স্বয়ং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এর কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করলেন সরকারি অফিসের কর্মচারীরা। মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে।
জমি রেজিস্ট্রি করতে গেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রফেলের কাছে এ ঘুষ চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে ওই আইন কর্মকর্তার ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করেও ছেড়েছেন ওই কর্মচারীরা। বিএম রফেল এ ব্যাপারে তার ফেসবুক পেজে পোস্ট দিলে তা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এদিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রফেল (Bm Rafell) তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেটা হুবহু তুলে ধরা হলো, “এসেছিলাম কুষ্টিয়া সাব রেজিস্টার অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে। এসে দেখলাম ঘুষ বাণিজ্য কাকে বলে। করনিক মুকুল ও পিয়ন আক্কাস প্রকাশ্যে এিশ হাজার টাকা ঘুষ চাই। নিজের পরিচয় দেয়ার পরও বলে এটা এখানকার নিয়ম। পরে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজটি শেষ করলাম ।দেখার কেউ নাই।”
বিএম আব্দুর রফেল জানান, মঙ্গলবার বিকেলে একটি দলিল সম্পাদন করার জন্য তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহের কার্যালয়ে যান। জমি বন্ধুক রেখে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য মূলত রেজিস্ট্রি করতে যান। সেখানে তার সাথে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বড় ভাই উপস্থিত ছিলেন। দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর অফিসের ক্লার্ক মুকুল ও পিয়ন আক্কাস তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
এ সময় ওই আইন কর্মকর্তা দাবীকৃত টাকার বিপরীতে রশিদ দাবি করেন। রেজিস্ট্রার অফিসের ওই দুই কর্মচারী রশিদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বি এম রফেল নিজের পরিচয় পত্র দেখান। এ সময় ওই দুই কর্মচারী ঘুষের পরিমান ৫হাজার টাকা কমিয়ে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। তারা বলেন, এটা এখানকার নিয়ম। বিএম রফেল এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রেজিস্ট্রি অফিস ত্যাগ করলে, তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করে।
বি এম রফেল বলেন, এখানে যে কি ভোগান্তি, তা নিজে প্রত্যক্ষ করলাম আজ। বাংলাদেশের এই আইন কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে পাবলিক কি ভাবে ভোগান্তির শিকার হয় তা সহজেই বোঝা যায়। তখন সাউন্ড এসেছে যে, নেতাদেরও নাকি টাকা পয়সা দিতে হয়।,
পরে বিএম রফেল সাংবাদিকদের বলেন, একটা সরকারি অফিস। আমিও একজন কর্মকর্তা। পরিচয় দেওয়ার পরও তারা টাকা দাবি করে। এটা কি কেউ দেখার নেয়। আমি খুবই মর্মাহত বিষয়টি নিয়ে। এটার একটা সুরাহ হওয়া প্রয়োজন। আমি পরিচয় দিলে নুন্যতম সম্মানও উনি দেখাননি।
এদিকে ঘুষের বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোষ্ট দেন বিএম আব্দুর রফেল। এরপর বিষয়টি নিয়ে সাব রেজিস্ট্রার তার অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও দলিল লেখককে তলব করে ঘটনাটি মিটমাট করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এর পর বিএম আব্দুর রফেলকে ফোন দিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। বারবার তাকে ফোন দিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পরে তিনি টাকা ফেরত না নিয়ে ঢাকা চলে যান।
রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সূত্রে জানায়, এটা ব্যাংকের মর্গেজ দলিল ছিলো। ব্যাংক কর্মকর্তারা বিয়টি দেখভালো করে। এটার টাকা নেয়ার কথা নয়। তারপরও অফিসের কয়েকজন স্টাফ টাকা দাবি করে। এটার সাথে দলিল লেখকদের কোন সম্পর্ক নেই।
কুষ্টিয়ার সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ বলেন, বিএম আব্দুর রফেল আমার দপ্তরে এসেছিলেন জমি রেজিস্ট্রি করতে। উনার কাজ দ্রত করে দিই। তার নিকট থেকে কয়েকজন টাকা চেয়েছিলো বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু আমি জানি না।