতুন ২ টি মিলের সাথে চাল ক্রয়ের চুক্তি করবেন তারা। তবে ছুটির কারণে এখনও পর্যন্ত মিল মালিকদের সাথে কোন চুক্তি করা হয়নি। কৃষকেরা জানান, পাশ্ববর্তী গোপলগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ জেলার শ্রমিকেরা ধানকাটা জন্য আগৈলঝাড়া উপজেলায় আসলেও এবার তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যারাও এসেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে পানি জমায় ধান কাটতে চাইছেন না। অনেক শ্রমিক ধান কাটতে এসে জমিতে পানি দেখে ফিরে গেছেন। শ্রমিক সংকট ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উঠতি পাকা ফসল ঘরে তুলতে না পেরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছেন কৃষকেরা। বাধ্য হয়ে বেশী টাকার বিনিময়ে দিন মজুর দিয়ে ধান কাটছেন অনেকেই। এদিকে প্রান্তিক চাষিরা ধান চাষের জন্য দাদন ব্যাবসায়ী ও মহাজনদের কাছ থেকে নেয়া দাদনের টাকা ও ধান পরিশোধের চিন্তায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছেন। বেশিরভাগ প্রান্তিক চাষী স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতে ১ হাজার টাকায় ১ মন ধান ও নগদ ১ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার বিনিময়ে দাদন নিয়ে বেশী ফলনের আশায় জমি চাষাবাদ করেছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে। কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদিত ফসলের বাজার মূল্য এক শ্রেনীর মুনাফালোভি ব্যবসায়িরা নিয়ন্ত্রন করলেও সরকার এখন পর্যন্ত বাজার মনিটরিং না করায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল চাষী পর্যায় থেকে ধান না কিনে চাল ক্রয়ের সরকারী সিদ্ধান্তের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চাল ক্রয় এখনও শুরু হয়নি। জেলা পর্যায়ে সভা শেষে আগামী সপ্তাহে উপজেলায় সভা করে চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।