
নয়া আলো ডেস্ক:- সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চলমান সব নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বহাল থাকছে। যে তারিখেই কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হোক না কেনো ইতিমধ্যে নিয়োগের জন্য জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীরা কোটার সুবিধা পাবেন। কারণ বিজ্ঞপ্তিতে কোটার কথা উল্লেখ আছে। আর সে অনুযায়ী আবেদনকারীর একটি অধিকার জন্মে। ফলে কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিলের বিষয়টি বেশ জটিল হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এদিকে শুধুমাত্র কোটায় নিয়োগের জন্য যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তারা আবেদনকারীদের ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে দ্রুততার সঙ্গে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে চিঠি জারি করেছে। তারা চাইছেন নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই কোটার নিয়োগ শেষ করে ফেলতে। তবে কোটা জটিলতা নিয়ে চলমান নিয়োগের গতি কোথাও কোথাও ধীরভাবে চালানো হচ্ছে। কি হয় সেটি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন কথা বলছেন চলমান নিয়োগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি কর্তৃপক্ষ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল সংসদে কোটা প্রথা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা পদ্ধতি যখন কেউ-ই চায় না, তখন এটা রাখার আর কোনো দরকার নেই। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ হবে। তবে পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর চাকরির ব্যাপারে অন্য ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
আন্দোলন শুরুর পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে সংস্কার কিভাবে করা যায় তা পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত ৯ এপ্রিল বিকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ায়ী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক মাস সময় নিয়ে বলেছিলেন ওই সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থান, ভিসির বাসভবন ভাঙচুর ইত্যাদি বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার কথা হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কমিটি এখনো গঠন সম্ভব হয়নি। একইদিনে কথা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, যতক্ষণ ভিন্নরূপ আদেশ জারি না হয় ততক্ষণ বিদ্যমান পদ্ধতি বহাল থাকারই নিয়ম।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সম্পূর্ণ কোটা তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। অনেক মন্ত্রীই চাচ্ছেন না সম্পূর্ণ কোটা তুলে দেয়া হোক। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন কিভাবে করা যাবে সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তেমন কোনো কাজও করছে না। সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার দপ্তর থেকে লিখিত কোন নির্দেশনা পেলে তখন তারা ব্যবস্থা নেবেন।
শেষমেষ কোটা বাতিল করা হলে বাতিলের তারিখের অব্যবহিতপূর্বের ঘোষণায় যারা আবেদন করবেন তাদের ক্ষেত্রে কোটার সুযোগ থেকে যাবে। একটি নিয়োগ সম্পন্ন করতে ক্ষেত্রবিশেষ এক থেকে দুই বছর সময় লাগে। বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষার সকল ধাপ সম্পন্ন করে ফলাফল প্রকাশ করতে দুই বছর সময় লেগে যায়। এখন চলমান ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের সম্ভাব্য সময় আগামী মে মাসের কোন এক সময়। কিন্তু এরমধ্যে কোটা বাতিল করা হলে এই বিসিএসের ক্ষেত্রে কিন্তু কোটা বহাল থেকে যাবে। আবার ৩৮তম বিসিএস (লিখিত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষামান) এবং ৩৯তম বিশেষ বিসিএসেও কোটা প্রথা বহাল থাকবে। ফলে এই তিনটি বিসিএস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোটা বাতিল কার্যকর করতে পারবে না সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। পক্ষান্তরে আলোচ্য কোটা বাতিল সংক্রান্ত গেজেটে যদি কার্যকর করার তারিখ পিছন থেকে নির্ধারণ করা হয় সেক্ষেত্রে কোটা বঞ্চিতরা আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ পাবেন। ফলে নতুন করে কোটা জটিলতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থেকে যাচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে সংবিধানে কোটা সংরক্ষণ ব্যবস্থাসহ বিদ্যমান সকল সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন সাধারণভাবে যে তারিখে গেজেট প্রকাশ হয় সে তারিখ থেকে তা কার্যকর বলে বিবেচিত হয় যদি ভিন্নরূপ তারিখ নির্ধারণ না করা হয়।
সংবিধানের ২৯ (৩) (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারে মর্মে অনুশাসন প্রদান করা হয়েছে। সংবিধানের উপরিউক্ত অনুশাসনের আলোকে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশকে অগ্রগতির মূল স্রোতধারায় আনার জন্য স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোট পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে ৫৫ শতাংশ কোটা বহাল রয়েছে।