
সারাদেশে ধর্ষণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বর্তমান সময়ে টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ পড়লেই দেখা যায় ধর্ষণের খবর। গত কয়েক মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব মেলানোও সম্ভব হবে না। কিন্তু কেন হচ্ছে এমন? কেন প্রতিবাদ করে ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে পারছি না আমরা? আমরা কি ধর্ষকদের কাছে জিম্মি? নাকি আমরা প্রতিবাদে অক্ষম? কেন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে কাঁপছে না এদেশ? বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে নারী নির্যাতন। পাশাপাশি ধর্ষিত হচ্ছে শিশুরাও। তাতেও ক্ষান্ত নয় ওইসব নরপশুর দল। ধর্ষণের সময় ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়ানোর হুমকিও দেওয়া হয় ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারকে। এমনকি চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়েও নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে।
চোখ বুলিয়ে দেখুন প্রতিদিনই ‘নারীর নিরাপত্তা চাই, নারীরা অনিরাপদ কেন? আর কত নারী ধর্ষিত হলে রাষ্ট্র জাগবে? ধর্ষকদের গ্রেফতার করো- এ ধরনের নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নেন সমাজের সচেতন মহলের নারী-পুরুষরা। তাদের সবার চোখে-মুখে জ্বলে প্রতিবাদের অগ্নিশিখা। সবারই দাবি, যে পাষ-রা ধর্ষণ, গণধর্ষণ করেছে, তাদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু এসব করে কী লাভ, প্রকৃতপক্ষে উপযুক্ত শাস্তি কি পাচ্ছে নরপশুরা?।
আর কত মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কথা শুনতে হবে আমাদের? আর কত মা-বোন আত্মহত্যা করলে জাগবে আমাদের বিবেক? আর কত মা-বোন ধর্ষিত হওয়ার পর ক্ষেপে উঠবে বাংলাদেশ? আজ আমাদের মা-বোনেরা কোথাও নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে, কর্মস্থলে, পাবলিক বাসে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি নিজ বাড়িতেও নয়। তাহলে ওরা নিরাপদ কোথায়?। আমাদের দেশে এমন হাজারো নারী আছেন, যারা সম্ভ্রম হারিয়েও সমাজে কলঙ্কিত হওয়ার ভয়ে নীরবে কাঁদছেন। অনেকে মনে করেন নারীদের ধর্ষণ হওয়ার পেছনে তাদের পোশাক দায়ী। হ্যাঁ, এই বিষয়টির সঙ্গে কিছুটা মত পোষণ করলেও পরিপূর্ণভাবে একমত পোষণ করতে পারছি না। কেননা যদি ধর্ষণের পেছনে নারীদের পোশাকই দায়ী হয়, তবে ৮ মাসের শিশুটিও কি অশ্লীল পোশাক পরে? সে কেন ধর্ষিত হবে?।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভারসাম্যহীনতা, আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে না হওয়া, অভিভাবকের অসচেতনতা, ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা, নৈতিক মূলাবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে নারী ও শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের পরিমাণ অনেক বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১০৫০ জন নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৩৭টিতে। এর মধ্যে শিশু ধর্ষণ ছিল প্রায় ৫০০টিরও বেশি। এদিকে চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু নারী ও শিশুই নয়, ধর্ষিত হয়েছে বৃদ্ধারাও। বাংলাদেশে এত অপমৃত্যুর কারণ কী? ধর্ষণ। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ধর্ষণের রাজ্যপুরিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
লেখক :- মেহেদী হাসান, ছাত্র ও সাংবাদিক।
সহকারী বার্তা সম্পাদক,
mdmeheditt14@gmail.com