
স্টাফ রিপোর্টার-
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পদ্মার ভাঙ্গনে ঘাট সমস্যার সাথে এই নৌপথে চলাচলরত পাঁচটি ফেরী বিকল থাকায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া তীব্র ¯্রােতে ফেরী পারাপার ব্যাহত হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত দৌলতদিয়া প্রান্তে পণ্যবাহি ট্রাক ও যাত্রীবাহি বাসসহ দুই শতাধিক গাড়ি আটকা পড়ে ছিল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন সংস্থা(বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর ¯্রােত বেড়ে যাওয়ায় গত রবিবার সন্ধ্যায় ১নম্বর ঘাটের র্যামের নিচ থেকে কয়েক ফুট মাটি ধ্বসে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। বিআইডব্লিউটিএ দ্রুত কাজ শেষে রাত নয়টার দিকে চালু করে। এছাড়া ২ নম্বর ঘাটটি শুধুমাত্র ছোট ইউটিলিটি ফেরীর জন্য তৈরী করা হলেও প্রচন্ড ¯্রােত থাকায় এখন পর্যন্ত কোন ছোট ফেরী ভিড়তে পারছেনা।
দিনে মাঝেমধ্যে দুই-একটি কেটাইপ(মাঝারী) ফেরি ভিড়ে। ফলে কার্যত এই ঘাটটি বন্ধ থাকছে। ৩নম্বর ঘাটটিতে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রোরো ফেরী ভাষা শহীদ বরকত ভিড়তে ¯্রােতের প্রচন্ড গতির ধাক্কায় পন্টুনের ফিঙ্গার(কব্জা) ভেঙ্গে যায়।
দ্রুত মেরিন বিভাগ কাজ শেষ করে ঘাটটি রাতেই চালু করে। এছাড়া গত ১৭ই সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ৪নম্বর ঘাটের সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগের পাকা সড়ক সম্পূর্ণ পদ্মায় বিলীন হলে ফেরী ভেড়া বন্ধ হয়ে যায়। ঘাট ও পন্টুন ব্যবস্থা চালু থাকলেও শুধুমাত্র সড়কের অভাবে ঘাটটি এখন পর্যন্ত চালু করা হয়নি।
তিনি আরো জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বর্তমানে ছোট-বড় ১৭টি ফেরী থাকলেও গত রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইঞ্জিন ও অন্যান্য সমস্যায় চার ফেরী বিকল হয়ে পড়লে সংকটে পড়ে কর্তৃপক্ষ। সকালে ইঞ্জিন সমস্যায় ফেরী কপোতি, হাসনা হেনা ও বিকেলে শাহ মখদুম বিকল হয়ে পড়ে।
এক সপ্তাহ ধরে কাবেরী ও গত ২২শে মার্চ থেকে মাধবীলতা পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে পড়ে আছে। বাকি ১২টি ফেরী চললেও দুর্বল ইঞ্জিন ও যান্ত্রিক সমস্যায় দিনে কোনরকম চললেও সন্ধ্যার পর থেকে রোরো ফেরী বীরশ্রেষ্ঠ হামীদুর রহমান ও মতিউর রহমান চলতে পারছেনা। ফলে দিনে ১১ থেকে ১২টি চললেও প্রায়দিন সন্ধ্যার পর কমে ১০টিতে নেমে আসে।
পারাপার মারাতœক ব্যাহত হওয়ায় শত শত গাড়ি আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রী ও চালক।
গতকাল দুপুরে ফেরী ঘাট থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ দুই সারিতে কিছু যাত্রীবাহি বাস ও পণ্যবাহি গাড়ি দেখা যায়। টার্মিনালের পর থেকে ক্যানাল ঘাট পর্যন্ত আরো প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা শুধু পণ্যবাহি ট্রাক, কার্ভাডভ্যান আটকে থাকতে দেখা যায়।
কয়েকজন ট্রাক চালক জানান, ঘাটে এসে ১২/১৩ ঘন্টা করে সিরিয়াল দিয়ে ফেরীর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দিনে সুষ্ঠভাবে সিরিয়াল দিয়ে ফেরী ঘাটে পৌছা গেলেও সন্ধ্যার পর কার আগে কে যাবে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, দিনের বেলায় পদ্মা নদী স্বাভাবিক থাকলেও রাতে কেমন যানি হিংস্র হয়ে উঠে। ¯্রােত বেড়ে গিয়ে নদীর পাড়, র্যাম ও পন্টুনের নিচ থেকে মাটি ধ্বসে যেতে থাকে। গত রবিবার সন্ধ্যায় এমন পরিস্থিতিতে প্রায় সবকটি ঘাট বন্ধের উপক্রম হয়।
গত সোমবার বিকেল পর্যন্ত চারটির মধ্যে ১, ২ ও ৩নম্বর ঘাট চালু থাকলেও শুধু সড়ক প্রস্তুত না হওয়ায় এখনো ৪ নম্বর ঘাট চালু করা সম্ভব হয়নি।