নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:- রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) দুর্গাপুর জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে ‘বকেয়া বিল’ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। চলতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের সাথে বকেয়া বিলের বোঝা গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে রীতিমতো গলাকাটা হচ্ছে গ্রাহকদের। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, বকেয়া মাসের বিল পরিশোধ করা হলেও পুণরায় চলতি মাসের বিলের সাথে বকেয়া বিল গুলোর টাকা যোগ দেখিয়ে বিল দেয়া হয়েছে তাদের। পবিসের এ ধরনের কর্মকান্ডে হতবাক হয়েছেন গ্রাহকরা। আবার অনেক গ্রাহক বুঝতে না পেরে পুরো টাকাই পরিশোধ করেছেন। পবিসের এ ধরনের কর্মকান্ডে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। অপরদিকে, এ ঘটনাটি সফ্টওয়্যারের ত্রুটির ফলে হয়েছে দাবি করে দায় এড়াতে চাচ্ছে পবিস কর্তৃপক্ষ। খোজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলা সদরের শালঘরিয়া রোডের গ্রাহক মখলেসুর রহমানের গত ফেব্রুয়ারী মাসের বিল এসেছে ৮৫৪ টাকা। এই বিলের সাথে গত বছরের জানুয়ারী মাসের ৮৫৮ টাকা, ফেব্রুয়ারী মাসের ৫৮৮ টাকা ও ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮৩৬ টাকা বিল বকেয়া দেখিয়ে চলতি মাসের বিলের সাথে যোগ করে ৩ হাজার ১৮৯ টাকা বিল দেখানো হয়েছে। একই ভাবে গ্রাহক আব্দুল মালেকের গত ফেব্রুয়ারী মাসের বিল এসেছে ১৯৭ টাকা। এই বিলের সাথে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ৪৯৩ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসের ৬৯০ টাকা। গত বছরের জানুয়ারী মাসের ৫৫০ টাকা ও ফেব্রুয়ারী মাসের ৩১০ টাকা বকেয়া বিল হিসেবে যোগ করে তাকে বিল দেয়া হয়েছে মোট ২ হাজার ২৬০ টাকা। আব্দুল মালেকের নামে ইস্যুকৃত আরেকটি মিটারের গত ফেব্রুয়ারী মাসের বিল দেয়া হয়েছে ৪০৭ টাকা। এই বিলের সাথে বকেয়া দেখিয়ে গত বছরের জানুয়ারী মাসের ১১০ টাকা ও ফেব্রুয়ারী মাসের ৩১০ টাকা বিল যোগ করে তাকে বিল দেয়া হয়েছে। উপজেলা মোড়ের এসপ্লাস প্লাজা মার্কেটের মালিক নাহিদুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত মিটারের গত বছরের ডিসেম্বর মাসের বিল এসেছে ৩ হাজার ৪৮১ টাকা। এই বিলের সাথে ওই বছরের অক্টোবর মাসের ৬ হাজার ২৪৮ টাকা ও নভেম্বর মাসের ৪ হাজার ৪৬৯ টাকা বিল বকেয়া দেখিয়ে যোগ করে তাকে বিল দেয়া হয়েছে। পরে বিলের কপি নিয়ে পবিস দুর্গাপুর জোনে যাওয়া হলে হাতে কেটে তার হিসাব ঠিক করে দেয়া হয়। ভাংগীর পাড়া গ্রামের গ্রাহক সিদ্দিকুর রহমানের নামে ইস্যুকৃত মিটারে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের বিল এসেছে মাত্র ৯০ টাকা। অথচ একই মিটারে গত জানুয়ারী মাসের বিল এসেছে ৭০০ টাকা। পরে এ নিয়ে পবিসের দুর্গাপুর জোনে অভিযোগ নিয়ে গেলেও কোন সুরাহা না করে তার কাছ থেকে পুরো ৭০০ টাকাই আদায় করা হয়। দুর্গাপুর সদরের জামতলা মোড়ের বাসিন্দা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের বিল বকেয়া দেখিয়ে গত ফেব্রুয়ারী মাসের বিলের সাথে যোগ করে বিল দেয়া হয়েছে তাকে। তিনি এ বিষয়ে পবিসের দুর্গাপুর জোনে গেলে পবিস কর্মকর্তারা তাকে জানান সফ্টওয়্যারের সমস্যার কারনে এ ধরনের কাজ হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ দুর্গাপুর সদরের জামতলা মোড়ের বাসিন্দা বাহাদুর রহমান শতশত গ্রাহকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েজন গ্রাহক জানান, পবিসের দুর্গাপুর জোনের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে বকেয়া বিল গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপিয়ে কৌশলে ওই বিলের টাকা গুলো নিজেদের পকেটে পুরছেন। বিল পরিশোধের কাগজ গুলো যত্ন করে না রাখলে পুরো টাকাই পরিশোধ করতে হতো তাদের। আর যেসব গ্রাহক বিল পরিশোধের কাগজ গুলো সংরক্ষণ করেননি তাদের পুরো টাকাই আবারো পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিল পরিশোধ করার নিয়ম চালুর পর মনে হয়েছিল জালিয়াতি কম হবে। কিন্তু এখন জালিয়াতির আরো বড় ধরনের সুযোগ তৈরী হয়েছে। তা না হলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের বিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের বিলের সাথে যোগ হয় কিভাবে। তাও একটা না, কারো কারো তিন থেকে চারটা বিল এভাবে বকেয়া দেখিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের বিলের সাথে যোগ করে বিল দেয়া হয়েছে তাদের। পবিসের দুর্গাপুর জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবু উমাম মোঃ মাহবুবুল হকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলা হলে তিনি দাবি করেন, সফ্টওয়্যারে সামান্য ত্রুটির কারনে এ সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। কয়েকজন গ্রাহক তার কাছে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি বিল গুলো দেখে ঠিক করে দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।