পারভেজ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :- দু’ হাত নেই, তবুও পা দিয়ে লিখে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী বেল্লাল।শারীরিক প্রতিবন্ধী বেল্লাল কলাপাড়া উপজেলার উমেদপুর দাখিল মাদ্রসার মানবিক বিভাগের মেধাবী ছাত্র।দরিদ্র দিন মজুর পরিবারের এই মেধাবী শারীরিক প্রতিবন্ধীর সংগ্রাম থেমে যাবার উপক্রম হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারী-বেসরকারী নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সব থেকে বঞ্চিত এই শিক্ষার্থী। বর্তমানে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তার দরকার উন্নত চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা।জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার নীলগজ্ঞ ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামের দিনমজুর মো.খলিল আকনের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মো.বেল্লাল হোসেন। জন্মগতভাবেই তারদু’টি হাত নেই। পা দু’টোও স্বাভাবিকনয়। এমনকি বেল্লালের জন্মের পর নানান রকমের কুসংস্কার ছড়াতে থাকে গ্রামের লোকজন। এসবের কারনে বাবা মা প্রথমদিকে বেল্লালকে ঘরের মধ্যেলুকিয়ে রাখতো। গ্রামের লোকজনদের তাচ্ছিল্যের কারনে মা হোসনে আরা বেগম ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার শপথ নেন। এর পর ঘরে বসে বেল্লালকে পড়াতে শুরু করেন, আর পায়ের আঙ্গুলেরমধ্যে চক দিয়ে সিলেটে লেখানোর অভ্যাস করান। এভাবেই বেল্লাল আয়ত্বকরে ফেলে পা দিয়ে লেখার।সে এখন পা দিয়ে সুন্দর করে লিখতে পারে। এর পর ভর্তি করা হয় এক কিলোমিটার দূরের উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুরু হয় বেল্লালের শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জীবন সংগ্রাম। শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়েও সে মায়ের সহায়তায় প্রতিদিন এক কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয় নিয়মিত উপস্থিত হয়। পা দিয়ে লিখে বেল্লাল ৫ম শ্রেণিতে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছে।বেল্লাল পা দিয়ে লিখে ও প্রথম শ্রেণি থেকে সে এখন দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে। বেল্লাল জানায়, প্রথমে সে পড়তে পারলেও লিখতে পারত না। বর্তমানে তার লিখতে পড়তে কোনো সমস্যা নেই। তার ইচ্ছা, উচ্চ শিক্ষাশেষে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া।বেল্লালের মা হোসনে আরা বলেন, ‘ও জন্ম থেকে লুলা (প্রতিবন্ধী) হওয়ায়গ্রামের মানুষেরা অনেক কতা কইত। তাই পোলাডারে লেহা পড়া শিখাইয়া মানুষ করার চিন্তা করলাম। অরে পাও দিয়া লেহা শিখাইছি। নিত্য ওরে স্কুলে লইয়া যায়। কিন্তু ওর বাপে টাহার লইগ্যা এহন ওরে লেহা পড়া করাইতে চায়না।’মো.খলিলুর রহমান আকন বলেন, ‘আমার দুই মাইয়া আর দুই পোলা। এ্যার মধ্যে মাইয়া দুইডা বিয়া দিয়া দিছি, আর বড় পোলাডা এ্যাহন বরিশাল বিএম কলেজে লেখাপড়া করে। আমার সংসারের অভাব অনটনের মধ্যে বেল্লালের জন্ম।ভালোভাবে চিকিৎসা করাইতে পারিনায়। আমার আর্থিক অবস্থা ভালো না।উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো.হাবিবুর রহমান (বেলালী) বলেন, শিক্ষকরা বেল্লালের শিখনে সাধ্যমত চেষ্টা করেছে। সে অত্যন্ত মেধাবী। রোদ, ঝড় বৃষ্টি যাই থাকুক না কেন, সেনিয়মিত মাদ্রাসা এসেছে।’