বলা হয় একজন মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। বড় হওয়ার ইচ্ছে, আবেগ, অনুপ্রেরণা সেই সংগে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ধারাবাহিকতা, একজন রিক্ত হস্ত মানুষকেও পৌঁছে দিতে পারে সফলতার চূড়ান্ত সীমানায়।
যার কথা বলতে কলম এগিয়ে যাচ্ছে, তিনি গোমতী নদীর তীর ঘেঁষে বেড়ে ওঠা একজন সাধারণ যুবক। তার নাম নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি একধারে একজন সম্পাদক, একজন ব্যাবসায়ী, সেই সংগে কয়েকশ তরুণ উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা।
ছোটবেলায় মাধ্যমিকের কোনো এক ক্লাসে ছাত্র-শিক্ষক কথামালার আড্ডায় মঞ্চে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, বড় হয়ে কি হতে চাও? নাসির উদ্দিন বলেছিলেন ‘আমি শক্তিমান হতে চাই’। কথাটি শুনে পুরো ক্লাস ‘হো হো’ করে হেসে উঠলো। শিশুমন তখনও জানতো কেবল শক্তিমান হলেই টিভির পর্দায় দেখানো কাহিনীর মতো বাস্তবেও মানুষের জন্য ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠা যায়।
কুমিল্লা জেলার মোচাগড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে চলে আসেন রাজধানীতে। শুরু করেন জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপের সূচনা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এগিয়ে নিতে পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা, তারপর স্নাতক সম্পন্ন করার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন তথ্য ও প্রযুক্তির সম্ভাবনাময় দুয়ারে।
শুরুতে ছোট দাগের ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে শুরু করা ক্যারিয়ার, ‘বার্তা বাজার ‘ট্রাভেল হলিডে বিডি’ এ কাজ করেন তিনি। বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরুর দিকে, যখন তথ্য ও প্রযুক্তি অবাধ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় একজন সহযোগী ফ্রিল্যান্সারের সহায়তায় যাত্রা শুরু করে দেশের সর্ব প্রথম নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন পোর্টাল ‘বার্তা বাজার’। যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো মানবিক দৃষ্টিতে একটি গণমাধ্যমকে নিপীড়িত জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়া।
তথ্য ও প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের যুগে, সাইবার সিকিউরিটির জ্ঞান এবং আইসিটি ডেভলপমেন্ট প্রকল্পে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। দেশ ও দেশের বাইরের একাধিক প্রতিষ্ঠানকে অনলাইন সেবা প্রদান করতে তিনি গঠন করেন একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। যা আইসিটি বাজার নামে পরিচিত। দেশের আইসিটি ডেভলেপমেন্টকে কেন্দ্র করে আইসিটি বাজারের অর্জিত সুনাম, বৈদেশিক রেমিট্যান্স আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে আগত নতুনদের জন্য উদাহরণ তৈরি করেছে নিঃসন্দেহে।
এছাড়া তিনি স্থাপন করেন, একটি চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয় ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ‘লেদার প্রো’। যা একাধারে ভূমিকা রাখছে ই-কমার্স এবং এফ-কমার্সে জড়িত সকল চামড়াজাত দ্রব্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাদার ভেন্ডর হিসেবে। দেশের প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠান যারা ই-কমার্সের মাধ্যমে চামড়াজাতদ্রব্য ও তার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বাজার তৈরি করেছেন এবং স্বল্প মূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের হাতের মুঠোয় তাদের সকলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে একাধারে ত্রিমাতৃক ভূমিকায় নিজেকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানকে অবতীর্ণ করেছেন।
পর্যটন শিল্পকে আরও বৃহৎ পরিসরে এবং সহজ পরিসেবায়, প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘ট্রিপ ৭১’ নামক একটি ট্রাভেল বেইজ ওটিট প্লাটফর্ম। যার মাধ্যমে খুব স্বল্প আয়ের একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা এজেন্সির দারস্থ না হয়ে, সাধারণ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজের স্মার্ট ফোনকে কেন্দ্র করে নিজেই হয়ে উঠতে পারেন নিজের ট্রাভেল প্ল্যানার।
নাছিরের মতো কিছু উদ্দ্যোক্তার জন্য এ দেশকে সম্ভাবনার দেশ বলা হয়। এমন মানুষের অনুপ্রেরণায় উজ্জিবিত হয়ে নিয়োজিত হতে ইচ্ছে হয় দেশের সেবায়, মানুষের সেবায়। এই মানুষগুলোর মতো দেশজুড়ে আরও অনেক মানুষ গড়ে উঠুক। তাদের হাত ধরে তাদের পদচারণায় এমন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যে বাংলাদেশ হবে মাথা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।