
ইমরান খান রাজ , সাংবাদিক, লেখক ।
ধর্ষণ! বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধর্ষণকে আমি একটি রোগ হিসেবেই দেখবো। মারাত্মক মরনব্যাধী রোগ। ধর্ষণকে একটি ছোঁয়াচে রোগ হিসেবেই আমি আখ্যায়িত করবো। এর কারনটা অতি সাধারণ। প্রতিদিন যেই গড় হিসেবে বাংলাদেশের ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এটাকে ছোঁয়াচে রোগই বলা বাহুল্য। প্রতিদিন বাংলাদেশের আনাচেকানাচে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে হাজারো মা-বোন, শিশু-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা। এর ফলে ঘটছে আত্নহনন এর প্রবণতা। অকালেই হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আশার আলো। এভাবে আর কতটি নিরীহ প্রাণ বলী দিতে হবে তার হিসেব কারো কাছে আছে কি? তাহলে আমাকে জানাবেন অবশ্যই। ধর্ষণের ফলে একজন নিরপরাধ মেয়ের জীবনে যে ক্ষতি সাধন হয়, সারাজীবন ভরে ভালো কাজ করে গেলেও সেই কালো দাগটি ধর্ষিত মেয়ের জীবন থেকে মুছে দেয়া সম্ভব নয়। সেই স্মৃতিগুলো কুরে কুরে খায় মেয়েটার অবসরকে, মেয়েটার দেখা সুন্দর স্বপ্নগুলোকে এবং এগিয়ে যাবার প্রত্যয়ে মেয়েটার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ধুয়ে-মুছে ধ্বংস করে দেয়। আর সেই ধ্বংসযজ্ঞে পুরতে থাকে পরিবার ও সে নিজে।কেনো হয় এই ধর্ষণ? কে বা কারা করছে এই জঘন্যতম কাজটি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে কারা দায়ী? ছেলেরা নাকি খোদ মেয়েরাই এই অপকর্মটির জন্য দায়ী। মেয়েদের নির্লজ্জ পোশাক বা খোলামেলা চলাফেরা ধর্ষণের ক্ষেত্রে কতটা দায়ী তার নিখাদ প্রমাণ আমার হাতে নেই। নারীরা নারীসুলভ আচরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। অবাধ খোলামেলা চলাফেরা নারীদের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। নিজের পরিবার, সমাজ ও ধর্মের কথা বিবেচনা করে নারীদের শালীনতা বজায় রাখা একান্ত অপরিহার্য। অপরপক্ষে ধর্ষণ ঘটনার মূল হোতা হিসেবে কিছু কুলাঙ্গার ছেলেদেরকে ধরা হয়। ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি নিচু রাখতে পারলে ধর্ষণ কখনো ঘটবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবেই কি ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি নিচু আছে? পারিবারিক অবহেলা, অপসংস্কৃতি, ভুল শিক্ষা, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা, সামাজিক বৈষম্য, ব্যক্তিত্বহীনতা, প্রাপ্ত বয়সেও বিবাহ না করা, বেকার সমস্যাই ধর্ষণ ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারন বলে আমি মনে করি। একজন ছেলেকে পারিবারিকভাবে সঠিক শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা দিলে সেই ছেলে কখনো বিপথগামী হতে পারে না। ধর্ষণ ঘটনা কমাতে অপসংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। সঠিক ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এবং সেই জ্ঞান অনুযায়ী জীবন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সামাজিক বৈষম্য, ভুল শিক্ষা ও ব্যক্তিত্বহীনতা ধর্ষণ ঘটনার জন্য অনেকটা দায়ী। বেকার সমস্যার ফলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্ষণ। একজন শিক্ষিত চাকুরীজীবী ছেলে কখনো এমন জঘন্য কার্যকলাপে নিজেকে জরাতে চাইবে না এটা স্বাভাবিক।ধর্ষণ ঠেকাতে চাই সরকারি কার্যকরী পদক্ষেপ। ধর্ষণকারীর বিচার হতে হবে অতি দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক। যাতে করে নতুন করে অন্য কোন ছেলে এই পাপ কাজটি করার আগে শতবার চিন্তা করে। ধর্ষণ শুধুমাত্র একটি ব্যাধি নয়। এটি দেশ জাতির জন্য অনেক বড় একটি অভিশাপ। এই অভিশাপের কালো অধ্যায় থেকে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালি জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আর সেই গুরুদায়িত্বটা নিতে হবে সম্পূর্ণ আমার, আপনার ও আমাদের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ধর্ষণ নামক এই ব্যাধি ও অভিশাপ থেকে আমাদের বাঙ্গালি জাতিকে মুক্ত করবে বলে আমি আশাকরি।