
নজরুল ইসলাম চৌধুরীঃ
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রাথমিক পর্যায়ের সরকারী প্রাথমিক কিংবা কিন্ডার গার্টেন, মধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কিছু অসাধু শিক্ষকের বই বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বই বাণিজ্যের পেছনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষসহ কিছু অসাধু সহকারী শিক্ষকদের হাত রয়েছে। বর্তমান সরকার স্কুল ও মাদ্রাসার সকল শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক ব্যাকরণ বইসহ বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। সরকারের প্রেরণকৃত বই ছাড়া অন্য কোনো গাইড বই অনুসরন করতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ কিংবা নির্দেশ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও সরকারের এ আদেশ অমান্য করে নিজেদের পকেটে কমিশনের টাকা ভর্তি করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসাধু ও লোভী শিক্ষক মহল স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ নোট বুক ও গাইড বই কিনতে নির্দেশ দিচ্ছে বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের অভিযোগ। মোটা অংকের কমিশন পাওয়ার জন্য এসকল শিক্ষক কিছু বাজে প্রকাশনীর নিম্ন মানের বই কিনতে ছাত্র ছাত্রীদের নির্দেশ করেছেন। এ নিম্ন মানের গাইড বই পড়ে একদিকে শিক্ষার্থীরা কিছু শিখতেতো পারছেইনা অন্যদিকে ঐসব গাইড বই প্রকাশনীর কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের কমিশন দেয়াতে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে লাইব্রেরী মালিকরা চওড়া দাম নিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পুর্বে যেসব গাইড বই কিনতে ৪০ কিংবা ৫০ শতাংশ মুল্য ছাড় পেতো এখন শিক্ষকদের কমিশন দেয়ায় শিক্ষার্থীরা ছাড় পাচ্ছে নাম মাত্র। সম্প্রতি লায়লা আক্তার নামক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর এক শিশু শিক্ষার্থীর মা ছাগলনাইয়া পৌর শহরের একটি লাইব্রেরীতে দিগন্ত নামক গাইড বই চাইলে লাইব্রেরী মালিক জিজ্ঞেস করেন এটা ভালো প্রকাশনীর গাইড নয় এটা কেনো নিতে চাচ্ছেন? মহিলা বললেন, আমার মেয়ের স্কুলের শিক্ষকেরা সকল শিক্ষার্থীকেই এটা নিতে বলেছে। নিজের নাম কিংবা স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কিছু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানান, শিক্ষকদের নির্দেশে নির্দিষ্ট গাইন কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে লাইব্রেরী মালিকরাও স্বীকার করেছেন শিক্ষকদের কমিশন দেয়ায় এসব গাইড বই বিক্রি করতে হচ্ছে চওড়া মূল্যে। শুধু কমিশন নিয়েও কিছু শিক্ষকের পকেট ভারি হচ্ছেনা তাই অধিক লাভের জন্য কিছু শিক্ষক নিজেরাই মানহীন গাইড বই বিক্রি করছে এমন অভিযোগও পাওয়াগেছে। ছাগলনাইয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম আলী জিন্নাহ ও ফেনী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বাঁশপাড়া আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, গাইড বই কিনতে বলাটাও একজন শিক্ষকের অপরাদ, যদি কোনো স্কুলের কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে শিক্ষক সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত সহায়ক বই বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজী ব্যাকরণ বইও কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। শিক্ষক সমিতির কর্তৃপক্ষ প্রকাশনী মালিকদের নিকট থেকে কমিশন নিয়ে সহায়ক বই গুলো নেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে এমন অভিযোগও পাওয়াগেছে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে প্রয়োজন নেই এমন গাইড বই এবং সহায়ক বই কিনতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিচ্ছেন শিক্ষকবৃন্দ।