রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম থেকে:- কুড়িগ্রামে লোকালয়ে কার্বন পাউডার মিল স্থাপন করায় হুমকির মুখে পড়েছে জেলার রাজিবপুর উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠির মানুষ। প্রকৃতিতেও পড়েছে বিরুপ প্রভাব। স্থানীয়রা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে কোনো ফল না পাওয়ায় জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, রাজিবপুরের টাঙ্গালিয়াপাড়ায় গত ৫ মাস ধরে অনুমোদনহীন ‘কার্বন পাউডার’ মিল চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এতে স্থানীয়রা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন। মিল চালু অবস্থায় কেমিক্যাল মিশ্রিত পাটকাঠি পোড়ানোর ছাইয়ে গাছপালা মরে যেতে শুরু করেছে। শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সেই সাথে উড়ন্ত ছাইযুক্ত ঘাস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গবাদি পশু। প্রাণী তথা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করা এমন একটি মিল বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও ফল পাচ্ছেন না।
সরেজিমে গেলে দেখা যায়, শুকুর আলী, আব্দুল মান্ননসহ ৫ কিশোর কার্বন পাউডার মিলে (চারকল মিল) ছাই ভাঙছেন। পাশে দুটি বয়লারে পোড়ানো হচ্ছে পাটকাঠি। কিছু দুরে ভানু বেগম, পেতি খাতুন নামের দু’জন মহিলা ওই ছাই শুকোতে ব্যস্ত। তাদের সর্বাঙ্গ যেন কালিমাময়। ছাই যেমন উড়ছে তেমননি মূহুর্মুহু কাশছেন তারা। মিলের ম্যানেজার শহীদার রহমান জানান, প্রতিদিন প্রায় ৭০ টন পাটকাঠি পোড়ানো হয় এখানে।
মিলের বৈধ কোন কাগজপত্র আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় শেয়ার হোল্ডার নুরুল আলম জানান, আবেদন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী তদন্তও হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে সকল দপ্তরের অনুমোদন আসছে। সেই সাথে এ কার্বোন পাউডার দিয়ে কত প্রকার দ্রব্যাদি তৈরি হয় তার একটা বিস্তর ফিরিস্তি দেন তিনি। নুরুল আলম তার বাড়ির পাশে ১.২৯ একর জমি ওই মিলের নামে দিয়ে শেয়ার হোল্ডার হয়েছেন।
ওই মিল সংলগ্ন সাবেক বিজিবি সদস্য আব্দুল আলিম অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই এ চারকল মিলটি স্থাপন করেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী এলাকার শহিদুর রহমান। তিনি বিভিন্ন স্থানে মিলটি চালু করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখানে স্থাপন করেছেন। স্থানীয় কিছু নেতার মদদে তিনি এটি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। যেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। ইতোমধ্যেই একাধিকবার এতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। পার্শ্ববর্তী জামালপুর থেকে ফায়ার সার্ভিস এসে ৭ দিন চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও রান্না করা খাবার, কাপড় চোপড়, গাছপালার ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। মিলটি বন্ধ করা খুবই জরুরি।
রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর উপপরিচালক মেসবাহুল আলম বলেন, চারকল মিল লোকালয় থেকে অন্তত ৩ কিলোমিটার দুরে স্থাপন করতে হবে। যা এখানে মানা হয়নি। তাই আমরা এর অনুমোদন দেইনি। যেহেতু এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে আমরা এর ব্যবস্থা নেব।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন আমিনুল ইসলাম বলেন, চারকল মিলের কেমিক্যাল মিশ্রিত ছাই ও ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। সেই সাথে ব্রণকাইটিজ ও চর্মরোগও হতে পারে। কর্তৃপক্ষের উচিত এটি লোকালয় থেকে সরিয়ে দেয়া।
অনুমোদন ছাড়া কিভাবে মিল চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মিল মালিক শহিদুর রহমান মুঠো ফোনে বলেন, স্থানীয় লোকজনদের অনুরোধে একটু আগেই শুরু করলাম। জানেন তো একটি কারখানা চালু করতে কত কিছু লাগে। সেই সাথে অনেক বেকার এখানে কাজ পেয়েছে। এটাও তো জনসেবা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।