নয়া আলো ডেস্ক- রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলায় জড়িত দুই জঙ্গি খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের লাশ চায় তাদের পরিবার।
তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, পুলিশ লাশ দিলে বাড়ির কাছে কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বুধবার বিকালে টেলিফোনে কথা হয় জঙ্গি উজ্জ্বলের বাবা বগুড়ার ধুনটের বানিয়াজান চল্লিশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বদিউজ্জামানের সঙ্গে।
তিনি জানান, তার ছেলে স্থানীয় স্কুল ও কলেজে পড়েছে। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে মাস্টার্সে ভর্তিও হয়েছিল। পরে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন মাদারী মাদবর কেজি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেয়।
উজ্জ্বল কীভাবে ও কার সহযোগিতায় জঙ্গি হয়েছে তা তাদের জানা নেই।
বদিউজ্জামান বলেন, উজ্জ্বল বাড়িতে আসলে সবাইকে পর্দা করতে এবং ঠিকমত নামাজ আদায় করতে পরামর্শ দিতো। আমাকে নামাজ পড়ার জন্য অনুরোধ করতো। গত ডিসেম্বরে বাড়িতে এসেছিল। তাবলিগ জামায়াতের চিল্লায় যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর পরিবারের কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি
তিনি আরও জানান, উজ্জ্বল কখনও রাজনীতি পছন্দ করতো না। ঢাকায় হামলার পর ৪ জুলাই টেলিভিশনে তিনি তার ছেলের লাশের ছবি দেখতে পান।
তিনি জানান, ধুনট থানার ওসি (তদন্ত) পিএন সরকার গত ৫ জুলাই তার অপর ছেলে আসাদুল ইসলামসহ তাকে ঢাকায় পুলিশের বড় কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে উজ্জ্বলের লেখাপড়া ও অন্যান্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
উজ্জ্বলের লাশ সনাক্তে তাদের দু’জনের শরীর থেকে রক্ত নেয়া হয়েছে। তবে লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেছেন, উজ্জ্বলের লাশ দাফনের জন্য বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। তাই তারা লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ধুনটের ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল জানান, ৬-৭ মাস আগে উজ্জ্বলের সঙ্গে গ্রামে দেখা হয়েছিল। আহলে হাদিসে বিশ্বাসী উজ্জ্বল শিক্ষকতার আড়ালে এতবড় জঙ্গি হয়েছিল তা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।
বগুড়ার শাজাহানপুরের দক্ষিণপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবুল হোসেনের ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম পায়েল। পায়েল স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাশ করে। এরপর সহপাঠী বন্ধু পাশের কামারপাড়া গ্রামের আবদুল হাকিম তাকে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে ঢাকায় নিয়ে যায়।
পায়েলের বাবা আবুল হোসেন ও মা পিয়ারা বেগম জানান, পায়েল উচ্চ শিক্ষার জন্য বন্ধু হাকিমের সাথে ঢাকায় যায়। বাড়িতে কম আসতো। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে হাকিমের সাথে বাড়িতে এসেছিল। এরপর তার সঙ্গে পরিবারের কারও যোগাযোগ ছিল না।
গত ৫ জুলাই বগুড়া ডিবি পুলিশ আবুল হোসেন ও পিয়ারা বেগমকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা পায়েল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ ও লাশ সনাক্তের জন্য দুজনের শরীর থেকে রক্ত নেয়। তারাও পায়েলের লাশ দেখতে পারেননি।
পায়েলের বোন হোসনে আরা জানান, তার ভাই বন্ধু হাকিমের কারণে জঙ্গি হয়েছে। সে যত অপরাধই করুক না কেনো, আমরা তার লাশ দাফনের জন্য ফেরত চাই। পরিবারের সবাই লাশের অপেক্ষায় আছি।