মারুনা রাহী রিমি ##########
আমার কাছে নিতান্তই অর্থহীন, বিব্রতকর, বিরক্তিকর মনে হয় যদিও প্রতিনিয়ত বাধ্য হতে হয় এমন সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে। যে কেউ হয়তো ভাববে আমি একটু হয়তো বেশি বেশিই বলছি। এগুলো হয়তো খুব বেশি সামান্য বিষয়। কিন্তু আসলেই এসকল প্রশ্নের আমি কোন জবাব খুঁজে পাই না।
যেমন, “কেউ বলল ক্ষুধা লাগছে।” পরক্ষনেই কেউ একজন বলে উঠলো, “কেন?” কথায় কথায় একটা প্রশ্ন হিসেবে সবাই ব্যবহার করে, “কেন” শব্দটি। এটা নিশ্চয়ই বেকুবেও বলতে পারবে যে, সব জায়গায় না “কেন” এর প্রশ্ন আসে আর না সব “কেন” এর কোন উত্তর থাকে। তবুও মানুষের সকল কথার মাঝে “কেন” প্রশ্নটি আসতেই হবে। “কেন” যে কথায় কথায় কেন আসবে সেটাও বুঝি না।
সবচেয়ে বিরক্তিকর প্রশ্ন, “আপনার কি বিয়ে হয়েছে?” সাবলীল ভাষায় যদি জবাব দেই, “না।”, পাল্টা প্রশ্নের বস্তা ছুড়ে মারে, কেন হয় নি বিয়ে? কি সমস্যা? কেন বিয়ে করেন নি? কাউকে কি ভালবাসেন? মনের মতো কাউকে পান নি? কোন ছেলে পছন্দ হয় নি? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরে বাপ, বিয়ে কেন হয় নি সে আমি কি করে বলব? সেটা নিশ্চয়ই আমার জানার কথা না। সেই প্রশ্ন সৃষ্টিকর্তাকে করা উচিৎ যিনি আমাদের সকল কিছু পরিচালনা করছেন। চরম বিব্রতকর একটা বিষয় হয়ে দাড়ায় এই প্রশ্ন। তার মধ্যে বিয়ে হলে কেউ আবার করে না কি করে সেটাও আমি বুঝি না। কারো বিয়ে না হলেই লোকে ভাগ্যের কথা চিন্তা না করে সবার আগে কেন এমন কথা চিন্তা করে যে, নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করছে না বা পছন্দ হয় না দেখে করছে না বা কাউকে ভালবেসেই করছে না বা মনের মতো কাউকে পায় নি তাই ই বিয়ে করছে না?
আররে ভাই, বিয়ে না হবার কারন কি তার ভাগ্যের লিখন হতে পারে না? বা আপনাদের মতো কোন ছেলে আর ছেলের পরিবারই এই ত্রুটি, ঐ ত্রুটির জন্য কি মেয়েটাকে বাতিলের খাতায় ফেলতে পারে না? ভালবাসলেও সেই মানুষটা কি তাকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে না করে ফেলে যেতে পারে না? ইচ্ছা করে বুঝি কেউ কখনও একা থাকে বা সিঙ্গেল থাকে?
এমন প্রশ্ন শুনলে রাগে দুঃখে গা জ্বলে উঠে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এদের প্রশ্নে রাগ, বিরক্তি, বিব্রত সব হতে হয়। কিন্তু সেই ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে গিয়ে বলতে পারি না আর রেগে গিয়ে মন খুলে অপমানও করতে পারি না এই বলে যে, আরে বেকুব বিয়ে না হলে কি কেউ ইচ্ছা করে সিঙ্গেল বা একা থাকে?
এরপর যে প্রশ্নের সম্মুখীন প্রায়ই হতে হয়, “আপনার হাজব্যান্ড কি করেন? আপনার বেবি কয়টা?” বাইরের লোকজন না জেনে যখন এমন প্রশ্ন করেন তখন রাগে মনে হয় জিজ্ঞেস করি, “ভাই আমার চেহারায় কি লেখা রয়েছে যে আমি বিবাহিতা?আপনি কি করে নিশ্চিত হলেন যে, আমার হাজব্যান্ড আছেই? আমার একটা না, একাধিক বেবি আছে? ” সাধারন ভাবেই লোকের প্রশ্ন করা উচিৎ কাউকে যে, “আপনি কি বিবাহিত?” তারপর এমন প্রশ্ন আসা উচিৎ। সেটা না করে নিজেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া কোন ধরনের ভদ্রতা?
বাইরের কেউ হয়তো বুঝলাম জানার কোন সুযোগ ছিল না বলে ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু ফেসবুক প্রোফাইলে যেখানে ক্লিয়ার করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়া রয়েছে, সেখানে কারো এমন ভুল হবার কোন চান্সই খুঁজে পাই না। কারো সম্পর্কে কারো যদি সন্দেহ হয় যে, সে বিবাহিত নাকি অবিবাহিত জেনে নেই তবে আগে প্রোফাইল চেক করা উচিৎ। প্রোফাইলে না থাকলে আলাদা করে প্রশ্ন করতে পারে যে, “আপনি বিবাহিত কি না?” কিন্তু সেসব না করে কিছু লোক নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকে যে, যার সাথে কথা বলছে, নিঃসন্দেহে সে বিবাহিতা ই হবে আর সন্তানও থাকবে তার। কেন? কোন বাধ্যবাধকতা আছে নাকি?
অনেকে মুখের উপর বলে বসে, “আপনাকে দেখে বিবাহিতা মনে হয়। আপনাকে দেখলে বেবি আছে এমন মনে হয়।” কেন? চেহেরায় কি লেখা থাকে নাকি যে, কে বিবাহিতা আর কে বিবাহিতা নয়? শরীরের কই লেখা থাকে তার কয়টা বাচ্চা আছে? তাইলে ভাই আমারও শিখতে হবে এসব বোঝা। কারন আমার পরিচিত এমন আমাদের থেকেও ডাবল বয়সী মহিলাদের তাদের মেয়ের সাথে দেখলে বোন মনে হবে। কারো সাধ্য নাই বোঝার যে, তার বয়স কত হতে পারে, তার বাচ্চা আছে কি নাই, থাকলেও কত বড়। যারা চেহারা আর শরীর দেখে সব বুঝে নেন, অনুগ্রহ করে আমাকে একটু শিখায় দেন মানুষের চেহারা আর শরীরের কোন জায়গায় এসব লেখা থাকে আর কোন ভাষায়।
আমরা খুব স্বাভাবিক ভাবেই মানুষকে প্রশ্ন করি, “কেমন আছেন?” সবাই স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দেয়, “ভাল বা ভাল নয়।” ভাল বললে বিব্রত হবার আর কোন চান্সই থাকে না। ভুল করেও যদি কেউ সত্যি বলে বসে যে, “ভাল নেই।” এবার তার বিব্রত হবার পালা। এখানেও প্রশ্ন আসে, “কেন?” এই “কেন” আসার কি আসলেই কোন প্রয়োজন হতে পারে? আচ্ছা বুঝলাম কথার জন্য প্রয়োজন। আমি প্রায়ই এমন প্রশ্নের জবাবে বলি, “এমনি।”
অসংখ্য মানুষ জবাব শুনে যেন রাগ করেই বলে উঠে, “বলতে না চাইলে ঠিক আছে। বলার মতো না হলে ওকে।” আজব কাহিনী। আমি ভাল নাই তার হাজারও কারন থাকতে পারে। এখন কি তাকে হিসাব করে বলতে হবে কেন ভাল নাই? ভাই আমার পায়খানা হচ্ছে না কিছুদিন, কিছুদিন ধরে পায়খানা কসা, কিছুদিন ধরে ক্রিমি হচ্ছে, প্রসাব অনেক করে হচ্ছে, সারা শরীর চুলকায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এই জন্যে ভাল নাই।” Really so funny.
কেউ যদি ভাল নেই এর জবাব এমন সংক্ষেপে দেয় তবে এমনিতেই সবার বুঝে নেয়া উচিৎ যে, বলার মতো আসলে কিছুই নাই। ভাল থাকার মতো কিছু হয় নি বলে সে ভাল নাই। যা কিছুই হয়েছে খারাপ হয়েছে বা হচ্ছে। সেই জন্যেই হয়তো ভাল নাই। এখন তাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করার মতো কি আছে?
আরেকটা যে প্রশ্ন প্রায়ই শুনি, “আপনি এত সকালে কেন?” যে কেউ স্বাভাবিক ভাবে সকালে উঠতেই পারে, তার অফিসিয়াল কোন কাজ থাকতে পারে, হাটতে যেতে সকালে উঠতে পারে বা সকালে উঠার অভ্যাস বলেই সকালে উঠবে। এখানে প্রশ্নটা কি অর্থহীন নয়? হ্যাঁ আমার ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম যে, আমি রাতে ঘুমাই না দেখে ম্যক্সিমাম সময়ে সকালেই আমাকে অনলাইনে পাওয়া যায়।
যদি কাউকে জবাব দেই, “আমি রাতে ঘুমাই না।।” সেরে গেল। শুরু হয়ে গেল আরেক প্রশ্ন “সেকি! আপনি রাতে ঘুমান না কেন?” আরে বাপ, ঘুম এলে কেউ আবার না ঘুমায় থাকে নাকি সেও আবার রাতের বেলায়? যাদের নাইট ডিউটি থাকে তারাও তো রাতে সুযোগ করে ঠিকই ঘুমিয়ে নেয় ঘুম এলে। তাহলে আমি কি ঘুম এলে ঘুমাব না? কি আজব প্রশ্ন!
চরম বিরক্তিকর আরেকটা প্রশ্ন, “আপনি ডায়েট করেন না?স্লিম হলে কিন্তু আপনাকে চরম লাগতো! ” শালা আমি ডায়েট ব্যায়াম করি কি না করি তোদের কি? আমি মোটা থাকি আর চরম দেখতে না লাগি তাতে তোদের কি? তোদের গলায় ঝুলছি নাকি? আমাকে দেখে তোদের কষ্ট লাগলে দেখিস না। এমন প্রশ্ন নিয়ে আসিস কোন সাহস আর কোন অধিকারে? আশ্চর্য!
প্রায়ই অনেকে আমাকে যখন প্রশ্ন করে, “আপনার বিয়ে হয় না কেন?” সাবলীল ভাবে জবাব দেই, “কি করবো! পাত্র আর তাদের পরিবারের সুন্দরী স্লিম নায়িকাদের মতো মেয়ে লাগবে। আমি তো সুন্দরী নই। মোটা কুৎসিত। তাই বিয়ে হয় না।” পরক্ষনেই একটা সাজেশন আসে, ডায়েট,এক্সারসাইজ করলেই হয়। স্লিম হলেই তো হল। করে ফেলে।” শালা আমার বিয়ে হোক বা না হোক তোদের এত গা জ্বালা করে ক্যান? আমি সিঙ্গেল থাকি বা ডুয়েট থাকি তোদের কি? নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে নিজের শরীর কেন বানিয়ে নিজস্বতা নষ্ট করে আমাকে কেন বিয়ে করতে হবে?
আমি বলছি না প্রশ্ন করা অন্যায়। প্রশ্ন ভাল বিষয়। তবে সেই প্রশ্ন যেন কারো মনে আঘাত না হানে, কাউকে বিব্রত না করে, বিরক্তির কারন যেন না হয়। সবার লজিকাল প্রশ্ন করা উচিৎ। অর্থহীন প্রশ্ন একটা মানুষকে কি দিতে পারবে আর কি শেখাতে পারবে? উল্টো এমন প্রশ্ন কাউকে বিব্রত, বিরক্ত করতে পারবে, রাগ তুলে দিতে পারবে, কারো মনে আঘাত হানতে পারবে। প্রশ্ন তো আমিও করি কিন্তু অর্থহীন নয় বা না জেনে নয়।
প্রশ্ন হওয়া উচিৎ জানার জন্য, বিব্রত করার জন্য নয়।