পারভেজ,কলাপাড়া,(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ঃ
পটুয়াখালী কলাপাড়া কালের বিবর্তে কমে গেছে মহিশ পালন। আগের মত এখন আর চোখে পড়েনা মহিশের পাল। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, বাথান জমি কমে যাওয়া, সবুজ ঘাসের অভাব এবং চোর সিন্ডিগেটের কারনে এ উপকুলীয় উপজেলা থেকে বিলুপ্তির পথে মহিশ পালন। কলাপাড়া উপজেলা প্রানি সম্পদ অফিস থেকে জানা যায়, বর্তমানে এই উপজেলায় মাত্র ১৯৫০০ মহিষ রয়েছে। আর বাংলা পিডিয়ার তথ্য মতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (১৯৯৮)-এর হিসাব অনুযায়ী এদেশে বর্তমানে প্রায় ৪,৪৭,০০০ মহিষ রয়েছে। প্রতিটি মহিষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৩০ কেজি সবুজ ঘাসের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে মহিষ পালনের বড় অন্তরায় সুবজ ঘাষের অভাব।এক সময় এ উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় মহিশ পালনের প্রাচুর্যতা ছিল। প্রায় প্রত্যেকটি কৃষক পরিবারই মহিশ পালন করত। বিলে দেখা যেত মহিশের পাল। এক একটি পালে প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাটটিমহিশ দেখা যেত। আর এ মহিশ বিচরনের জন্য থাকত আলাদা রাখাল। রাখালরা মহিশের পাল ছেড়ে সুমধুর গান ধরত। কিন্তু এখন আর গ্রামাঞ্চলে চোখে পড়েনা মহিশের বিচরন। অনেক কৃষকই মহিশ দিয়ে হাল চাষ করতো। কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ হাল চাষই হয় আধুনিক যন্ত্র দিয়ে। এছাড়া একসময় অনেক কৃষকই মহিশের দুধ বিক্রি করে সংসারের ভরপোষন করত। তবে এখন মহিশের সংখ্যা খুবই কম থাকায় হাট-বাজারে মহিশের দুধ নেই বললেই চলে।মহিশের মাংস আমিশের চাহিদা পূরন করে। আগে বিভিন্ন শহরে মাইকিং করে ঢোল বাজিয়ে মহিশের মাংস বিক্রি হত। কিন্তুবর্তমানে এসব চিত্র এখন আর চোখে পড়েনা। মহিশের জন্য চাই সবুজ ঘাষ। কিন্তু এ অঞ্চলে ফসলি জমি কমে যাওয়ায় সবুজ ঘাষের পরিমান অনেক কম। চরাঞ্চলে চোর সিন্ডিগেট সক্রিয় থাকার কারনে অনেকেই ছেড়ে দিয়েছে মহিশ পালন। তাছাড়াএ অঞ্চল থেকে মহিশের চরন ভ‚মি কমে যাওয়ায় বিলুপ্তির পথে প্রায় মহিশ পালন। তবে যদি মহিশ পালনে এ অঞ্চলের কৃষকদের সরকারি প্রনোদনা দিয়ে আগ্রহী করা যায় তাহলে তারা আর্থিকভাবে লাভবানহয়ে আমাদের আমিষের চাহিদা মেটাতে সম্ভব হবে বলে মনে করেছেন সচেতন মানুষেরা। চম্পাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কবির মুন্সী জানান, বর্তমানেআমার হালে ৪৫টি মহিষ রয়েছে। গত মাসে ০৯টি মহিষ চুরি হয়েছিল। অনেক কষ্টে ঢাকা কেরানীগঞ্জ থেকে মহিষ উদ্ধার করি। এবং চোর সনাক্ত করে মামলা করি। বর্তমানে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল মেজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সত্তরোর্ধ্ব কৃষক আবুল হাসেম জানান, এক সময় আমার প্রায় ৭০ থেক ৮০ টি মহিশ ছিল। এ অঞ্চলে অনেকেই মহিষ পালন করত। কিন্তু মহিষের ভূমি চরন কমে যাওয়ায় এখন আর কেউ মহিষ পালন করেনা। চর গঙ্গামতির কৃষক আবদুল বারি জানান, মহিষ পালন লাভজনক। বর্তমানে কোন খোলা জায়গা নেই। মহিষ পালনের জন্য ব্যাপক খোলা জায়গা প্রয়োজন। এ জন্য মহিশ পালনসম্ভব না। কলাপাড়া উপজেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান,বাথান জমি কমে যাওয়ায় ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে মহিশ পালন। এছাড়া নিম্ন ভূমি, চরাঞ্চল এবং কাঁচা ঘাসের অভাবে মহিষ পালনে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক।