
খুলনায় কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় মহানগরীর মানুষের মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে। ওষুধের দোকানদার, ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ান, ছাত্র, আবার কেউ স্বশিক্ষিত কিছু লোক দাঁতের চিকিৎসক সেজেছেন। ডাক্তার নামে এসব মানুষের অপচিকিৎসার ফলে রোগীরা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে বেআইনিভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ডেন্টাল কেয়ার। নগরীর বিভিন্ন স্থানে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য টানানো হয়েছে আকর্ষণীয় ব্যানার ও সাইনবোর্ড। ডাক্তারের অভিজ্ঞতার মিথ্যা পদবি লিখে মানুষের সঙ্গে করা হচ্ছে প্রতারণা।
চিকিৎসা আইনে আছে, ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ান পাসধারীরাও সরাসরি চেম্বার খুলে জটিল রোগের কোনো চিকিৎসা দিতে পারবে না। দাঁত উঠানো, দাঁত বাঁধানো, রুট ক্যানেল, জিআই ফিলিং, মারকারি ফিলিং, লাইট কিউরফিলিং, ক্যাপ, ব্রিজ এবং আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করার মতো স্পর্শকাতর চিকিৎসা দেওয়ার কোনো অনুমতি তাদের নেই।
এসব অপচিকিৎসার প্রেক্ষিতে বহু মানুষ তার মহা মূল্যবান দাঁত সময়ের আগেই অকালে হারাচ্ছে ফলে ভূক্তভোগীদের হাজারো অভিযোগ উঠেছে এসব নামধারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীরাই চিকিৎসা করতে পারবেন। এরমধ্যে বিডিএস ডিগ্রিধারীরা কেবল দাঁতের চিকিৎসা করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের বেশিরভাগেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা বড়জোর এসএসসি। কয়েকজন আছেন এইচএসসি পাশ। অনেকে আবার স্কুলের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। কিন্তু তারাই ‘দাঁতের ডাক্তার’ সেজে নগরীতে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
খুলনায় ভুয়া ডিগ্রীধারী দাঁতের চিকিৎসক ক্রমাগত বাড়ছে। তেমনই পরিচয় দানকারী কয়েকজন ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া যায় খুলনা মহানগরীতে। নগরীর রুপসা স্ট্যান্ড রোডের রুপসা ডেন্টাল কেয়ারের ডাঃ বিবেকানন্দ ঢালী, রুপসা স্ট্যান্ড রোডের প্রোঃ ডেন্টাল ফার্মেসী’র মোঃ লিটন, সোনাডাঙ্গা থানার আল ফারুক সোসাইটির পাশে বাধন ডেন্টাল কেয়ারের দন্ত চিকিৎসক যোসেফ বৈরাগী ও কাস্টম ঘাট এলাকার মোঃ মন্টু।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, খুলনা মহানগরীর রুপসা স্ট্যান্ড রোডে অভিজাত চেম্বার সাজিয়ে রুপসা ডেন্টাল কেয়ারে ৩০ বছর ধরে দাঁতের চিকিৎসা করছেন ডাঃ বিবেকানন্দ ঢালী। বিভিন্ন আইটেমের বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে নিরীহ রোগীদের প্রতারিত করছেন। রোগীদের দাঁত তোলা, দাঁত বাঁধাই, রুট ক্যানেল, স্কিলিং, ফিলিংসহ দাঁতের যাবতীয় চিকিৎসার কাজসহ প্রেসক্রিপশন করে থাকেন। চিকিৎসা সনদ আছে কি না এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান ডাঃ বিবেকানন্দ ঢালী।
সোনাডাঙ্গা থানার আল ফারুক সোসাইটির পাশে বাধন ডেন্টাল কেয়ারের দন্ত চিকিৎসক যোসেফ বৈরাগী। তবে বাধন ডেন্টাল কেয়ারে দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় কোনো যন্ত্রপাতিই দেখা যায়নি। চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি আছে কি না এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
ভূক্তভোগীরা জানান, একটি দাঁতেরর চিকিৎসা নিতে গেলে দেখা যায়, সে দাঁতের রোগ নির্মুল না হয়ে অন্য দাঁতগুলোর সমস্যা দেখা দেয় এবং ইনফেকশন হয়ে ঘাঁ সহ নাবিধ সমস্যা দেখায়।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা জানান, বিডিএস ডিগ্রীধারী ব্যতীত ডেন্টাল ক্লিনিক পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপত্র দেয়া অবৈধ। তবে এ ধরনের কার্যক্রম কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।