ডেস্ক রিপোর্ট: উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গত ৪ জানুয়ারি ছিল সংগঠনটির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শনিবার আনন্দ শোভযাত্রার আয়োজন করা হয়। তবে এতে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয় আনন্দ শোভাযাত্রা।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৪ জানুয়ারি হলেও যানজটে নগরবাসীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ছুটির দিনে শোভযাত্রা করার ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রলীগ।
শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার জন্য সকাল থেকে নেতাকর্মীরা হাতে পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে জড়ো হন। সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনেই ‘মাঝখান দিয়ে হাঁটা’ নিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন ঢাবির কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রলীগ এবং হাজী মুহাম্মদ মহসীন হল ছাত্রলীগের কর্মীরা। একপর্যায় হল ছাত্রলীগের নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শোভযাত্রা শুরু হলে দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগে শিশু পার্কের সামনে মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কলেজ দুটির ছাত্রলীগ নেতারা থামাতে গেলেও বারবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। এর ১০ মিনিট পর দু’পক্ষের নেতারা এক হয়ে সেলফি তুলে ঘটনা মিটমাট করেন।
এরপর ট্রাকে তৈরি মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। তাদের সামনেই সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এসময় দু’পক্ষের কর্মীরা একে অপরকে রাস্তার পাশে ভবন নির্মাণের জন্য রাখা ইট দিয়ে আঘাত করেন। এতে দক্ষিণ ছাত্রলীগের একজনের মাথা ফেটে যায়। ইট দিয়ে আঘাত করায় আহত হন আরও কয়েকজন।
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে নেতাকর্মীরা দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করে। একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি বায়েজীদ খান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এসময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে সংঘর্ষ থামানোর জন্য অস্থায়ী মঞ্চ থেকে নিচে নামতে দেখা যায়। দু’পক্ষের সংঘর্ষের কারণে দুপুর দেড়টার দিকে ২০ মিনিট শোভযাত্রার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আবার শুরু হয়।
এর কিছুক্ষণ পরই একই জায়গায় আবারও সংঘর্ষ জড়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি বায়েজিদ খান ছাত্রলীগ কর্মীদের সেখানে থেকে সরিয়ে দেন।
শোভাযাত্রা থেকে ফেরার সময় গুলিস্তানে সংঘর্ষে জড়ায় ঢাবির স্যার এএফ রহমান হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ। এসময় দুই হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা একে অপরকে মারধর করেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন মারামারি ঠেকাতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, মারামারিতে ওই হলের একজন হাতে আঘাত পেয়েছেন।
শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সুখবর নিয়ে এসেছি। আগামী মার্চে ছাত্রলীগের কাউন্সিল হোক নেত্রী চান। কাউন্সিলের জন্য তিনি ছাত্রলীগকে প্রস্তুত হতে বলেছেন।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম প্রমুখ।