আটোয়ারী(পঞ্চগড়) প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে হত্যা মামলার আসামীরা প্রশাসনের নাকের ডোগায় প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রায় ৯ মাস পূর্বে উপজেলার আলোয়াখোয়া পাল্টাপাড়া গ্রামের জনৈক নিহালু দাসের পুত্র বিকাশ দাস (২৫) এর সাথে পাশ্ববর্তী ঠাকুরগাও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী বেলঝাড়ী এলাকার জনৈক তুলসী দাসের কন্যা সুকুমারী দাসের সাথে খ্রিষ্টান ধর্মানুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ের কয়েকদিন যেতে না যেতে যৌতুক লোভী স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজন ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবীতে নববধু সুকুমারী দাসের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এদিকে সুকুমারী দাস সন্তান সম্ভাবা হলেও স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতেই থাকে। অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে ঘটনা জানায় সুকুমারী দাস। কিন্তু পিত্রালয় হতে যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা জানালে নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় যৌতুক লোভীর দল। এব্যাপারে উভয় পরিবারের আত্বীয়স্বজনদের মাধ্যমে একাধিকবার শালিস দরবার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২/৪দিন পরিবারের লোকজন সুকুমারীর সাথে ভাল ব্যাবহার করলে আবার পুনরায় শুরু করে নির্যাতন। এঅবস্থায় সুকুমারী দাসের স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকের যৌতুকের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দিলে বাড়িয়ে দেয় নির্যাতনের মাত্রা। একপর্যায় অতি সম্প্রতি সন্তান সম্ভাবা সুকুমারী দাস নির্যাতনের শিকার হয়ে মারাত্মক অসুস্থ হলে তাকে প্রথমে আটোয়ারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ এবং পরে ঠাকুরগাও স্বাস্থ্য সেবা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আঘাত প্রাপ্ত সুকুমারী দাসের সিজারিয়ান শুরু হলে প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে রক্ত যোগান চাইলেও স্বামীর পরিবারের লোকজন রক্ত যোগান না দিয়ে তাকে কৌশলে মৃত্যূর মুখে ঠেলে দেয়। একপর্যায় রক্ত যোগান দিতে না পারায় সুকুমারী দাস চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায়।
এঅবস্থায় সুকুমারী দাসের ভাই সুকুমার দাস বাদী হয়ে ৬ জনের নামে বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলো উপজেলার পাল্টাপাড়া গ্রামের নিহালু দাসের পুত্র বিকাশ দাস(২৫), মৃত সুকাটু দাসের পুত্র নিহালু দাস(৪৮),মৃত জগদীশ দত্ত(সম্ভু)-এর পুত্র স্বপন দত্ত(৫০),আলোয়াখোয়া গ্রামের মৃত আকালু পালের পুত্র শক্তিনাথ পাল(৪৫),ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া থানার ঢোলার হাট গ্রামের আরজিন দাসের পুত্র কাল্লুস দাস(৩৫) ও টাংগন ব্রীজ গ্রামের কাবলি দাসের পুত্র আন্তিনা দাস(৪৫)। আদালত মামলাটি আটোয়ারী থানায় এজাহার হিসেবে গন্য করার জন্য নির্দেশ দিলে আদালতের নির্দেশে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (ক)/৩০ ধারা মতে গত ১৪ ডিসেম্বর আটোয়ারী থানায় মামলাটি রেকর্ডভুক্ত হয়। মামলা নং ০২,তারিখ: ১৪/১২/২০১৭ইং। কিন্তু আসামীরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। পক্ষান্তরে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য একটি চক্র বাদীকে বিভিন্ন ভাবে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে বাদী অভিযোগ তুলেছে।