হেমন্ত তার শিশির ভেজা আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়, চুপে চুপে রং আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।থ কবি সুফিয়া কামালের লেখা ‘হেমন্তথ কবিতায় বাংলার হেমন্তের রূপ নিবিড়ভাবে ধরা দিয়েছে প্রকৃতিতে। পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল ধরা হলেও আশ্বিন-কার্তিকের দিকেই গুটি গুটি পায়ে শীতের বার্তা জানান দেয়। আজ সকালে রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গেলে এমনি দৃশ্যটি চোখে পড়ে। সারদিনের তীব্র গরম শেষে গভীর রাতে থেকে শুরু হচ্ছে হালকা হিমেল হাওয়া সঙ্গে নামছে কুয়াশা।
শীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার আবহমান সংস্কৃতি চর্চাও। শীত মানেই যেন উৎসব! কবিগান, জারিগান, সারিগান, পুতুলনাচ, সার্কাস, যাত্রাপালা, নাট্যমেলা আরও কত কী? সবগুলোরই আসর যেন পূর্ণতা পায় শীতের রাতে। মাঘী পূর্ণিমার উল্লাস সেও তো হিম সমীরণ থেকে বেরিয়ে আসা অনবদ্য নিসর্গের চিত্রপট। এতসব রূপকল্পের মাঝেও শিশির বিন্দুর নিঃশব্দ পতনের মতো প্রত্যাশা পৌষ মাসে কারো যেন সর্বনাশ না হয়।
হেমন্তর আগমনে অনেকটাই যেন শান্ত হয়ে যায় উত্তপ্ত প্রকৃতি। গ্রীষ্ম ও শীতের মধ্যে হেমন্ত অপরূপ এক সেতুবন্ধন। সকালের শিশিরভেজা ঘাস, ভোরে ও সন্ধ্যায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রকৃতি। শীতের আগাম সবজি খেতে কৃষকের হাজারো ব্যস্ততা। কার্তিকের মাঝামাঝি সময়েই সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত শীতল হাওয়া আর বিকেলে ঝরতে থাকা হাল্কা ধুসর কুয়াশা। ভোরে সূর্যের আলো মাখামাখি করে মাকড়সার জালে আটকে পড়ে এক অপরূপ আবেশ তৈরি করে বিন্দু বিন্দু শিশির কণা।
বর্তমানে পৃথিবীর আবহাওয়া এতোটাই বদলে গেছে যে, ঋতুর আচরণও পাল্টাতে শুরু করেছে। আঁচ করা কঠিন হয়ে পড়েছে গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীতের মতো প্রধান ঋতুর আচরণ। জলবায়ু বিপর্যয় প্রকৃতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এরপরেও বদলায় ঋতু। রামগঞ্জ উপজেলায় কয়েকদিন থেকে ভোরে দুর্বাঘাসের মাথায় শিশির বিন্দু ও সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে শীতের আগমনি বার্তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আলো হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক। দূর থেকে দেখলে মনে হয় প্রতিটি ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে। একদিকে যেমন শীতের আগমনে দেখা দিয়েছে কিছুটা স্বস্তি। গ্রামগঞ্জে শীতের সঙ্গে সঙ্গে সকালে ঘাসের ডগায় শিশির জমছে। কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশার সঙ্গে যেন উঁকি মারছে শীত। প্রকৃতিতে এখন এমনই ঋতুবদলের আয়োজন। দোকানিরা শীতের পোশাক উঠাতে শুরু করেছেন। পথের ধারে দেখা মিলছে শীতের পিঠা-পুলির দোকানের। প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষার ঘনঘটা শেষ করে কার্তিকের কোলজুড়ে এই শীত। এখন প্রতিটি সকালে দূর্বা ঘাসে কিংবা গাছের কচি পাতায় মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করে শিশির বিন্দু। কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয়। ক্যাম্পাসের দিগন্ত জোড়া মাঠ ও পিচঢালা পথে শীতের আমেজ বিরাজ করছে।
প্রকৃতির নিয়মে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে আশ্বিনের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছে হাল্কা শীতের আমেজ। সন্ধ্যা ও ভোরে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ আর হাল্কা ঠান্ডা বাতাসে শীতের আমেজ লক্ষ্য করার মতো। এখন যারা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন তারা দেখতে পারেন কুয়াশার বুকচিরে ভোরের সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য। গ্রামবাংলার নদ-নদী অববাহিকায় আর গ্রামীণ জনপদে সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীত এসেছে। সার্বজনীন দুর্গা পূজার উৎসবকে সামনে রেখে শীতের আগমনি বার্তায় সর্বত্র শীতের আমেজ ছড়িয়ে পরেছে। ঠিক তেমনি শরৎ শেষে হেমন্তের বর্তমান চেহারা যেন বলে দিচ্ছে ঘটেছে ঋতুর পালাক্রম।
সকালে হাঠতে আশা লোকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির কারণে এ বছর আগাম শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাত যত গভীর হয় কুয়াশা তত বাড়ে হালকা বৃষ্টির মতো টিপটিপ কুয়াশা ঝরতে থাকে। বিশেষ করে মাঠে ঘাসের ডগায় ও ধানের শীষে জমতে দেখা গেছে বিন্দু বিন্দু শিশির। উত্তর থেকে আসছে শীতল বাতাস। ভোরের প্রকৃতিতে হাত বাড়লেই ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। কয়েক দিন থেকে শেষ রাতে গায়ে কাঁথা চাপাচ্ছেন অনেকেই। যদিও দিনে গরমের তীব্রতা খুব একটা কমেনি। গ্রামগুলোতে পুরনো কাঁথা নতুন করে সেলাই করে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নারীরা। বাড়ির পাঁশে গাছের নিচে বসে রঙ-বেরঙের সুতো দিয়ে তারা তৈরি করছেন কাঁথা আর সেই সাথে জমে উঠেছে গল্প এবং আড্ডা। বাজারে ব্যবসায়িকরা লেপ তোষক তৈরী শুরু করেছে। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হতে না হতেই রঙ-বেরঙের অতিথি পাখির করতালে বিভিন্ন খাল, বিল ও জলাশয়গুলোতে নানা প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে।