
রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম থেকে ঃ
কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার ১৬টি নদ- নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে এবার প্রচুর পরিমাণ সরিষার আবাদ হলেও শুরু হয়নি সর্বত্র মৌ-চাষ। সরিষা ক্ষেতে মৌ-চাষের প্রশিক্ষণ না থাকায় কয়েক কোটি টাকার বাড়তি উপার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার সরিষা চাষীরা। ফলশ্রুতিতে সম্ভব হচ্ছে না সরিষার বাড়তি ফলন নিশ্চিত করাও।
বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার কুড়িগ্রামের কৃষকরা বিপুল পরিমানে সরিষার চাষ করেছে। চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। সরষে ফুলের মধু আহরণে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌ-মাছি তবে সব এলাকায় এখন পর্যন্ত আসেনি মৌ -চাষের ধারণা।
শুধুমাত্র জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে রৌমারী উপজেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌ-চাষীরা এসে মৌ-চাষ করছেন। অন্যান্য এলাকাগুলোতে প্রশিক্ষণ না থাকায় শুরু হয়নি মৌ-চাষ।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ি এবার জেলায় ১২ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর সরিষা ক্ষেতের পাশে ১শ’ টি মৌ-বাক্সে মধু চাষ করা সম্ভব। সরিষা মৌসুমে তিন সপ্তাহে প্রতি বাক্স থেকে ৯ থেকে ১০ লিটার মধু সংগ্রহ করা যায়। সেই হিসেবে জেলার চাষকৃত সরিষা ক্ষেতের পাশে কমপক্ষে ১২ লাখ মৌ বাক্স বসিয়ে মধু চাষ করা সম্ভব। এতে যে মধু সংগ্রহ করা যাবে তা থেকে কমপক্ষে সাড়ে ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা বাড়তি উপার্জন সম্ভব। পাশাপাশি মৌ-মাছির পরাগায়নের মাধ্যমে সরষের ফলনও বৃদ্ধি পায় অনেক।
রৌমারী উপজেলার বাইটকামারীর চরের কৃষক মোত্তালেব মিয়া জানান, আমার ও আমার আশপাশের কৃষকরা এবার প্রচুর পরিমাণে সরিষার আবাদ করেছি। তবে মৌ চাষের কোন প্রশিক্ষণ নেই আমাদের। আমাদের সরিষা ক্ষেতের পাশে ময়মনসিংহ জেলা থেকে একদল মৌচাষী এসে মৌচাষ করছে তারা প্রচুর পরিমানে মধু আহরণ করছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর মাধবরাম এর কৃষক মোস্তাফিজার রহমান, জোনাব আলী, বাচ্চু মিয়া জানান, এবারের বন্যায় তাদের সকল জমির ফসল সম্পূর্ণ রুপে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন্যার পানি নেমে যাবার পর চরাঞ্চলের এই বেলে দোঁ-আশ মাটিতে বারি-১৪ ও বারি-৯ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। এসব জমিতে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। মধু আহরণে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌ-মাছি। তবে মৌ-চাষের প্রশিক্ষণ না থাকায় মৌ-চাষ করতে পারছেন না। তার পরেও এবারে সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মিলন চৌধুরী জানান, এবার চরাঞ্চল গুলোতে প্রচুর পরিমাণ সরিষা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কৃষক পর্যায়ে মৌ চাষের প্রশিক্ষণ থাকলে বাড়তি আয়ের পাশাপাশি পরাগায়নের মাধ্যমে আরো বেশি ফলন পাওয়া যেত। প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রভাব না পড়লে ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ না হলে এ বছর জেলায় অন্যান্য বারের চেয়ে বিপুল পরিমাণ সরিষার উৎপাদন সম্ভব। তবে মৌ-চাষ এর প্রশিক্ষণ না থাকায় বিপুর পরিমাণ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।