
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:- একের পর এক ইউপি চেয়ারম্যান খুন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নড়াইলের ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে অজানা আতংক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা। সচেতন মহলকে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। অল্প সময়ের মধ্যে দু’জন ইউপি চেয়ারম্যান খুন হলেন। এ দুটি হত্যাকান্ডের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। যে দু’জন চেয়ারম্যান হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, তারা দুজনই আ’লীগ নেতা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তারা দু’জনই বিএনপি হতে আ’লীগে আসা। দু’জনই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার। এমনকি প্রশিক্ষিত ভাড়াটে খুনি দ্বারা এ খুন দু’টি ঘটেছে বলে একাধিক মহলের অভিমত। এতে করে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ দু’জন চেয়ারম্যান বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। মাত্র কয়েক বছর আগে তারা আ’লীগে যোগ দেন। অল্প সময়ের মধ্যে আ’লীগের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেন। তাদের কারণে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। দলীয় প্রতিপক্ষদের সাথে দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনের আগে এ দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়। আ’লীগ দলীয় মনোননয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর প্রার্থীতা ঘোষনা দিলে এলাকার দলীয় ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়। অবশ্য এসব নেতাদের সমর্থন করা নিয়ে স্ব স্ব এলাকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই আশংকা করেছিলেন নির্বাচনের আগেই কোন অঘটন ঘটতে পারে। এ দ’ুটি ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। বাইরে থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে নির্বাচনী প্রচারনা চালানোরও অভিযোগ রয়েছে। যাই হোক নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোন সহিংসতার খবর শোনা যায়নি। তবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও প্রতিপক্ষদের সাথে দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ চলে আসছে। বিভিন্ন সময় মহড়া ও পাল্টা মহড়া দেয়ার কথাও শোনা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ও ছোটখাটো হামলা মামলার এবং ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। এভাবেই চলে আসছিলো এ দুটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা। এরই মধ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ। তিনি লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিক গ্রুপের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান পলাশের দ্বন্দ¦ চলে আসছিল। গত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ দলীয় প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও সতন্ত্র প্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ মাসুমের সাথে তার চরম মনোদ্বন্দ্ব হয়। এক সময় এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। নির্বাচনের আগে ও পরে একাধিকবার ওই সব গ্রুপের সাথে তার কর্মী সমর্থকরা একাধিকবার মুখোমুখি হন। এরই মধ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লতিফুর রহমান পলাশ (৪৮) খুন হন। তাকে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রকাশ্যে দিনের বেলা গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বত্তরা। হত্যাকারীরা ঠান্ডা মাথায় এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মোটর সাইকেল যোগে বীরদর্পে এলাকা ত্যাগ করেন। এ হত্যাকন্ডের ঘটনায় নিহতের বড়ভাই জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুর রহমান হিলু লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামিরা হলেন জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান মনি, আ’লীগ নেতা শেখ মাসুদজ্জামান মাসুদ, দিঘলিয়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহম্মেদ মাসুম, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি স ম ওহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামানের ভাই শরীফ বাকি বিল্লাহ, সোহেল খান, শেখ বনিরুল ইসলাম বনি, শেখ কটো, হেদায়েত আলী হোসেনসহ ১৫জন। পুলিশ ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার আবাসিক একটি হোটেল থেকে এ মামলার প্রধান আসামি শরীফ মনিরুজ্জামান মনিকে গ্রেফতার করে। তার ভাই শরীফ বাকিবিল্লাহ আগেই পুলিশের হাতে আটক হন। এরা দু’ভাই এখন পুলিশের খাচায় বন্দি। অন্য আসামীরা রয়েছেন পলাতক। এ হত্যাকান্ডের ঘটনা, মামলা ও আসামীদের নিয়ে চলছে নানামুখি সমালোচনা। অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, নিহত ইউপি চেয়ারম্যান পলাশ এর বিরূদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। তার বিরূদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর অনেক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার নামে হত্যা মামলা সহ একাধিক মামলা রয়েছে। অপরদিকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ’র চেয়ারম্যান নাহিদ হোসেন মোল্যাকে (৪৮) গত ২৫ আগস্ট গুলিনড়াইলে একের পর এক ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা ঘটনায় চেয়ারম্যানদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে করে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা। নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় খুব ভোরে নাহিদ মোল্যা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত হামিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাহিদের স্ত্রী পলি বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোহম্মদকে প্রধান আসামী করা হয়। নাহিদ মোল্যার মৃত্যুতে চেয়ারম্যানের পদটি শুণ্য হয়। উপ-নির্বাচনে নিহত নাহিদ মোল্যার স্ত্রী পলি বেগম নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন। তার বিপক্ষে একমাত্র প্রতিব্দন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন স্বামী হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ। আত্মগোপনে থেকে নৌকা মার্কার বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে গিয়ে অন্তরালেই রয়ে গেছেন গোলাম মোহাম্মদ। এ হত্যা মামলাটিও চলমান। নড়াইল শহর সহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এ’দুটি হত্যাকান্ড ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত। এ দুটি ঘটনার পর থেকে জেলার অন্যান্য চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে যারা চেয়ারম্যান হতে চান তাদের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে। সহসা কোন চেয়ারম্যান একাকি বা সাধারণ ভাবে চলাচল করতে চাচ্ছেন না। মনের মধ্যে ভয় ও আতংক নিয়ে জীবন যাপন করছেন। এসব পরিবারেও শান্তি নেই। পরিবারে সদস্য ও স্বজনরা উৎকন্ঠা উদ্বেগের মধ্যে আছেন।