কসবা প্রতিনিধি-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বসুন্ধরা হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ খবর পেয়ে গতকাল শনিবার সকালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সাংবাদিককে পিটিয়ে, কুপিয়ে আহত করে এবং ভিডিও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তিন সাংবাদিককে আটক করে রাখে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় সাংবাদিকরা। আহত সাংবাদিকরা হলেন; বিজয় টেলিভিশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন ওরফে উজ্জল (৩৫), আমার দেশ পত্রিকার কসবা উপজেলা প্রতিনিধি মো. অলিউল্লাহ সরকার অতুল (৩০), কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত ডাক প্রতিদিন পত্রিকার কসবা উপজেলা প্রতিনিধি মো. রুবেল আহাম্মদ (৩৫)। আহতদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে; কসবা উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের কালতা দিঘীরপাড় গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী নিলুফা আক্তার (২৫) প্রসব ব্যাথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে কসবা উপজেলার কুটি চৌমহনী বসুন্ধরা হসপিটাল (প্রা:) লিমিটেডে ভর্তি করেন। তাৎক্ষনিক ভাবে তাকে অস্ত্রপাচার করেন। তিনি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। শিশুটি কসবা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ এর কাছে নিয়ে এলে তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেন। এদিকে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসুতি নিলুফা আক্তারের শারিরীক অবস্থা অবনতি দেখা দিয়েছে। প্র¯্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে পেট ফুলে গেছে। পরদিন শুক্রবার সকালে আবারও অস্ত্রপাচার করে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে গতকাল শনিবার সকালে ওই তিন সাংবাদিক সংবাদের তথ্য সংগ্রহ করতে বসুন্ধরা হসপিটালে যায়। এ সময় তাদের পেশাগত পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে পরিচালক গোলাম মোস্তফার সন্ধান করেন। পরে পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। নবজাতক ও প্রসুতির পুনরায় অস্ত্রপাচারের বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় গোলাম মোস্তফার লোকজন উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। পরে তাদেরকে পিটিয়ে, কুপিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। ঘটনাটি ধারণ করা একটি ভিডিও ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় একটি চক্র হাসপাতালের টেবিল-চেয়ার গ্লাস ভাংচুর করেছে। খবর পেয়ে কসবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন সাংবাদিককে উদ্ধার করে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কসবা উপজেলা শাখার উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি কসবা পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কসবা থানা চত্ত¡রে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে কসবায় কর্মরত সকল সাংবাদিকরা অংশ নেয়। আহত বিজয় টেলিভিশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন ওরফে উজ্জল বলেন; ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসুতির গুরুতর অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে সেখানে মালিক গোলাম মোস্তফাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনিসহ তাঁর লোকজন তিন সাংবাদিককে পিটিয়ে কুপিয়ে আটকে রাখে। এ সময় ভিডিও ধারণ করা ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নেয়। প্রসুতির স্বামী সেলিম মিয়া বলেন; আমি শুনেছি ওইদিন ডাক্তার ছিল না। নার্সরাই আমার স্ত্রীকে অপারেশন করেছে। কিন্তু শিশুটিকে কসবায় নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেছে সে আর নেই। পরে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পরেছে। পরে আবার অপারেশন করেছে। প্রসুতির অস্ত্রপাচারকারী চিকিৎসক মো. শরীফ বলেন; তিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সনোলজিষ্ট বিভাগে কর্মরত আছেন। তিনিই ওই প্রসুতির অস্ত্রপাচার করেছেন। তিনি বলেন; ডেলিভারী হতে অনেক সময় অতিক্রম হয়ে গেছে। শিশুটি মায়ের পেটেই অসুস্থ ছিল। দ্বিতীয় বার অস্ত্রপাচারের বিষয়ে তিনি বলেন; প্রসুতির পেটে গ্যাস বেড়ে গেলে প্রসাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুনরায় অস্ত্রপাচার করে বাইপাস লাইন করে দেয়া হয়েছে। বসুন্ধরা হাসপাতালের পরিচালকের স্ত্রী চিকিৎসক শিরিন সুলতানা বলেন; রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ভাংচুর করেছে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তা ঘটে গেছে। তবে সাংবাদিকদের উপর কেন আক্রমণ করা হয়েছে তার কোন সদউত্তর দিতে পারেননি। শুধু প্রসুতির স্বামী সেলিম মিয়ার মোবাইল ফোনটি নেয়া হয়েছে কিন্তু সাংবাদিকদের ক্যামেরা হাসপাতালে কেউ নেয়নি। কসবা থানার উপপরিদর্শক (এস.আই) মো. সাইদুর রহমান বলেন; ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আহত সাংবাদিক রুবেল আহাম্মদ বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮/৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলার প্রধান আসামী বসুন্ধরা হাসপাতালে পরিচালক গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।