শারীরিক প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয়ার নাম করে ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোবারক হোসেন (শাহীন ফকির)’কে গত ২৫ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্তকৃত করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আবু জাফর রিপন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে সাময়িকক ভাবে বরখাস্ত করা হয়।
একই অভিযোগে নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের আরও ২ সংরক্ষিত মহিলা সদস্য’কেও বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও তাদের’কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কারণ দর্শনো নোটিশ দেয়া হয়েছিল।
প্রজ্ঞাপন পত্রের আলোকে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ ইউপি সদস্য মোবারক (শাহিন), সালমা ও মনোয়ারা প্রতিবন্ধী ইলিয়াস তালুকদার সহ ১৫ থেকে ২০ জন প্রতিবন্ধীর টাকা আত্মসাত করে।
এব্যাপারে তদন্তকালে ৮জন প্রতিবন্ধীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪ (৪) (খ) ও (ঘ) ধারায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, বরখাস্তকৃত মোবারক হোসেন শাহিন ইউনয়ন পরিষদের বিভিন্ন কর্মকান্ড করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন বরখাস্তকৃত মেম্বার মোবারক শাহিনের খুঁটির জোর কোয়ায় ?।
এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী ইলিয়াস তালুকদার বলেন, ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোবারক হোসেন শাহীন ফকির সহ ৩ মেম্বার আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতার কথা বলে টাকা নিয়েছে। এরপর সরকারী কার্ড থেকেও ৭ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে শুনি আমার ছাড়াও অনেকের থেকে তারা টাকা নিয়েছে।
এব্যাপারে আমি লিখিত অভিযোগ করি। তদন্তকালে আমার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তারা বরখাস্তও হয়। কিন্তু বরখাস্ত হওয়ার পরেও মোবারক হোসেন শাহীন ফকির ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বেনামে করছে। বিভিন্ন সময় এলাকার হতদরিদ্রদের নামের তালিকা দাখিল করে আসছে।
এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ব্যাপারে ১নং ওয়ার্ড বরখাস্তকৃত মেম্বার মোবারক হোসেন (শাহীন) বলেন, বরখাস্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছি। রায় আমাদের পক্ষে হয়েছে। এখনও কাগজ হাতে পাইনি।
আমরা সাধারন জনগনের মত পরিষদে যাই। আমার এলাকার কেউ যদি কোন বিষয়ে না বুঝে তবে আমি বুঝিয়ে দেই। কে কি পাওয়ার যোগ্য চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেই।
কোন প্রকল্পে আমার নাম নেই। কোন তালিকা আমি দেইনা। এব্যাপারে নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বেপারী বলেন, বরখাস্তকৃত মেম্বারগন নিজেরা পরিষদের কোন কাজ করেনা।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে ঐ মেম্বারগন পরামর্শ বা এলাকার কাজে সহায়তা করতেই পারেন। এটা দোষের ব্যাপার নয়।
তবে তাদের দ্বারা সরাসরি কোন কাজ করতে দেয়া হয়না। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে নাওডোবা ইউনিয়নের ৮ জন প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদানে অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়।
এরপর বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন ও জাজিরা উপজেলা প্রশাসন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে উক্ত ৩জন মেম্বারের বিরুদ্ধে সত্যতা প্রমাণিত হলে বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবর রিপোর্ট পাঠানো হলে তাদের বরখাস্ত করা হয়