
সিরাজগঞ্জ তাড়াশে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন নির্মাণের কাজ না করেই অভিনব ভাবে লুকোচুরি করে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিল পাস করিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার এবং সাব-কন্ট্রাক্টর মোঃ মিজানুর এর বিরুদ্ধে।
তবে অর্থ নয় ছয়ের বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, কাজটি মূলত পাবনার ঠিকাদারের তিনি কাজটি অন্য জন কে দিয়েছে। সারা বাংলাদেশে এইভাবেই কাজ হয়ে আসছে আপনি আরো তদন্ত করে দেখতে পারেন। ধরলে অনেক কিছু। না ধরলে কিছুই নয় এ দায় আমার একার নয়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি পিডিপি ৪ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের ৩১ শে জানুয়ারি তাড়াশ উপজেলা পরিষদে ৬টি স্কুলের টেন্ডার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিরাজগঞ্জ থেকে দুইটি স্কুলের দরপত্র পান এবং পাবনার নির্মাণ প্রকৌশলী প্রোপাইটার মোঃ শাহ আলম ১টি স্কুলের সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। এছাড়াও মেসার্স আর এস ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ইমরান কাদের চৌধুরী ৩টি স্কুলে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। সমস্যা শুরু হয় ঠিক তখনই। ঠিক সেই সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতা পরিচয় বিভিন্ন ব্যক্তি তৎকালীন তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার সরোয়ার ধ্রুবকে পাবনা জেলার ঠিকাদারদের কে বাদ দিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বনিম্ন দরদাতা কে কাজ দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একই সাথে পাবনার দুইজন ঠিকাদারকে কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করেন। এহেন সমস্যা সৃষ্টির ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আর এস ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ইমরান কাদের চৌধুরীর ৩টি কাজ স্থানীয় ঠিকাদার মিজানুর রহমানকে সম্পূর্ণ করার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করেন। পরবর্তীতে নতুন উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক যোগদান করলে তিনিও তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজে দিতে বলেন। অন্যথায় তিনি বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করেন এবং মেসার্স আর এস ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের পাওয়া একটি সাইট খুঁটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যাদেশ বাতিল করেন।
কাজটিতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ঠিকাদারি কাজের দায়িত্ব নেয়া মোঃ মিজানুর রহমান স্থানীয় তারাশ উপজেলা যুবলীগের নেতা মোঃ আব্দুল মোমিনকে সহযোগী হিসেবে নেন।
এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে কাজের চাপ প্রয়োগ করে নিজেরে পছন্দ বজলু ঠিকাদার কে কাজ করার জন্য খুঁটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর পূর্ণঅনুমোদন কার্যাদেশ করিয়ে আনেন । সেখানে এস.ও. থাকেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী বাবলু আকতার। কাজটিতে এস.ও. হিসাবে থাকলেও মূলত ঠিকাদারি হিসেবে কাজটি তিনিই করছেন বলে একাধিক স্থানীয় লোকজন জানান। খুঁটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ নিয়ে ইতিপূর্বে স্থানীয় লোকজন বন্ধ করে দিলে কাজের গুণগত মান ভালো করার নিশ্চয়তা দিয়ে পুনরায় চালু করেন।
এদিকে আমবাড়িয়া শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪.৮৯ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০২৪ সালের ০৬ জানুয়ারী থেকে ৩০ মে তারিখের মধ্যে৷ আমবাড়িয়া শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ টি বিল যথাক্রমে ১০,৭২,৫০০ টাকা ২য় বিল, ৮,২৫,০০, তৃতীয় বিল ২৪, ৭৫,০০০ টাকা প্রদান হয়, যখন স্কুলের নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। মূল ঠিকাদারকে অবগত না করেই এই বিল উত্তোলন হয়। নাম প্রকাশ না করে উপজেলা অফিসের একাধিক কর্মচারী বলেন, মূল ঠিকাদারের একাউন্টে বিল জমাই হয়নি, উনি কিছু জানার আগেই বিল তোলা শেষ। উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক এবং এস ও বাবুল আকতারসহ তাড়াশ সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও মো: মিজানুর এর সম্মিলিত যোগ সাজোসে অভিনব কায়দায় পরপর তিনটি বিলের অর্থ আত্মসাত করা হয়। পরে বিষয়টি সকলের দৃষ্টিগোচর হলে এটা নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে বসে সালিশ দরবার হয় বলেও একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন। এছাড়াও গাইড ওয়াল নির্মাণ না করেই প্রকল্পের ২ লক্ষ টাকা আত্মসাত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম কাজ ব্যাতিত প্রত্যায়ন না দেয়ায় তা ব্যর্থ হয়।
প্রায় আড়াই বছর আগে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এতদিনে গ্রেট বিম ও কলাম ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। বিল উত্তোলন করা হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা। এখন টাকার অভাবে বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
মূল ঠিকাদার মের্সাস আর এস ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ইমরান কাদের চৌধুরী বলেন, আমার বাড়ি পাবনার ঈশ্বদীতে হওয়ায় তাড়াশের স্থানীয় আব্দুল মমিন ও মোঃ মিজানুর রহমানকে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যে পরিমাণ বিল উত্তোলন হয়েছে সে পরিমাণ কাজ হয়নি। আমাকে অবগত না করেই অনেক কিছু সম্পন্ন করা হয়েছে। বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আমবাড়িয়া শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৬৫ সালে স্থাপিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলের আশপাশের কয়েক গ্রামের শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। শ্রেণি কক্ষের সংকটে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। বিদ্যালের নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসেন বলেন, আগামী জুন মাসে পিডিপি ৪ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। বার বার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হককে। কিন্তু তিনি কোন কর্ণপাত করছেন না।
তদারকি কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, আপনার কিছু জানা থাকে এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হকের সাথে কথা বলুন। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি সেভাবে কাজ করেছি।
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিল উত্তোলন করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর যৌথ স্বাক্ষরে। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন।
এহেন পরিস্থিতিতে অদৌ আমরাড়িয়া শ্যামপুর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয় এর নতুন ভবন আলোর মুখ দেখবে কিনা সে ব্যাপারে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।