নয়া আলো ডেস্কঃ- মায়াবী এ জগতের মায়া কাটিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক আলী আকবর রুপু। জনপ্রিয় ম্যাগজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে আর শোনা হবে না তার সুর করা দেশাত্ববোধক গান।
রুপু নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ এবং এর জনক হানিফ সংকেত। সম্পর্কে সংকেত-রুপু ঘনিষ্ঠ বন্ধুও বটে। বৃহস্পতিবার দুপুরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক আলী আকবর রুপু।
গুনি এই ব্যক্তিটির চলে যাওয়ায় আঘাত পেয়েছেন হানিফ সংকেত। বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছেন বন্ধুর চলে যাওয়ার খবরটা শিগগিরই পাবো, গেল কয়েকদিনে এমন ধারণা মনে জন্মেছে। তাছাড়া প্রতিনিয়তই যোগাযোগ চলছিল আমাদের। কাছ থেকে দেখছিলাম ওর চলে যাওয়ার প্রস্তুতি। তবে আজ (২২ ফেব্রুয়ারি) এভাবে এখনই খবরটা পাবো- সকালেও এমনটা ভেবে রাখিনি। আমার গাড়িটা (প্রাইভেট কার) বাইরে। খবর পেয়ে তাই সিএনজি নিয়েই ছুটছি বন্ধুর কাছে, ইউনাইটেড হাসপাতালে।
হানিফ সংকেত বলেন, আসলে আলী আকবর রুপুর কথা কী বলবো, বুঝতে পারছি না। সবাই বলবে, ওর এই চলে যাওয়া সংগীতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। কিন্তু আমি একটু স্বার্থপরের মতোই অন্য কথা বলতে চাই। আমার মনে হলো, ওর এই অকাল প্রস্থানে ‘ইত্যাদি’র অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। ‘ইত্যাদি’র দর্শক-শ্রোতাদের জন্য এটা বিরাট লস।
অনেকেই জানেন, এই শহরে আমার বন্ধুর সংখ্যা খুব কম। এর মধ্যে রুপু হলো অন্যতম। ওর বেলাতেও একই। আমিই ছিলাম তার কয়েকজন বেস্টফ্রেন্ডদের মধ্যে একজন। তিনি জানান, ২০১৫ সালে রুপুর হার্টে রিং পরানো হয়। ডায়াবেটিস ছিল। এরপর নানা জটিলতায় আবার কিডনি ফেল হলো। এরমধ্যে সম্প্রতি ব্রেনস্ট্রোক করলো। ওর বৌ ফোন করলো, গেলাম ইবনে-সিনায়। ইউনাইটেডে শিফট করতে বললো, করলাম। হার্ট দুর্বল, নিউমোনিয়া হয়ে গেল। ডায়ালাইসিসও করাতে পারছিলাম না। ইকোনমিক অবস্থাও ভালো ছিলো না। এরপর অবস্থার অবনতিই হতে থাকলো।
শেষ কয়টা দিনেও আমি ওর খুব কাছাকাছি ছিলাম, এটাই সান্ত্বনা।
অসম্ভব ভালো মনের একটা মানুষ। কোনও ঝামেলায় জড়াতে দেখিনি তাকে। আমরা যখন গানের সুর করতে বসতাম- আহারে…। ওসব স্মৃতি আজ আর মনে করতে চাইছি না। আমার জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ্য করে ইত্যাদির জনক বলেন, সংগীতাঙ্গনের জন্যে তো বটেই। প্রায় ৩০ বছর ধরে আমরা দুই বন্ধু গান বেঁধেছি। ইত্যাদি’তে সবচেয়ে বেশি দেশাত্মবোধক ও উৎসবের গান প্রচার হয়েছে। যার প্রায় সবক’টিই রুপুর সুর করা। সে হিসেবে দেশের সবচেয়ে বেশি দেশাত্মবোধক ও উৎসবের গানের সুরকার হলো আমার বন্ধু রুপু। এটাই এখন আমাদের বড় গলায় বলবার বিষয়।
রুপু, ভালো থেকো। এপারে এখনও আমি দাঁড়িয়ে আছি, দুশ্চিন্তা করো না।