উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:- দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর নড়াইল-ঢাকা সড়কের কালনাঘাটে মধুমতি নদীতে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়। এর আগে শনিবার রাত ৪টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কালনা ফেরিঘাটের পন্টুনে রড বোঝাই একটি ট্রাক বিকল হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে করে ভোর থেকে ফেরিঘাটের দুই পাশে ঢাকা রুটসহ বিভিন্ন সড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন আটকা পড়ে। যাত্রী সাধারণ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় নৌকা করে নড়াইলের মধুমতি নদী পার হন। সকাল ৯টা থেকে ফেরি পারাপার শুরু হলেও ঘাটের দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন হয়েছে। মধুমতি নদীর কালনা ফেরি ঘাটের দুটি গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ও একটি ফেরী বিকল হওয়ায় যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঘাট কর্তৃপক্ষ কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে ছোট একটি ফেরী দিয়ে পরিবহন ও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও ঘাটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, পদ্মার এপারে দক্ষিনাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ন ফেরি ঘাট হলো গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনা ফেরি ঘাট। এখান দিয়ে ঢাকা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল বন্দর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় যেতে রাস্তা কমাতে পরিবহন চালক ও যাত্রীরা এ ঘাটটি ব্যবহার করে থাকেন। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৪/৫শ’ যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন ও কয়েক হাজার যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। এ ঘাটের জন্য কর্তৃপক্ষ দু’টি ফেরি বরাদ্দ রাখলেও বর্ষা মৌসুমে মধুমুতি পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় বড় একটি ফেরি বিকল হয়ে পড়েছে। সেই সাথে দুটি গ্যাংওয়ে তলিয়ে গিয়ে যাওয়ার কারনে ফেরীটি বন্ধ রেখে ছোট একটি ফেরি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে নড়াইলের লোহাগড়া অংশের উত্তর পাশের ঘাটে পল্টুনের গ্যাংওয়ে সম্পূর্ণ নদীতে তলিয়ে গেছে। ফলে ওই ঘাট দিয়ে যানবাহন পারপার বন্ধ রয়েছে। আর দক্ষিণ পাশের ঘাটে পল্টুনের গ্যাং-ওয়ের অর্ধেক তলিয়ে গেছে। নদীতে ভাটার সময় কিছুটা দূর্ভোগ কমলেও জোয়ারের সময় অনেক গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়ায় গ্যাংওয়ের উপর গিয়ে গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। যার ফলে প্রতিদিন শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ায় ফেরী পারাপারে চরম ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। তলিয়ে গ্যাংওয়ে থেকে পারে যেতে যাত্রীদের জন্য নৌকা দিয়ে সাকো তৈরী করেছেন স্থানীয়রা। তা পরাপারের জন্য প্রত্যেক যাত্রীদের কাজ থেকে নেওয়া হচ্ছে দুই টাকা করে। এদিকে কালনা ফেরী ঘাটটি গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন হওয়ায় মনজুরুল ইসলাম নামে এক ইজারাদার তা নিয়ন্ত্রণ করেন। চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে কাজ করে যাচ্ছেন ঘাট কর্তৃপক্ষ। পল্টুনের গ্যাংওয়ে রাস্তায় ইটের খোয়া ফেলে গাড়ী চলাচলের জন্য ব্যবস্থা করছেন তারা। দ্রুত বড় ফেরীটির জন্য নতুন ইঞ্জিন বসানো ও গ্যাংওয়ে দুটির মেরামত করা না হলে দূর্ভোগ আরো চরম আকার ধারন করবে বলে মনে করছেন তারা। ঢাকা-নড়াইল রুটের খানজাহান আলী পরিবহনের চালক রনি শেখ, এম্বুলেন্স চালক কবির, ব্যবসায়ী বদরুল আলম অভিযোগ করে, আমাদের জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, নদীতে পানি বাড়ার ফলে বড় ফেরিটি বন্ধ রয়েছে। ছোট একটি ফেরী দিয়ে যানবাহন পরাপারের চেষ্টা চলছে। ফলে আমাদের ও ডাত্রীদের পরাপারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। ঘাট পারাপারে একজন যাত্রীর গুনতে হচ্ছে ১২ টাকা। জিম্মি হয়ে পড়েছে চলাচলকারীরা। কালনা ঘাটের ব্যবসায়ীর জানান, কয়েকবার ওঠালেও নদীতে পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় সমস্যা রয়ে গেছে। ফেরী ঘাটে সমস্যার কথা স্বীকার করে গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমাদের জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আগের থেকে পারাপারের জন্য যানবাহনে সংখ্যা বেড়েছে। ওভার লোডের কারনে ফেরীর পাটাতন ও গ্যাংওয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেরী চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। পানি কমে গেলে ফেরী চলাচল স্বাভাবিক হবে। তবে ফেরীতে নতুন ইঞ্জিন বসানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।