তনুর কাহিনী
-আমিনা আক্তার প্রিয়া
অনেকদিন আগে এক বনে এক চপলা চঞ্চলা হরিনী বাস করতো। একদিন সন্ধ্যায় সে আনমনে বনের পথ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সে দেখলো তারই পরিচিত একদল শিকারী বাঘ তার দিকে ধেয়ে আসছে। নেকড়ে বাঘদের মনোভাব বুঝতে পেরে প্রাণভরে সে ছুটতে লাগলো। নেকড়েগুলো ও তার পেছনে দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু হায়! ট্টেনিং প্রাপ্ত এই নেকড়েদের সাথে কি আর ওর মতো ছোট্ট হরিনী পেরে উঠতে পারে?
তাই কিছুক্ষনের মধ্যেই নেকড়েগুলো তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো। ভয়ে সে এতটুকু হয়ে গেলো। বারবার সে তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলো। কিন্তু না- তার করুন আর্তনাদ নেকড়েদের কানে পৌছায়নি। ভীত হরিনীর মুখটা তাদের মনে এতটুকু করুনা জাগাতে পারেনি। তারা হরিনীকে পেয়ে মেতে উঠলো আদিম হিং¯্রতায়। নেকড়েগুলো একের পর এক থাবা দিয়ে তার ছোট্ট শরীরটাকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেললো। মহানন্দে তারা খুবল খুবলে খেল হরিনীটাকে। তারপর খিদে মিটিয়ে হরিণীর নিথর দেহ দেহটা জংগলে ফেলে তারা হেলেদুলে চলে গেলো। এদিকে মেয়ে বাড়ি ফিরছে না দেখে চিন্তিত বাবা মেয়েকে খুঁজতে বের হলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর বাবার চোখ আটকে গেলো রাস্তার ধারে।
তার প্রিয় কণ্যার সোনালি পশম ছড়িয়ে রয়েছে চারপাশে। বিপদের আশংকায় তার মেরুদন্ড বেয়ে একটা শীতল ¯্রােত নেমে গেলো। পাশের ঝোপে আবছা কি যেন দেখা যাচ্ছে। শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে বাবা এগিয়ে গেলেন ঝোপটার দিকে। কিন্তু একি! এই তো তার মেয়ে নিথর দেহ লুটিয়ে আছে। কাটা গলা দিয়ে তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে এখনো। খোলা চোখ দুটোতে প্রচন্ড ঘৃণার চাপ স্পষ্ট হয়ে আছে। এঘটনায় পুরো বনে আতংক সৃষ্টি করলো। বিক্ষোভে ফেটে পড়লো বনের সমস্ত প্রাণী। এর আগেও আরো অনেক হরিনী বাঘদের খাবারে পরিণত হয়েছে। তারা আর কোন হরিণীকে হারাতে চায় না। তাই তারা সবাই এই পৈশাচিক হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামলো। দিনের পর দিন তারা আন্দোলন করতে থাকলো। তারা রাতের পর রাত জাগলো শুধু ন্যায় বিচারের আশায়। কিন্তু বন কমিটি থেকে কেউ এই ব্যাপারে কোন কথা বললো না।
উল্টো নেকড়েদের রক্ষা করতে শিয়াল পন্ডিতরা সবাই এক হয়ে ফন্দী আটলো। তারা রটাতে লাগলো যে হরিণীটা মনের আনন্দে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ পথ হারিয়ে গভীর বনে চলে যায়। অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফেটে সে মারা যায়। শুধু বাঘদের দোষারোপ করা কেন হে বাপু! উপায় না পেয়ে বনের নিরীহ প্রাণিগুলো সিংহ রাজার কাছে গেলো। কিন্তু একি সিংহের যে ঘুমি ভাঙছে না। সিংহের ঘুম ভাংগানোর জন্যে এক সাহসী ইদুঁর সিংহের নাকের কাছে গিয়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। হঠাৎ সিংহটা ইদুঁরটাকে আছাড় দিয়ে মেরে ফেললো। আর বললো এত বড় সাহস! আমার ঘুম ভাংগাতে আসে। আর যদি কেউ এমন দু:সাহস দেখাও তাহলে টুট টুট সিংহের হুংকারে আধমরা হয়ে গেলো উপস্থিত প্রাণীগুলো। বিচার না পেয়ে উল্টো স্বজন হারিয়ে সবাই যে যার যার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। আর যাওয়ার পথে এক রাশ তীব্র ঘ্রণা ছুড়ে দিয়ে গেলো সিংহ রাজার প্রতি।