
গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করতে এসে প্রথমা স্ত্রীর বাঁধা টপকিয়ে অবশেষে দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন বর প্রতাপ বালা। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বড়ডাঙ্গা গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও সংশি¬ষ্ট সুত্রে জানা যায়, খুলনার দাকোপ উপজেলার লক্ষীখোলা গ্রামের অবনী ভুষণ বালার ছেলে এবং বটিয়াঘাটা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত প্রতাপ বালা(৩২) প্রেমজ সম্পর্কের মাধ্যমে চালনা এলাকার সুশান্ত সরদারের মেয়ে খুলনা নগরীতে বসবাসকারি ও একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের ইউনিট ম্যানেজার বীনা সরদার(২৫) কে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে সনাতন ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী বিবাহ করেন। পরবর্তিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে বিয়ের দলিল সম্পাদনের লক্ষ্যে গত ১৮ মার্চ ২০২০ ইং তারিখে খুলনার বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক এ্যাডভোকেট এমদাদুল হকের কার্যালয় হতে তাদের হিন্দু বিবাহের এ্যাফিডেভিট সম্পন্ন করেন। বিবাহকালীন প্রতাপ বালার কর্মস্থল ছিলো বাগেরহাট জেলায়। অপরদিকে বীনা সরদারের কর্মস্থল খুলনা নগরীতে। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার দেনারাবাদ লেন-২ এ জনৈক কবির চেয়ারম্যানের বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে উঠেন এবং বসবাস শুরু করেন।
এক পর্যায়ে স্বামী প্রতাপ বালা চলতি বছরের ফেরুয়ারী মাস পর্যন্ত স্ত্রী বীনা সরদারের সঙ্গে সকল প্রকার যোগাযোগ হঠাৎ বন্ধ করে দিয়ে বটিয়াঘাটা সদরে মেস ভাড়া করে থাকা শুরু করেন এবং পুনরায় বিয়ে করতে কণে দেখা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ডুমুরিয়ার এক মাদ্রাসা শিক্ষক বড়ডাঙ্গা গ্রামের দিপংকর মন্ডলের কলেজ পড়–য়া মেয়ে মৌসুমী মন্ডলকে পছন্দ করে গত ৩ মে তারিখে কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন।
শনিবার বর প্রতাপ মন্ডল শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমীকে মহা ধুমধামের সাথে বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রথমা স্ত্রী বীনা সরদার ডুমুরিয়া থানা ও উপজেলা প্রশাসনের দারস্ত হয়ে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে অভিযোগ জানান। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিয়ে বন্দের আইনগত কোন সুযোগ না থাকায় লগডাউনে সরকারি বিধি নিষেধ ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সর্বোচ্চ ১০ জনের বেশি লোক সমাগম না করতে কণের বাবা দিপংকর মন্ডলকে নির্দেশ দেন। এদিকে ওই বিয়ে ঠেকাতে বীনা সরদার তার সহযোগিদের সাথে নিয়ে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কৈয়া এলাকায় ওঁৎ পেতে থাকেন বিয়ে করতে আসার পথে স্বামী প্রতাপ বালাকে আটকাতে। বিষয়টি জানা জানি হয়ে গেলে বর বরবেশ ছেড়ে প্যান্ট-শার্ট পরেন। এরপর বরসহ যাত্রীরা গোপনে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে বড়ডাঙ্গায় বিয়ে বাড়িতে ঢোকার পথিমধ্যে প্রথমা স্ত্রী বীনা উপস্থিত হন। এরপর তার স্বামী প্রতাপকে গাড়ি থেকে টেনে হেচড়ে বের করতেই প্রতাপ দৌড়ে বিয়ে বাড়ি পালিয়ে যায়। এরপর সেখানে যেয়ে দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে বসে সে। এসময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা দেখা দিলে খবর পেয়ে থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিয়ে বাড়ির ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীনা সরদার বলেন, আমরা পরস্পরকে ভালোবেসে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে এবং নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে বিয়ের দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বিয়ে করেছি। অথচ গত প্রায় তিন মাস যাবত প্রতাপ আমার বাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে এবং আমাকে এড়িয়ে চলে। পুনরায় গোপনে আবার একটি মেয়েকে বিয়ে করছে। তাই স্ত্রী হিসেবে আমি এ বিয়ে মানতে পারিনা বলে ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। তিনি আরো জানান, বিয়ে বাড়ির সামনে বরযাত্রী হিসেবে আসা কয়েকজন তাকে ও তার সহযোগিদের লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে প্রতাপ বালা বলেন, বীনা সরদারের সাথে আমার কোন বৈবাহিক সম্পর্ক নেই। সে বিয়ের ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে নিজেকে আমার স্ত্রী হিসেবে দাবী করছে।
এ বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওবাইদুর রহমান জানান, বীণা সরদারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করতে একজন অফিসারকে দায়ীত্ব দেয়া হয়েছিলো। ইতোমধ্যে বীনা সরদার প্রতাপ বালার বিরুদ্ধে আদালতে যৌতুক আইনে একটি মামলা করেছেন। যাহা বর্তমানে চলমান রয়েছে। যে কারণে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে উনাকে (বীনাকে) আদালতে যেতে বলা হয়েছে।