রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম থেকে ঃ
চাদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কুড়িগ্রাম সরকারী হাসপাতালের প্রবীণ এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে ফাঁসাতে জনৈক ব্যক্তির নানা কল্পকাহিনী সাজিয়ে হয়রানিমূলক মামলা এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পুলিশের যোগসাজসে ভূয়া গুরুতর জখমি সার্টিফিকেট সহ আদালতে র্চাজশীট দাখিলের চাঞ্জল্যকর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানা পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম শহরের হাসপাতাল পাড়া এলাকার কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের প্রবীণএ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ফজলুল হক (৫৫) গত ১৩ ডিসেম্বর/১৬ তারিখ দুপুরে গুরুতর অসুস্থ রোগী নিয়ে সাইরেন বাজিয়েএ্যাম্বুলেন্সযোগে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাবার পথিমধ্যে লালমনিরহাটস্থ মোস্তফিবাজার সংলগ্ন এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা মটর সাইকেল চালক আব্দুল জলিল ও তার এক আরোহী বেপরোয়া চালাতে গিয়ে এ্যাম্বুলেন্সের সাথে সংঘর্ষে তারা আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন এম্বুলেন্স ও আহতদের গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গিয়ে চেয়ারম্যান, লালমনিরহাট থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হয়। এতে উভয়কে জানানো হয় আহতরা নিজ খরচে চিকিৎসা নেবেন এবং এম্বুলেন্সের ক্ষয়ক্ষতি ড্রাইভার মেরামত করে নেবেন। এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে এম্বুলেন্সটি কুড়িগ্রাম হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইতোমধ্যে এ্যাম্বুলেন্সে থাকা গুরুতর শিশু রোগীটিও রংপুর মেডিকেলে না পৌঁছতেই তার মৃত্যু হয়।
এরপর ৭ দিন যেতে না যেতেই উক্ত মটরসাইকেল চালক আঃ জলিল ড্রাইভারকে মোবাইল ও বিভিন্ন মারফত ক্ষতিপূরণ বাবদ মোটা অংকের চাদা দাবী করতে থাকেন। এতে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘ ২ মাস পর ঐ মটরসাইকেল চালক আব্দুল জলিলের পক্ষে নাজমুস সাকিব (২০) নামের এক যুবক বাদি হয়ে এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে আসামী করে লালমনিরহাট অতিঃ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রট আমলী আদালত একটি নালিশ দাখিল করেন। বিজ্ঞ আদালত প্রাথমিক শুনানী শেষে নালিশটি মামলা রের্কড পূর্বক এজাহার হিসেবে গন্য করার জন্য লালমনিরহাট ওসি সদর থানাকে নির্দেশ দেন। যার নম্বর সি আর ৮৫/১৭। পরে সদর থানা পুলিশ ৪ মাস পর গত ১২ এপ্রিল/১৭ নালিশটি এজাহার হিসেবে গ্রহন করেন। যার নম্বর-১,৬ ধারা ৩২৩/৩২৫/৩২৬/১০৭/৪২৯/৩৪দঃবিঃ এবং মামলাটির তদন্তকারী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় এস আই মাহমুুদুল হাসান কে। দায়িত্ব পেয়ে তিনি তদন্ত করে গত ৩১ অক্টোবর/১৭ ড্রাইভার ফজলুল হক কে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এর আগেই ড্রাইভার ফজলুল হক স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন।
তথ্যানুন্ধানে আরো জানা যায়, থানা পুলিশের অভিযোগ পত্রের প্রেক্ষিতে আসামী ফজলুল হক গুরুতর জখমি সার্টিফিকেট এর বিষয়ে তার আইনজীবি আবু আহাদ খন্দকার লেলিনের মাধ্যমে রংপুর মেডিকেল কর্তৃপক্ষের নিকট গুরুতর আহত হওয়া রোগিদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে আবেদন করলে রংপুর মেডিকেল কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন পত্র দাখিল করেন যে, আব্দুল জলিল ১৫/১২/১৭ইং তারিখে হাটুর পুরাতন আঘাত জনিত রোগে ভর্তি হয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে ভর্তি সনদ নেন। কিন্তু তাকে আদৌ গুরুতর জখমি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় নাই। এর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদি যোগসাজসে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাঃ মোঃ হামিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ভূয়া গুরুতর জখম সার্টিফিকেট দাখিল করেন সেও আবার আবেদনের ১ মাস আগেই। এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ফজলুল হককে ৩২৬ ধারার অপরাধে অপরাধী মর্মে অভিযুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার আসামী এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মোঃ ফজলুল হক জানান আমি ২৯ বছর থেকে ড্রাইভার হিসেবে নিরলস ভাবে সরকারী দায়িত্বপালন করে আসছি।অথচ মামলায় উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে আমাকে পেশাদার খুনি,চাদাবাজ হিসেবে আক্ষায়িত করা হয়েছে।আমি এর সুষ্ট বিচার চাই।
মামলার বাদি নাজমুস সাকিব এর সাথে মোবাইল ফোনে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছি সবই সঠিক। হাসপাতালের সার্টিফিকেট এবং চার্জশিট কি দিয়েছে তা আমার জানা নেই। এতে কোনো কিছু রদবদল হলে নারাজি করবো।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মাহমুদুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান-মামলার স্বাক্ষীরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ায় চার্জশিটটি এমন হয়েছে। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় চার্জশীট সংশোধন করে দিচ্ছি।