সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি-
তাহিরপুরে শনির হাওরে পাউবোর ঝালখালি ও নান্টুখালি হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টর বোর ধান। জনশ্রæতি আছে শনির হাওরের ধান সারা দেশে ৩ দিনের খাদ্যের যোগান । একমাত্র বোর ফসল হারিয়ে হাওর পারের কৃষকের আহাজারিতে বাতাস যেমন ভারি হয়ে উঠছে তেমনি ঝড়ছে চোখের জল । গতকাল মঙ্গলবার সকালে শনি হাওরে ভেঙ্গে যাওয়া দ’ুটি বাধ সরজমিনে পরিদশন করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম। ভেঙ্গে যাওয়া বাধ দেখে এবং কৃষকরে আহাজারিতে তিনিও মর্মাহত হন। সোমাবার দুপুরে বৃহৎ বোরো ফসলি শনির হাওরে ঝালখালি হাওররক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশের সংবাদ পাওয়া যায়। সংবাদ পাওয়ার পর সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় নদী পার সংশ্লিষ্ঠ ঝালখালি হাওর রক্ষা বাধ ভেঙ্গে শনির হাওর পানি প্রবেশ করছে। সে সময় তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বালি পরিবহনের স্টীল বডি বলগেড নৌকা ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে আটকে দিয়ে বাধ কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দু’শতাধিক লোকজন পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন রকম ঝালখালি বাঁধটি রক্ষা করে। রক্ষার পরও স্টীল বডি নৌকার নীচ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছিল হাওরে। পরবর্তীতে কিছু লোকজন রাতের অন্ধকার ও বৈরী আবহাওয়ায় হাওরের বেড়ী বাধ ধরে বাড়ি ফেরার পথে শনি হাওরের নান্টুখালি নামক স্থানে এসে দেখে এ বাধটিও ভেঙ্গে হাওরে প্রবল গতিতে পানি প্রবেশ করছে। সে সংবাদ মোবাইলে ঝালখালি বাধে কাজ করা লোকজনকে জানিয়ে দিলে সংবাদ পেয়ে সবাই বাঁধ রক্ষার চেষ্টা ছেড়ে দেয়। ফলে দু’টি ভাঙ্গা বাধ দিয়ে প্রবল গতিতে শনির হাওরে পানি প্রবেশ করায় সোমবার রাত ও মঙ্গলবার দিনের মধ্যে শনির হাওরের ১০ হাজার হেক্টর বোর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষকের কিছু ধান কাটার উপযুক্ত হলেও প্রতি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী মূল ৭ থেকে ৮ শ টাকা হওয়ায় অনেক কৃষক ধানই কাটান নি। ফলে দিনের আলোতেই কৃষকের চোখের সামনে একে একে পানিতে ডুবছে জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সোনালী বোর ধান। শনির হাওর পারের উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক নাজিম উদ্দিন বলেন, বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ধান কাটতে হাওরের গিয়েছিলাম কিন্তু দ্রæত পানি বাড়তে থাকায় আমার চোখের সামনেই তলিয়ে গেল আমার ১৫ কেদার জমি ধান । বীর নগর গ্রামের কৃষক ইয়াজদানী বলেন, তিনি সোমবার সারা দিন বাঁধে মাঠি কাটার কাজ করেছেন যে কারনে তার নিজের জমি তলিয়ে গেলেও তিনি কোন খোঁজ খবর নিতে পারেন নি। সোমবার হাওরে বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার সরজমিন ঘটনাস্থলে ছিলেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুছ ছালাম, তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদূল্লাহ সহ এলাকার শত শত লোকজন। সবার প্রানান্থ চেষ্ঠায়ও রক্ষা করা গেল না শনির হাওরে কৃষকরে বোর ধান। সে সংবাদ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম ভেঙ্গে যাওয়া বাধ গুলো পরিদর্শন করেন। সেময় তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে মর্মাহত কন্ঠে বলেন, বাধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় শনির হাওর পারের কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে তা সত্যি অপূরনীয়। অপরদিকে তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান,মহালিয়া,বলদা, আঙ্গারউলি সহ ১৫ টি হাওর পারের লোকজন জানিয়েছেন তাদের হাওরগুলিও মারাত্মক হুমকির মূখে রয়েছে যে কোন সময় বাধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে হাজার হাজার হেক্টও জমির বোর ফসল।