
উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার অবহেলিত সেই মাগুরখালী। বর্তমান সরকারের মহতি উদ্যোগে বদলে গেছে আগের সেই চিত্র। যোগাযোগ থেকে শুরু করে পানি পরিশোধন ও সরবরাহ প্রকল্প স্থাপন, মন্দির-মসজিদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎসহ প্রায় সমস্ত সেক্টরে গোটা ইউনিয়নে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ডাউন মাগুরখালী এখন টাউনে পরিণত হতে যাচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধান সুত্রে জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ইউনিয়ন ছিলো ১৪ নম্বর মাগুরখালী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৭/১ পোল্ডার আওতাধীন মাগুরখালী ইউনিয়নাধীন শিবনগর, পুর্বপাতিবুনিয়া, হোগলাবুনিয়া, পশ্চিমপাতিবুনিয়া, ঝরঝরিয়া, কাঠালিয়া, ব্রহ্মারবেড়, বৈঠাহারা, শেখেরট্যাক, মহাদেবপুর, মাগুরখালী, কোড়াকাটা, খোরেরাবাদ, হেতাইলবুনিয়া, চিত্রামারী, পারমাগুরখালী, গজালীয়া, আলাদিপুর ও নাথেরকুল গ্রাম মিলে প্রায় ১৮হাজার লোকের বসবাস। শহর থেকে এলাকাটি প্রত্যন্ত হওয়াতে এ যাবৎ কাল তেমন কোন উন্নয়নের ছোয়া পড়েনি এখানে। চলাচলের ভালো কোন রাস্তা না থাকায় এলাকার মানুষ সীমাহিন দুর্ভোগ অতিক্রম করে আসছে এযাবতকাল।
এখানকার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিলো নৌকা। নৌকা যোগে তারা গ্রামের এবাড়ি ওবাড়ি বা শহরে যাওয়া আসা করতো। রাস্তাঘাট যা একটু আধটু ছিলো তা বর্ষাকালে হাটু কাঁদা হয়ে যেতো। ফলে শহরের সাথে মাগুরখালী এলাকার মানুষের যোগাযোগ একেবারই কম ছিলো। সেই সময় অনেক অসুস্থ্য রোগীকে অকালে প্রাণ হারাতেও হয়েছে চিকিৎসার অভাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এক সময় মাগুরখালীর মানুষ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে মাগুরখালীতে প্রায় সব সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। মাগুরখালী ইউনিয়নে ছোট বড় মিলে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। যার মধ্যে ৯০ কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং ও ইটের সোলিং দ্বারা উন্নয়ন হয়েছে। প্রায় আড়াই’শ কোটি টাকার উন্নয়নমুলক কাজ মাগুরখালীতে বাস্তবায়নের পথে।
মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা বলেন, সরকারের উন্নয়নমুলক কর্মসুচির সুফল পুরোপুরিভাবেই পাচ্ছেন মাগুরখালীবাসী। এ উন্নয়ন কর্মকান্ড সুসম্পন্ন করতে প্রত্যক্ষভাবে খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ স্যার যেভাবে সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেছেন তাতে মাগুরখালীবাসী তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে। তিনি (এমপি) মাগুরখালী ইউনিয়নকে উন্নয়নের রোলমডেল বাস্তবায়ন করতে মেঘা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এমপি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শহরের সাথে প্রত্যন্ত এই অঞ্চলটির সেতু বন্ধন হতে যাচ্ছে।
শিবনগর-চটপটিয়া ঘাটে গ্যাংরাইল নদীর উপর ৩১ কোটি ৩১লাখ টাকা বরাদ্দে ৩১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রীজ নির্মান প্রায় শেষের পথে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে সেতুটি। এটা হলে দুই জেলা শহর তথা খুলনা ও সাতক্ষীরার মানুষ ডুমুরিয়া ভায়া কপিলমুনি হয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়া আমুড়বুনিয়া, চিত্রামারী ও পশ্চিম পাতিবুনিয়ায় গ্রামীণ ছোট খালের উপর কালভার্ট নির্মান হয়েছে। তিনি বলেন, মাগুরখালীর প্রায় অলিগলি পাকাকরণ কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে মাগুরখালী হতে কাঞ্চননগর সড়ক, আলাদিপুর থেকে শিবনগর, কাঠালিয়া, মাদারতলা, খাগড়াবুনিয়া সড়ক, বৈঠাহারা হতে খোরেরাবাদ সড়ক এবং চিত্রামারী হতে গজালিয়া কালভার্ট অভিমুখে সড়ক পাকাকরণ হয়েছে। এছাড়া এলজিএসপি’র ১% প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০টির অধিক গ্রামীন সড়ক, ১০০টির অধিক বাড়ীর রাস্তায় ইটের সোলিং নির্মাণ হয়েছে। মাগুরখালী ইউনিয়নের ৪৪টি মন্দির ও ১০টি মসজিদে টিআর প্রকল্পের টাকায় উন্নয়ন হয়েছে। ১৯৭১ সালে চুকনগর গনহত্যায় মাগুরখালী ইউনিয়নের নিহত শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ স্মৃতিসৌধ ও মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাইসাওয়ার সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পানি পরিশোধন ও সরবরাহ প্রকল্প এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চন্ডীপুর ও শিবনগরে আরো ২টি একই প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এখন অত্র এলাকার মানুষের আর বিশুদ্ধ পানির অভাব নেই। মাগুরখালী এলাকার প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয় মাগুরখালীর মধ্যে জাইকা সড়ক হয়েছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন হয়েছে। সবমিলে প্রায় আড়াশ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়নের পথে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়ন আর অবহেলিত নেই। সরকারের সারাদেশের উন্নয়নের ছোয়া মাগুরখালীতেও পৌঁছে গেছে। একটা সময় সেখানে রাস্তাঘাটসহ উন্নয়নমুলক কিছুই ছিলো না। এখন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আমরা মাগুরখালীসহ ডুমুরিয়া উপজেলার প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন করতে পেরেছি। মাগুরখালী আর ডাউন নয় এখন টাউনে পরিণত হয়েছে। চটচটিয়া ব্রীজ চালু হলে মানুষ খুব সহজেই পাইকগাছা ও খুলনা শহরে পৌঁছাতে পারবে। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।