নয়া আলো ডেস্ক-
নববর্ষের ভোরের আকাশে উদিত সূর্যের আলোতে পরশ স্নাত হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ। আমরা বাঙ্গালীরা চাই বর্ষবরণের এ আনন্দ উৎসবটিকে সার্বজনীনভাবে নিঃশঙ্কোচে উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালন করতে, করেও থাকি। যে যার জায়গা থেকে বৈশাখকে বরণ করে নেয় অনিঃশেষ ভালোবাসায়। যেখানে বাঙালী পরিণত হয় শতভাগ বাঙালিয়ানায়। গ্রাম থেকে নগরবাসী সবাই একই সুরে গেয়ে উঠে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…….’।
বাংলা বছরের প্রথম দিনটি উদযাপন আমাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বর্ষবরণ উদযাপনে নতুন পোশাকের বিষয়টিও প্রাধান্য পায় সেই ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে। নতুন জামা পরে গঞ্জের হাটে কিংবা বৈশাখী মেলায় যাওয়া বাংলার চিরায়ত রুপ। আপ্যায়নে, উদযাপনে এবং পোশাকের বর্ণিলতায় দিনটির জন্য আমরা প্রতীক্ষা করে থাকি ৩৬৪ দিন ধরে। এরই মাঝে দেশের ফ্যাশন শিল্পের উদ্যোগী মানুষেরা নববর্ষের পোশাকের ডালি সাজিয়ে তোলেন নান্দনিক সৃজনশীলতার অনুভবে। ক্রেতারাও একই সমান আন্তরিকতা ও দেশজ পণ্যের টানে উদ্বেগ হয়ে দীর্ঘ করে থাকেন নিজের বৈশাখী সংগ্রহের তালিকা। যেন উপহারে , দেয়া, নেয়ায়, উৎসাহে ভরে থাকে মনপ্রাণ।
প্রতিবছরই বৈশাখী পোশাকের এই বর্ণাঢ্য আভিজাত্যে বাংলাদেশের নববর্ষের দিনই ক্রমশই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে। দেশের ছোট বড় মাঝারি বিপনন কেন্দ্রগুলো মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মধ্য এপ্রিল পযর্ন্ত ক্রেতাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে। তাঁতী, অলংকরণে কারুশিল্পী, ডিজাইন স্টুডিওর সদস্য এবং উদ্যোক্তা সবাই যেন একই সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করেন সম্ভাবনাময় ক্রেতাদের বাসনা অনুযায়ী পোশাকের দৃশ্যাবলী রচনা করতে। একই সঙ্গে অনুপ্রেরণায় লোকজ উৎস, বৈশাখ উপযোগী ঐতিহ্যের ধারায় রঙের বৈচিত্র্য ও আবহাওয়া অনুযায়ী উপকরণ সংগ্রহে সবাই থাকে মনযোগী।
দেশীয় বস্ত্রের আরও বিস্তৃতি এবং দেশীয় তাঁতীদের তৈরি পোশাকের বাজার তৈরির বিষয়কে সামনে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা প্লাজায় অনুষ্ঠিত হলো বৈশাখী ফ্যাশন শো ১৪২৩। বছর ব্যাপী দেশীয় পোশাকের ক্যাম্পেইন শুরুর উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো এই বৈশাখী ফ্যাশন শো আয়োজন করেছেন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদের কোরিওগ্রাফিতে ফ্যাশন শো টিতে অঞ্জনস, দেশাল, নিপূণ, এ বি ফ্যাশন মেকার, এম ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, কে ক্রাফট, রঙ বাংলাদেশ, সাদাকালো, টাঙ্গাইল শাড়ী কুটির, মিয়াবিবিসহ এফইএবিয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশাখী পোশাকে র্যাম্পের রানওয়ে আলোকিত করেন দেশ সেরা মডেলরা। তাদের সরব উপস্থিতি মুগ্ধ করে উপস্থিত দর্শকদের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পহেলা বৈশাখ এখন সর্বজনীন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এতে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা যোগ হচ্ছে। পোশাকে বৈশাখের ছোঁয়াও তেমনি একটি। পহেলা বৈশাখের মতো সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে সকল অন্ধকার দূর করে আমাদেরকে আলোর পথে হাঁটতে হবে।
এ আয়োজনে বাঙ্গালীর জীবন ও সংস্কৃতিতে দেশীয় ফ্যাশান শিল্পের বিকাশ নিয়ে এক নাতিদীর্ঘ আলোচনা উপস্থাপন করেন শিক্ষাবিদ বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
এফইবি’র সভাপতি আজহারুল হক আজাদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহমাদ, বরণ্যে অভিনেতা আফজাল হোসেন।
এ আয়োজনের বিশেষ আকর্ষন ছিল জনপ্রিয় ব্যান্ডদল জলের গানের মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা।