সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সর্বত্রই এখন গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে ঝুলন্ত সজনের সবুজ সমারোহ। শক্ত ও পোক্ত না হতেই হাট-বাজারে উঠতে উঠতে শুরু হয়েছে পুষ্টি গুনে ভরপুর সজনে এবং দ্বিগুণ দামে তা’ কিনছেন ক্রেতারা। বাজারে এখন প্রতিকেজি সজনে ডাঁটা ১শ ৪০ টাকা থেকে ১শ ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগীতা ও পরামর্শে বাড়ছে সজনে চাষের প্রবণতা। গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে, বাড়ির আঙ্গিনায়, উঁচু ভিটায়, কৃষি জমির ধারে, বাড়ির পাশে, পুকুর পাড়ে ও ফাঁকা পরিত্যক্ত জায়গায় সজনে গাছের ভাঙা বা কাটা ডাল রোপন করে তেমন কোন যত্ন ছাড়াই সজনে গাছ বড় হয়ে অঢেল ফলন দিয়ে থাকে। ইংরেজিতে সজনের নাম ‘‘ড্রামস্ট্রিক’’। যার অর্থ ঢোলের লাঠি। বীজ থেকে সজনে চারা তৈরি ব্যয়বহুল, কষ্ঠসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পুষ্টি ও ঔষধি গুণসমৃদ্ধ সবজি সজনের ফুল-পাতা-ডাঁটা সবটাই খাওয়া যায়। এর সব কিছুতেই রয়েছে সমান পুষ্টিগুণ। জলবসন্ত, ডায়রিয়া, লিভারজনিত রোগ প্রতিরোধ করে সজনে। সজনের ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সজনের ডাঁটা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে, রাতকানা দূর করে, দুর্বল হাড় শক্ত করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে রক্তচাপ কমায়। সজনেতে জ্বলীয় অংশ, খনিজ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, ক্যালোরি, প্রোটিন চর্বি, শর্করা, ক্যালশিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন ভিটামিন বি, সি ও খাদ্যোপযোগী প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। অবশ্য সজনে গাছের প্রতি সবার তেমন আগ্রহ না থাকলেও ডাটার প্রতি আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ঊপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানাযায়, সজনের ডাল রোপণ করলেই গাছ হয়। কোনো খরচ নেই। চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোটা বৈশাখ মাস পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। বীজ ও ডাল এর মাধ্যমে সজনের বংশ বিস্তার করা বেশ সহজ। এদেশে বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষাবাদের রীতি এখন পর্যন্ত অনুসরন করা হয়না। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে। সেটিকে শুকিয়ে ফাটালে বীজ পাওয়া যাবে। এ বীজ শুকনো বায়ুরোধী পাত্রে ১-৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখার পর জুলাই-আগস্ট মাসে বীজ তলায় অথবা পলি ব্যাগে বপন করতে হয়। বপনের আগে বীজগুলোকে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজ থেকে চারা গজাতে সুবিধা হয়। বীজ থেকে চারা বের হতে সময় লাগে ১০ থেকে ২০দিন। চারা বের হবার পর নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও অন্যান্য যত্ন পরিচর্যা করতে হয়। বীজ থেকে সজনে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের চেয়ে কিছুটা দেরিতে ফল আসে। সজনে চাষে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সজনে পাতা ও ফল সবজি খুবই পুষ্টিযুক্ত। সকল সবজির তুলনায় সজনেতে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। সজনেতে নানা রকমের রসনাযুক্ত খাবার তৈরি হয়। এসবজি চাষে কৃষকেরা একটু মনোযোগী হলেই এ উপজেলায় সজনের উৎপাদন বাড়বে। অন্যান্য সবজি উৎপাদনের চেয়ে সজনে লাভজনক বলেও জানান তিনি।
Please follow and like us: