
মোমিন মেহেদী-
শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানানো অব্যাহত রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয়। সরকারের অথর্ব-অকর্ম শিক্ষামন্ত্রী, সচিব-উপসচিব ও সংসদিয় কমিটির সদস্যদের অযোগ্যতায় অন্ধকার নেমে আসছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ফের নতুন পদ্ধতির নামে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে অন্ধকার। এই অন্ধকারের রাস্তায় অগ্রসর হতে হতে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে-কমিয়ে ফল তৈরি হবে, সরকার নির্ধারণ করে দেবে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা, কারিকুলাম-পাঠ্যবই পরিবর্তনের প্রস্তুতিও চলছে, বাতিল করা ‘এসবিএ’ আসছে ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ নামে। হাজার রকম সমস্যার রাস্তা তৈরি করতে বদ্ধ পরিকর বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজচক্র। এই দুর্নীতিবাজদের চক্করে পরে একের পর শিক্ষার্থী ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ। ছাত্রছাত্রীদের গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে। পাঁচ বছরে কারিকুলাম একবার ও পাঠ্যবই পাঁচবার পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতি পাল্টানো হয়েছে কয়েকবার। দেড় দশকে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতিও বদলেছে তিনবার। এমন ভাঙাগড়ার মধ্যেই শিক্ষার্থী মূল্যায়নে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নতুন এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে-কমিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। নম্বরের ভিত্তিতে নয়, সরকার নির্ধারণ করে দেবে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা। এ ছাড়া মাত্র চার বছরের মধ্যে ফের কারিকুলাম এবং এক বছরের মধ্যে পাঠ্যবই পরিবর্তনের প্রস্তুতি চলছে। কারিকুলাম, পাঠ্যবই ও পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের অগ্রগতি পর্যালোচনার নামে মন্ত্রী-শিক্ষক নেতা আর আমলাদের অসংখ্যবার রুটি-হালুয়ার ভাগাভাগি হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার মত কোন নিয়মতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেনি আমাদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটায় ব্যস্ত মন্ত্রী-এমপি-শিক্ষকগণ। বরং যোগ হয়েছে শিক্ষার নামে কুশিক্ষার রাস্তায় এগিয়ে চলা লোভাতুর বিভিন্ন মাধ্যম। যেমন-আরবী মাধ্যম, ইংলিশ মাধ্যম, উর্দু মাধ্যম, ফার্সি মাধ্যম, হিন্দি মাধ্যম ইত্যাদি। পাশাপাশি তো কওমী, আলীয়া, কাদিয়ানীসহ একগাদা ফেরকা নির্মাণকারী শিক্ষা ব্যবস্থাতো আছেই। অথচ বিশ্বের কোন দেশে তথাকথিত এই মাদ্রাসা কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা নেই, নেই দেশিয় ভাষা ব্যতিত অন্য কোন মাধ্যমের এমন নিয়ম ভাঙার শিক্ষা ব্যবস্থাও। এরই মধ্যে এমন নতুন নতুন শিক্ষা প্রক্রিয়া আসা আর যাওয়ার কারনে নতুন প্রজন্ম ক্রমশ মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। পড়া লেখার প্রতি আগ্রহও হারাচ্ছে। তার মধ্যে আবারো শুধু কারিকুলাম, পাঠ্যবই আর পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতিই নয়, শিক্ষার অন্যান্য দিকেও ঘন ঘন কাটাছেঁড়া চলছে। এসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে এক শ্রেণীর আমলা ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক বিদেশ ঘুরে আসেন। দেশে ফিরে জাতীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং আর্থসামাজিক দিক বিবেচনায় না নিয়ে বিদেশ সফরের লব্ধ জ্ঞানের আলোকে তৈরি নতুন পদ্ধতি চাপিয়ে দিচ্ছেন। ফলে বিদেশ থেকে ধার করা ওইসব পদ্ধতি অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অসঙ্গতি ধরা পড়লেও অনেক ক্ষেত্রে তা টেনে হিঁচড়ে ছয়-সাত বছর চালু রাখতে দেখা যায়। যদিও নতুন সৃজনশীল পদ্ধতি বহুল সমালোচনার পরও ধরে রাখা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে সমালোচনার মাত্রা বাড়লে একপর্যায়ে তা বাতিল করা হয়। পরিবর্তে ফের চালু হয় নতুন কোনো পদ্ধতি। এভাবে ঘন ঘন এই পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং বেশিরভাগ শিক্ষকই খাপ খাওয়াতে পারেন না। এতে বিপাকে পড়েন শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সবাই। ফলে খুঁড়িয়ে চলে লেখাপড়া। জোড়াতালির ক্লাস কার্যক্রমের ক্ষতি পোষাতে শিক্ষার্থীকে হতে হয় কোচিং আর প্রাইভেটমুখী।
আর আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, শিক্ষার্থী মূল্যায়নে প্রস্তাবিত নতুন পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ফলের গুণগত মান নিশ্চিত করা। এটা হলে একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত অর্থে কতটা মেধাবী তা নিরূপিত হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘন ঘন পরিবর্তনের কোনো ঘটনা নেই। ১৯৯৬ সালের পর ২০১২ সালে কারিকুলাম পরিবর্তন হয়েছে। পাঠ্যবইও নতুন হয়েছে দু’বার। পাঠ্যবইয়ে মাঝখানে যা হয়েছে তা শুধু ইতিহাস বিকৃতি দূরের কাজ। সেটা একটা বড় কাজ ছিল। এখন কারিকুলাম ও পাঠ্যবই পর্যালোচনা চলছে। প্রত্যেক দেশেই নির্দিষ্ট সময় পর এটা করা হয়। শিক্ষায় মৌলিক পরিবর্তন এনেছে সৃজনশীল পদ্ধতি। ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল, চিন্তাশীল এবং স্বাধীনভাবে লেখার সক্ষমতা তৈরির জন্যই এটি আনা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, তা উত্তরণে কাজ চলছে।
আসলে কি হচ্ছে? কতটা উন্নত হয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা? প্রশ্নের পর প্রশ্ন দানা বাঁধে, দিন দিন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা বঞ্চিত হচ্ছে ভালো শিক্ষার অধিকার থেকে। কেননা, শিক্ষার নামে মন্ত্রী-এমপিদের আখের গোছানোর চেষ্টায় অনবরত তৈরি হচ্ছে সমস্যা। টাকার বিনিময়ে বোর্ড বই মুদ্রণের টেন্ডার দিতে গিয়ে লেখক নেয়া হচ্ছে নিন্ম মানের, অলঙ্করণ নিন্ম মানের, সম্পাদক-সহ-সম্পাদক পর্যন্ত নিন্মমানের। সাথে তো অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তি-গাফলতি আছেই। তার উপর আবার গত ২৭ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী মূল্যায়নে ‘স্টান্ডার্ডাইজেশন’ (প্রমিতকরণ) নামে নতুন পদ্ধতির কথা প্রকাশ করেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। গ্রেডিং সিস্টেম বহাল রেখেই শিক্ষার্থীর ফল তৈরি করা হবে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী, খাতায় প্রাপ্ত নম্বর সরাসরি শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর থেকে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের গড় সংখ্যা দিয়ে বিয়োগ করা হবে। এরপর প্রাপ্ত ফল ওই বিষয়ে সব শিক্ষার্থীর নম্বর প্রাপ্তির তারতম্য (স্টান্ডার্ড ডেভিয়েশন) দিয়ে ভাগ করা হবে। এরপর যা আসবে সেটিই শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে। এই পদ্ধতি আনা হলে প্রতিবছর কত শতাংশ শিক্ষার্থীকে জিপিএ-৫ দেয়া হবে তা সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হবে। এ পদ্ধতি প্রবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) পরিচালক রবিউল কবীর চৌধুরী। রবিউল-এর পরিচয়, সরকারী মোসাহেব। আর মোসাহেবের মোসাহেবীতে মুগ্ধ হয়েই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-আমলা সবাই। সেই মোসাহেব রবিউল-এর বক্তব্য হলো- ‘বর্তমানে আমরা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর সরাসরি যোগ করে ফলাফল দিয়ে থাকি। পৃথিবীর কোথাও এটা করা হয় না। এতে একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত অর্থে মূল্যায়ন করা হয় না। ফলে আমরা ভালো ছাত্র আর দুর্বল ছাত্রকে চিহ্নিত করতে পারি না। তাই স্টান্ডার্ডাইজেশন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের চিন্তা করছে সরকার। বর্তমানে আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট, জিআরই এমনকি ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেল পরীক্ষাসহ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পরীক্ষায় এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। স্টান্ডার্ডাইজেশন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে কয়েকটি দিক বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে, প্রশ্নপত্রের মান বা তা কতটা কঠিন-সহজ ছিল, পরীক্ষকের নম্বর দেয়ার প্রবণতা বা তিনি কম-বেশি নম্বর দিয়েছেন কিনা ইত্যাদি। এ ছাড়া পরীক্ষার হলের পরিবেশ, উত্তর দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীর প্রশ্ন নির্ধারণের ক্ষমতা (সহজ না কঠিন প্রশ্ন বেছে নিয়েছে) বিবেচনায় নেয়া হয়। ক্লাসরুমে পাঠদান (শিক্ষক কতটা সফলভাবে পড়িয়েছেন), জেন্ডার, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বর্তমানে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফল পায়। কিন্তু এটা তার সত্যিকার প্রাপ্ত নম্বর নয়। প্রতিবছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তির চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। কেননা, সেখানে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্য গ্রেডের শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়। এর মানে হচ্ছে, কম জিপিএধারীরা ভালো ছাত্র ছিল। তাই অর্থপূর্ণ নম্বর দিতেই উল্লিখিত পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা আসছে। এটা প্রয়োগ করলে শিক্ষার্থীর র্যাঙ্ক অর্ডারে (যে রেজাল্ট করার কথা) কোনো পরিবর্তন আসবে না।
স্টান্ডার্ডাইজেশন পদ্ধতিতে আসার জন্য মন্ত্রীকে পরামর্শ দিচ্ছেন একজন মোসাহেব, আর সৃজনশীল পদ্ধতি আসার জন্যেও পরামর্শ দিয়েছিলেন একজন মোসাহেব, এই মোসাহেবদের চক্করে পওে ঘুরছেন শিক্ষামন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী; ঘুরছে ছাত্র-শিক্ষকগণ। অথচ আমাদের শিক্ষা ইতিহাস বলছে যে, শিক্ষা পদ্ধতিতে এযাবৎকালের সবচেয়ে ওলটপালট করা পরিবর্তনের নাম ‘সৃজনশীল ব্যবস্থা’। সনাতনী পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের আলোচনা শেষে প্রশ্ন থাকত। শিক্ষার্থীরা পাঠ থেকে সেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে লিখত। মুখস্থনির্ভর লেখাপড়া থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আনা, কোচিং-প্রাইভেট ও নোট-গাইড বন্ধ করতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হলেও বাস্তবে এর সবই বেড়েছে। সৃজনশীলের চতুর্থ প্রশ্নটি মুখস্থই করে লিখে থাকে শিক্ষর্থীরা। শিক্ষকরা ঠিকমতো না বোঝায় তারাও ক্লাসে ভালোভাবে পড়াতে পারছেন না। খোদ সরকারি সমীক্ষাই বলছে, ২০০৫ সালে এ পদ্ধতি চালু হলেও ১২ বছরে ৫৬ শতাংশ শিক্ষক এটি আয়ত্ত করতে পেরেছেন। অপরদিকে শিক্ষকরা যাতে পদ্ধতি বুঝতে পরিশ্রম করেন সে জন্য স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার প্রশ্ন বাইরে থেকে না কেনার নির্দেশনা ছিল। এ ব্যাপারে পরিপত্রও জারি করা হয়। কিন্তু পদ্ধতি না বোঝায় অনেক শিক্ষক তা মানছেন না। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা নেন। স্কুল-কলেজ তো বটেই, খোদ বোর্ড পরীক্ষায়ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থীরা আগে এক কোম্পানির গাইড কিনলেও এখন বেশি উদ্দীপক পাওয়ার আশায় একাধিক কোম্পানির গাইড কিনছে। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ক্লাসরুমের পরিবর্তে চলে গেছে কোচিং সেন্টারে। শিক্ষকরা এ পদ্ধতি না বোঝায় কমার্শিয়াল কোচিং সেন্টার বিস্তার লাভ করেছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসাও বেড়েছে। গণসাক্ষরতা অভিযানসহ (ক্যাম্পে) বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায়ও এসব তথ্য উঠে এসেছে।
হাস্যকর রসাত্মক কত কথাই না প্রতিদিন আমরা শুনি। এবার শুনুন নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা স্টান্ডার্ডাইজেশন পদ্ধতির মোসাহেব হিসেবে ব্যপক সমালোচিত ব্যক্তির সমালোচিত কথা। তিনি বলেছেন, ‘শুধু শিক্ষকের মানের অভাবে আমরা সৃজনশীল পদ্ধতিটা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’ যিনি সৃজনশীল পারেন নি, তিনি স্টান্ডার্ডাইজেশন পদ্ধতি কিভাবে পারবেন? পারবেন না, কেননা, আমাদের শিক্ষাকে একমূখী না করতে পারলে কোন পদ্ধতিই কোন কাজে আসবে না। আর তাই চাই আরবী মাধ্যম, ইংলিশ মাধ্যম, উর্দু মাধ্যম, ফার্সি মাধ্যম, হিন্দি মাধ্যম ইত্যাদির পাশাপাশি কওমী, আলীয়া, কাদিয়ানীসহ বিভিন্ন ধর্ম-অধর্ম মাধ্যমমুক্ত সত্যিকারের শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রয়োজনে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করা হোক নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদেরকে সাথে নিয়ে। যারা শিক্ষার নামে কুশিক্ষামুক্ত একটি সমাজ, একটি দেশ গড়ার জন্য নিরন্তর জ্ঞান অন্বেষন করে যাচ্ছেন, গবেষণা করে যাচ্ছেন। এই চাওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যদি এভাবেই বয়ে যায় জঙ্গী-হেফাজতকে খুশি করতে ‘কওমী বোর্ড’ লোভি-ভন্ডদেরকে খুশি করতে ‘ইংলিশ বা বাংলিশ বোর্ড’-এর মত অযাচিত কর্মকান্ড নিয়ে তাহলে ইতিহাস স্বাক্ষী, ইতিহাসের অনেক সরকারের মত তারাও নিক্ষিপ্ত হবে ভয়াবহ ঘৃণার আর যন্ত্রণা-বঞ্চণার আস্তাকুড়ে। আমরা নতুন প্রজন্ম তা চাই না, তাই এত অনুনয়-বিনয় আর আন্তরিকতার রাস্তায় অগ্রসর হওয়া…
প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে সম্ভব? সম্ভব কিভাবে তা প্রমাণ হবে কাজ করতে গেলে। এখন শুধু বুঝতে হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ধর্ম-অধর্ম-মাধ্যম ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এগিয়ে আসতে পারবে কি না একমূখী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য। যেখানে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সমাজ-সংস্কৃতি-প্রযুক্তি-সামরিক-সভ্যতা-বিনয় আর আন্তরিকতার রাস্তা তৈরির জন্য অনুপ্রাণিত করবে বিন¤্র ভালোবাসায়-আদরে। দেয়া হবে আসহাবে সুফফার মত সার্বিক জ্ঞানের রাস্তায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ। থাকবে না অন্ধকার, থাকবে না আর শিক্ষার নামে ব্যবসার কোন সুযোগ; গড়ে উঠবে বিনয়ের শিক্ষা কাঠামো মননে-মগজে-সবখানে…
লেখক, মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি এবং উপদেষ্টা, জাতীয় শিক্ষাধারা