মোঃ জহির রায়হান, সিরাজগঞ্জ থেকেঃ- সিরাজগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপিরা) চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলন করায় টানা ২২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বহুল আলোচিত কমিউনিটি ক্লিনিক। এতে ভেঙে পড়েছে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকা সেবা পেতে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ নানা বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটছেন।
এদিকে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২০ জানুয়ারি সিএইচসিপিরা অনশন শুরু করায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৪৪, বেলকুচিতে ৩৭,শাহজাদপুরে ৫২, কাজীপুরে ৫১, কামারখন্দে ১৬, তাড়াশে ২৫, রায়গঞ্জে ৪৭, উল্লাপাড়ায় ৬৫, চৌহালীতে ১৫টিসহ ৯টি উপজেলার ৩৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জনের অফিস সূত্রে জানা গেছে।
সিভিল অফিস সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জে জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সরকার জনবল, চিকিৎসক নিয়োগ ও ওষুধ সরবরাহ শুরু করে। এরপর ক্লিনিকগুলোতে শুরু হয় স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২০ জানুয়ারি থেকে জেলার ৯টি উপজেলার
বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ক্লিনিক বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেন। ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের শত শত রোগী পড়েছেন চরম বিপাকে।
কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা নলকা ইউনিয়নের সেনগাতি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আলী আসগর , সোহরাব,হোসেন ও মনিরা বেগম জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে। আমার ছেলের জ্বর হয়েছিল চিকিৎসা না পাওয়ায় এখন নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। সে কারণে জেলা সদরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেছি।
বৃদ্ধা মনিজা বেওয়া বলেন, কয়েকদিন হলো ঠান্ডা জ্বরে ভুগছি, শুনেছি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আন্দোলন শুরু করেছেন। তাই ক্লিনিকগুলো বন্ধ। এ কারণে ৪০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে জেলা শহরের সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের অ্যাসোশিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারণ স¤পাদক শিফাত আহমেদ খান মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সিরাজগঞ্জের সিএইচসিপিরা এখন ঢাকায় অবস্থান করায় সব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ রয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরব না।
শিফাত আহমেদ খান আরও জানান, এর আগে ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ রেখে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সামনে অবস্থান নেন সিএইচসিপিরা। ২৩ ও ২৪ তারিখেও কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রেখে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন তারা। ২৭ তারিখ থেকে অদ্যবধি সিরাজগঞ্জের সিএইচসিপিরা ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য সেবায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. কাজী শামিম হোসেন জানান, ভোগান্তি লাঘবে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে। তবে উপজেলা পর্যায়ের সকল চিকিৎসকদের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের চিকিৎসা দেবার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।