বুধবার দুপুরে স্কুলে যাওয়ার পর ছাত্রীরা এ সব ঘটনা একে একে প্রকাশ করে। ছাত্রীরা ওই ক্যাম্পে নারী পুলিশ রাখার দাবি জানিয়েছেন।
বাইনতলা খারাবাদ কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা প্রায়ই স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানি করে আসছে। এ কারণে পুরুষের পরিবর্তে নারী পুলিশ সদস্য নিয়োগ দিতে হবে। তবে এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পটি রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন স্কুলের শিক্ষকরা। ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
খারাবাদ বাইনতলা স্কুলের ঠিক পেছনে থাকা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে রয়েছে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প। ক্যাম্প থেকে স্কুলে আসতে অনেকটা পথ ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা পেছনে থাকা টয়লেটের ট্যাঙ্কির পাশ দিয়ে স্কুলের পুকুরে যাওয়া আসার জন্য পথ তৈরি করেছেন। ক্যাম্পের জানালা দিয়ে স্কুলের ক্লাস রুম লক্ষ্য করা যায়। ওই স্থানেই রয়েছে টিউবওয়েল।
ঘটনার শিকার ছাত্রী কেয়া বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই সে পুলিশ কর্তৃক নানান কথা শুনে আসছে। ছোট হওয়ার কারণে সে সব কথার মানে বুঝতে পারেনি। ফলে তা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ১০ম শ্রেণিতে এসে পুলিশের কথার মানে বুঝতে পারেন। ২ মাস আগে বাড়িতে বাবা ও ভাইকে বিষয়টি জানানো হয়। স্কুল থেকে কোচিংয়ে যাওয়া আসার পথেই ক্যাম্প পড়ে।
ছাত্রী ফারহানা জানায়, ৮ম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় পুলিশ তাকে খারাপ কথা বলে। পথ দিয়ে যাওয়ার সময় শিষ দেয়। পানির জন্য কলে গেলে তাদেরকে পানি না দিয়ে কিভাবে পানি খাব তা জানতে চায়।
মৌমিতা জানান, পুকুরে গোসল করার সময় পুলিশ সদস্যরা গোসল করতে বলে। পুকুরকে সুইমিং পুল উল্লেখ করে বলে এখানে এক সাথে গোসল করলে অনেক মজা পাওয়া যাবে। তারা পুকুর থেকে গোসল শেষে খালি গায়েই স্কুলের পেছন থেকে চলে যায়। গোসল করার জন্য ক্যাম্প থেকে খালি গায়ে ও স্বল্প পোশাকে আসা যাওয়া করে।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, ২ বছর আগে একবার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে স্কুলের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কথা জানা যায়। সে সময় অভিযোগ নিয়ে আলোচনার পর ওই পুলিশকে বদলি করা হয়। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
অধ্যক্ষ আবুল কাশেম বলেন, আগে লিখিত বা মৌখিক কোন প্রকার অভিযোগই পাওয়া যায়নি। ফলে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
খারাবাদ বাইনতলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর কলেজ শাখার ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ হাসিব গোলদার বলেন, আগেও কয়েকবার এ ক্যাম্পের পুলিশরা মেয়েদেরকে ইভটিজিং করেছিল। আমরা কমিটির লোকজনরা ক্যাম্পের আইসি-কে বলে মিটমাট করে দিয়েছি। এ প্রতিষ্ঠানের একেবারে পাশে পুলিশ ক্যাম্প। আর ক্যাম্পে আসে অল্প বয়সী ছেলেরা। এরা পোশাকের মূল্য বোঝেনা। দামী দামী মোটরসাইকেল চালায় আর যেখানে সেখানে সিগারেট টানে। এরা কাউকে পরোয়া করে না।
স্কুলের অদূরে থাকা শুভেচ্ছা কিন্ডারগার্টেন কোচিং পরিচালক আলী আহমেদ বলেন, পুলিশ কর্তৃক ছাত্রীরা প্রতিনিয়তই ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। পুলিশ হওয়ায় ভয়ে কেউ কোন অভিযোগ করত না। বিষয়টি বিভিন্ন সময় বটিয়ঘাটার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়। কিন্তু ক্যাম্প ইনচার্জ সে সব আমলে নিত না। অভিযোগ দেওয়ার কারণে এলাকার মানুষকে নানাভাবে অহেতুক হয়রানি করত। মঙ্গলবারের ঘটনার সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা এগিয়ে গেলে তাকে গুলি করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সদস্যরা মেয়েদের কাছে মোবাইল নম্বর চাইত।
ক্যাম্পে থাকা এএসআই খোরশেদ আলী জানান, ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ লাইন থেকে আর্মড এসআই নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে নতুনভাবে ১২ জন ও থানা তার নেতৃত্ব আরও ২ জন ক্যাম্পে দায়িত্ব নিয়েছেন।