মুফিজুর রহমান নাহিদ, সিলেট প্রতিনিধিঃ- নাইট গার্ডকে একটি রুমে তালাবন্দি করে সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে রোববার দিবাগত রাতে ডাকাতির ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাকাতিকালে ১০/১২ জনের মুখোশধারী ডাকাত দল ইউপি সচিবের কক্ষের তালা ভেঙ্গে ১টি প্রিন্টার ও জরুরী ফাইল-পত্র লুট করে গিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনায় সংবাদ পেয়ে সোমবার সকালে বিশ্বনাথ থানার এসআই জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে ইউপি সচিব মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীকে নিজের স্বীকারোক্তিতে ওই রাতে কর্তব্যরত নাইট গার্ড নূরুল আমীন জানান, রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত ১০/১২ জনের মুখোশধারী একদল ডাকাত তাকে (নূরুল) ঘিরে সচিবের রুমের চাবি চায়। তিনি চাবি না দেওয়ায়, সেসময় ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে বন্দি করার উদ্দেশ্যে একটি রুমের দিকে নিয়ে যায়। এসময় নাইট গার্ড নূরুল আমীনের হাত লেগে মাফলার নিয়ে মুখোশ পরিহিত লামাকাজী ইউপির ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল কালামের মুখ সামনে বের হয়ে আসে। এরপর নূরুল আমীনকে কমপ্লেক্সের একটি রুমে তালাবন্দি করে রেখে মেম্বার আবুল কালামের নেতৃত্বে ডাকাত দলের সদস্যরা ইউপি সচিবের কক্ষের তালা ভাঙ্গে। সোমবার সকালে কমপ্লেক্সের এক চৌকিদার আসার পর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান নূরুল আমীন। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার-সচিব আসেন। এসময় ১টি প্রিন্টার ও জরুরী ফাইল-পত্র লুটপাঠের সত্যতাও বেরিয়ে আসেন।
ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে ডাকাতির ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর জের ধরে যে কোন সময় এলাকায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংগঠিত হওয়ার আশংঙ্কাও রয়েছে বলে জানা গেছে। ডাকাতির প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে এক বিশাল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কয়েক শতাধিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, অবিলম্বে বহিস্কৃত ইউপি মেম্বার আবুল কালাম’সহ লামাকাজী ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে সর্বস্থরের এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে ‘জনতার আদালতে’ এর বিচার করবেন।
লামাকাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রইছ আলীর সভাপতিত্বে ও ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়ার পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন লামাকাজী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রইছ উদ্দিন মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আফরোজ বক্স খোকন, লামাকাজী বাজার মসজিদের মুতায়াল্লী আবদুল মতিন, বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, এলাকার মুরব্বী বাটল মিয়া, তকদ্দুছ আলী, আনর মিয়া, জসিম উদ্দিন, নূরুজ আলী, সমুজ আলী, চান মিয়া, ফরিদ মিয়া, মোঃ শাহজাহান, সাবেক ইউপি মেম্বার গেদা মিয়া, ছুরুক মিয়া, রফিক মিয়া, বর্তমান মেম্বার হেলাল আহমদ, কাঞ্চন চক্রবর্তী, ফয়ছল আহমদ, চমক আলী, মকসুস আহমদ, এনামুল হক এনাম, মোঃ নুরুজ্জামান, গয়াছ খান, সেবিকা নাথ, ফাতেমা বেগম, কাঞ্চন মালা।
লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে ডাকাতির ঘটনায় এলাকাবাসী বহিস্কৃত ইউপি মেম্বার আবুল কালাম’ তীব্র ক্ষুদ্ধ রয়েছেন। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় এনিয়ে যেকোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংগঠিত হওয়ারও আশাংঙ্কা রয়েছেন। তবে আমি এলাকাবাসী শান্ত থাকার আহবান করে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে এঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
ঘটনার সাথে বহিস্কৃত ইউপি মেম্বার আবুল কালাম জড়িত বলে পুলিশের কাছে গাইট গার্ড নুরুল আমীনের প্রদান করা বক্তব্য ও পুলিশ কর্তৃক ঘটনাস্থ পরিদর্শনের সত্যতা স্বীকার করেছেন বিশ্বনাথ থানার এসআই জহিরুল ইসলাম।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।