বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপাড়ার বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষুক মং শু হুকে (৭৫) গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার রাত ৩টার দিকে উপজেলার বাইশারি এলাকার বৌদ্ধ মন্দিরে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত বৌদ্ধ ভিক্ষুক ওই গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে ছোট একটি বিহারে একাই থাকতেন।
জানা গেছে, দুই বছর আগে ওই গ্রামে বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভিক্ষু মং শু হু সেখানে ধ্যানমগ্ন থাকতেন।
উত্তর চাঁদপাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) অঞোথোয়াই চাঁদ বলেন, ‘সকালে ওই বিহারে ভিক্ষুর খাবার দিতে গেলে তার লাশ পাওয়া যায়। লাশের গলা প্রায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে বিষয়টি সবাইকে জানালে তারা পুলিশে খবর দেয়।’
ভিক্ষু হওয়ার পর মং শু হুর নাম পরিবর্তন করে উ গাইন্দ্যা রাখা হয় বলে জানান তিনি।
বাইশারি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে তাকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ ধারণা করছে। কে বা কারা কেন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করেছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
নাইক্ষংছড়ি থানার উপ-পরিদর্শক কাজী আহসান বলেন, শনিবার সকালে ওই ভিক্ষুর পুত্রবধূ তার জন্য খাবার নিয়ে গিয়ে দেখতে পান বিহারের ভিতরে তার মৃতদেহ পড়ে আছে।
তার ঘাড়ে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের দাগ রয়েছে।
তাকে গত রাত আটটা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে যেকোনো সময়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা, বলেন আহসান।
উপর চাঁদপাড়া মূলত পাহাড়ি সংখ্যালঘু চাক সম্প্রদায়ের আবাস।
এখানে তিন থেকে সাড়ে তিনশ চাক সম্প্রদায়ের বাসিন্দা রয়েছে। এরা সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আর কোনো ধর্ম কিংবা সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে বসবাস করে না।
গ্রামটি এতই দুর্গম যে নাইক্ষংছড়ি থেকে মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোন যানবাহন সেখানে খুব একটা পৌঁছাতে পারে না।
যে বিহারের ভেতরে ভিক্ষুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেখানে উপর চাঁদপাড়া গ্রাম থেকে একমাত্র পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। কাঠের এই বিহারটি বছর দুয়েক আগেই নির্মাণ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে তার সাথে কারো ব্যক্তিগত রেষারেষি ছিল না যার কারণে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি সন্দেহভাজন ইসলামি জঙ্গিদের হাতে একের পর এক নাস্তিক ব্লগার, ইসলামের সমালোচনাকারী ব্যক্তিবর্গ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের খুনের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল।
এর আগে এ ধরনের একাধিক খুনের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আল-কায়েদার বাংলাদেশ শাখা এবং ইসলামিক স্টেট।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিবৃতি নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও মঞ্চনাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে।
এর দুদিন আগে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে তার শালবাগানের বাসার কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর এক দিন আগে ২২ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পরমানন্দ রায় নামের এক সাধু ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
এর কয়েকদিন পর গত ৬ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রেজাউল করিমের মতো একই কায়দায় কুপিয়ে ‘সুফি’ শহিদুল্লাহকে হত্যা করা হয়।