সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:- সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রচান্ড শীতের তীব্রতার সাথে সাথে খেঁজুর গাছের গাছিদের গুড় ও পাটালি তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো।
এ মৌসুমে খেঁজুর রস থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন গ্রামীণ জনপদের চিরচেনা এ মানুষগুলো।
গ্রামাঞ্চলে গাছিরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য বাজারে তোলে রস থেকে তৈরি খেঁজুরের গুড় ও গুড় থেকে তৈরিকৃত সুস্বাদু পাটালি।
আর সেই খেঁজুরের গুড় বা পাটালি বেচাকেনার অন্যতম হাট তৈরি হয়েছে কলারোয়ার পৌর বাজারে। শুধু তাই নয় এই হাট থেকে স্থানীয়রা চাহিদা মিটিয়ে খেঁজুর গুড় বা পাটালি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভাগীয় শহরে।
পৌর বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে খেজুর গুড়ের হাট প্রতিদিন বসে। তাছাড়া রাস্তার ধারে এ হাট সত্যি চোখে পড়ার মতো। শীত মৌসুমের অন্যতম প্রধান এ খেঁজুর গুড়ের হাট বেশ জমজমাট হয়ে থাকে বাজারে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কলারোয়ার খেঁজুর গুড়ের রয়েছে আলাদা নাম জস। বাজারে খেঁজুর গুড় ও পাটালির উঠলে গুড় ও পাটালি বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার ও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ৫০/ ৬০ গ্রামের খেঁজুর গাছের গাছিরা।
গুড় বিক্রি করতে আসা চন্দনপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন নামের খেঁজুর গাছি বলেন- এখনতো আগের মতো গাছ নেই। বিলুপ্তির পথে খেঁজুর গাছ। তাই রস এখন কম সংগ্রহ করা হয় যেটুকু সংগ্রহ করতে পারছি তাতে খরচটা কোন রকম উঠবে।
তারপর বর্তমান বাজারে একভাড় গুড়ের দামও কম পাওয়া যায়। যেটা কষ্ট এবং জ্বালানী খরচ হিসেবে তুলনামূলক ভাবে কম।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গুড় বিক্রির চেয়ে রস বিক্রি বেশি লাভজনক এবং সেটির চাহিদাও বেশি। পৌর সদরের খেঁজুর গাছি শহিদুল ইসলাম বলেন , একভাড় রসের দাম ১শ টাকা। যা গত বছর ছিলো ৭০ টাকা।
তবে হাটের ব্যাপারিরা গুড়ের দাম কম বলে। যে দাম বলে সে দামে বিক্রয় করলে লাভ তো দূরে থাক কষ্টের মুল্যও হবে না বলে কয়েকজন খেঁজুর গাছিরা বলেন।
এ দিকে ব্যাপারিরা এ কথা মানতে নারাজ। এমন মন্তব্য সঠিক না দাবি করেন স্থানীয় ও অন্যস্থান থেকে আসা ব্যাপারিরা।
তারা বলছেন- গত বারের চেয়ে এ বছর গুড়ের দাম অনেক বেশি।
গুড়ের ব্যাপারিরা বলেন- এ বছর গুড়ের দাম বেশি। গত বছর যে গুড়ের ভাড় ছিলো ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা এ বছর সেই গুড়ের ভাড় সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ এমনকি ৬শ’ টাকা করে ক্রয় করতে হচ্ছে।
এ গুড়ের হাট থেকে ব্যাপারিরা ভাড় ভর্তি গুড় ক্রেতারা ক্রয় করে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে চলে যান এবং প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করে বা বিভিন্ন উপায়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরবরাহ করে থাকেন।
বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলাগুলোর পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী ও অন্যান্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে স্থানীয় একাধিক গুড় ব্যবসায়ীরা জানান।
শুধু ব্যাপারিরা নয় বরিশাল জেলা থেকে আগত ২/৩ জন কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা একদল গুড়ের ব্যাপারি প্রতিনিয়ত পৌর বাজারের গুড়ের হাট থেকে পাইকারী দামে গুড় ও পাটালি কিনে অন্যত্র বিক্রিয় করে থাকেন।
এ দিকে পৌর বাজারের খেঁজুর গুড়ের হাট থেকে গুড় কিনে ড্রাম ভর্তি করে গোডাউনে স্টক করে রাখেন অনেক ব্যবসায়ীরা।
পরে শীত মৌসুম চলে গেলে সেই গুড় ও পাটালি চড়া দামে বিক্রয় করেন তারা।
তবে এ পেশার সাথে জড়িতদের আশংকা যেভাবে গ্রামাঞ্চলের খেঁজুর গাছ নিধন শুরু হয়েছে সেটা বন্ধ না হলে ঐতিহ্যবাহী সু-স্বাদু খেজুর গুড় ও রসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও মানুষরা। শুধু গল্পে হবে তাদের শোনা বাস্তবে চোঁখে মেলা কষ্টকর হয়ে উঠবে।