বরিশাল প্রতিনিধিঃ
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কেন্দ্র সচিব ও হল সুপারের দ্বায়িত্বে অবহেলার কারণে তিন ঘন্টার এসএসসি’র গনিত পরীক্ষা চার ঘন্টা নেওয়ায় দুই শিক্ষককে বহিস্কার করা হয়েছে। গতকাল রোববার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা বোর্ড। তারপরেও ২০১৬ সালের ভুল প্রশ্নপত্রে চার ঘন্টা পরীক্ষা নেয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় শনিবার রাতে কেন্দ্র সচিব ও হল সুপারকে বহিস্কার করা হয়েছে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা জানান, চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশালের আগৈলঝাড়ার শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে শনিবার গনিত পরীক্ষায় ৩৮৩জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলে সবাইকে প্রশ্ন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮১জন পরীক্ষার্থীকে এমসিকিউ ২০১৬ সালের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। কিছু সময় পরীক্ষা দেওয়ার পরে ২০১৬ সালের প্রশ্ন দেওয়ার বিষয়টি ধরা পরে। পরে পাশ্ববর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র গৈলা মডেল স্কুল থেকে এক খানা প্রশ্ন এনে তা ফটোকপি করে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সরবারহ করে সকাল ১১টায় পুনরায় ৮১জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরু করা হয়। শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৬নং হলের পরীক্ষার্থী উপজেলার কাঠিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব বাড়ৈ, অমিয় অধিকারী, অরিন্দমসহ আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শনিবার গনিত এমসিকিউ পরীক্ষায় তাদের হলে ১২জন পরীক্ষার্থীকে ভূলবসত ২০১৬ সালের প্রশ্ন দেওয়া হয়। বিষয়টি ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা কেন্দ্র সচিব ও শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদকে অবহিত করেন। কেন্দ্র সবিচ হারুন অর রশিদ বিষয়টিতে কোন গুরুত্ব না দিয়ে ওই পুরানো প্রশ্নেই পরীক্ষা দিতে বলেন। আধা ঘণ্টা (শেষ) পরীক্ষা দেওয়ার পরে কেন্দ্র সচিব এসে বলেন যে সব পরীক্ষার্থী ২০১৬ সালের প্রশ্ন পেয়েছ তাদের পুনরায় নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। এতে পরীক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একই অভিযোগ করেন, ওই কেন্দ্রের অন্তন্ত আরো বিশজন পরীক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রে কর্তব্যরত একজন শিক্ষক জানান, এ ঘটনার পরে পাশ্ববর্তি গৈলা মডেল স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে নতুন একটি প্রশ্ন এনে তা ফটোকপি করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতে করে সৃজনশীল পরীক্ষা শুরু করতে এক ঘণ্টা বিলম্ব হয়। ফলে পরীক্ষা এক ঘন্টা পরে শেষ করা হয়। স্থানীয় কয়েক জন সংব্দা কর্মি অভিযোগ করে জানান, তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রে যেতে চাইলে কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান করেন এবং গেট বন্ধ করে পরীক্ষা নেন কর্তৃপক্ষ। সংবাদ কর্মিরা বলেন, আমরা পরীক্ষা কেন্দ্রের মূল ফটকে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করি এবং একটার পরিবর্তে দুপুর ২টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রের ফটক খুলে দেওয়া হয়। কয়েকজন অভিভাবক জানান, গনিত পরীক্ষা একটি গুরুত্ব বিষয়, এখানে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে সন্তানদের ফলাফল নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ও হতাশ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভূল ধরা পরার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপ গ্রহনে কিছুটা সময় লাগায় পরীক্ষা শেষ করতে বিলম্ব হয়। পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল এক ঘন্টা বিলম্বে পরীক্ষা নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রশ্নপত্র দেরিতে দেয়ায় তাদের পরীক্ষার সময় বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক বরিশাল শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। শনিবার রাতে কেন্দ্র সচিব শিক্ষক হারুন অর রশিদ ও হল সুপার শিক্ষক অনিল চন্দ্র করকে বহিস্কার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল। এ ঘটনায় গতকাল রোববার বরিশাল শিক্ষাবোর্ড তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কারা কমিটিতে থাকছে তার সিদ্বান্ত নেয়া হয়নি।