কাজী ইফতেখারুল আলম – বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট আর মোবাইল এসএমএস জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় হারিয়ে গেছে টিন ইজার যুবক/যুবতির প্রিয় ঈদকার্ড। বন্ধু-বান্ধব আর আত্নীয় স্বজনদের শুভেচ্ছা জানানোর রীতিও দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তরুন-তরুনীরা। এক সময় ছিল যখন রমজান এলেই ঈদের জামা কাপড়ের পাশাপাশি জমে উঠতো ঈদ কার্ডের বাজার। বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা সুসম্পর্ক আছে এমন মানুষদের কাছে ঈদ কার্ড পাঠিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানাত সবাই। কয়েক বছর আগেও গ্রামে গন্জ্ঞের বিভিন্ন কার্ডের দোকানে ঈদের আগে তরুন-তরুনীদের ভীড় দেখা যেত। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে অস্থায়ী ঈদ কার্ডের দোকন বসত। নানান ডিজাইন, প্রচ্ছদ আর মনকাড়া রঙের ঈদ কার্ড শোভা পেত কার্ডের দোকানগুলোতে । রমজানের মধ্যভাগ থেকে শুরু হতো ঈদ কার্ড বেচাকেনার ধুম ।
এমন এক সময় ছিল শুধু ঈদ কার্ড বিক্রি করে অনেক বেকার যুবক তাদের ঈদের খরচ চালাতো। সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাচ্ছে ঈদ কার্ড প্রথা। এখন আর কোথাও ঈদ কার্ড বিক্রি করতে দেখা যায় না।
আগের মত সেই ঈদের দিন গুলো নেই। আগের রাতে সেকি উত্তেজনা!! কত ভাবনা মনে উদয়! কত উচ্ছ্বাস! নতুন জামা, জুতা পড়ে বিছানার উপর নাচানাচি করা। বিছানা থেকে নামতে না চাওয়া যদি জুতায় মাটি লেগে নষ্ট হয়ে যায়??
ঈদের দিন সবার সাথে বেলুন নিয়ে খেলা করা। সমবয়সী যার জামা যত বেশী দামী সে তার টা নিয়ে গর্ব করা। ঈদের দিন কোন পড়াশোনা নেই সেটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ ছিলো।
রাতে বিটিভির অনুষ্ঠান দেখার জন্য উন্মাদ হয়ে থাকা। সমবয়সীদের মাঝে কে কত বেশী সালামি আদায় করতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামা।
ঈদের সময় মেহমান আসার অপেক্ষায় থাকা কারণ মেহমানরা তো খালি হাতে আসতেন না। সারাদিন ডানপিটে স্বভাবের হয়ে কাটিয়ে দেয়া।
ছোটবেলায় আপু,আন্টিদের দের দেখতাম মেহেদী পাতা গাছ থেকে তুলে তারপর বেটে অনেক কস্ট করে নিপুণ ভাবে হাতে লাগাতেন। রঙ্গ গাড় করার জন্য অনেক সময় দেখতাম খাবার চুন মেহেদীর সাথে মিশিয়ে হাতে দিতেন। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিলো এই মেহেদীর রঙ এত সহজে বসতনা। সেজন্য হাতে রেখেই সবাই ঘুমিয়ে পড়তো আর সকালে উঠে অনেকেই দেখতো আনমনে মেহেদী গালে মুখে লেপ্টে যেত। আর সেকি চিল্লানী আর আমরা হেসে গড়াগড়ি খেতাম। আর এখন সেইদিন নাই এখনতো বাজারে মেহেদী কিনতে পাওয়া যায় সেটা নাকি ৫মিনিটেই রঙ বসে।
সেইসব দিনগুলোতে ফিরে যেতে অনেক ইচ্ছে করে। আসলে সময় এমন একটি জিনিস যা মানুষকে অহরহ পাল্টে দেয়। এখনকার জীবন টা এক ঘেয়ো হয়ে গেছে। ঈদ এখন ফেসবুক আর মেসেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। অনেক কিছুতেই আগের সেই আগ্রহ কাজ করেনা।
তবুও আমার সকল বন্ধুকে জানাই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক!!
লেখক:
কাজী ইফতেখারুল আলম
ক্রীড়া,সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক
দাগনভূঁঞা প্রেসক্লাব,ফেনী।
সহ-সম্পাদক
নয়া-আলো ডটকম।