সুমন চক্রবর্তী,মণিরামপুর(যশোর)-
নারী শিক্ষায় বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে যশোরের মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। নারীদের সু-শিক্ষায় এগিয়ে না নিলে এদেশের উন্নয়ন যেমন অসম্ভব-তেমনি দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতে নারী শিক্ষার গুরুত্বও অপরিসীম। এমনই চিন্তা- চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে উপজেলার পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নারীদের একটি উচ্চ বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠার জন্য ও শিক্ষার সু-সম্প্রসারণের চিন্তা-চেতনাকে মাথায় নিয়ে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে নারী শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। সেই থেকে মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজের শুভ জয়যাত্রা। তৎকালিন কলেজটি স্থাপনের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন সাবেক সাংসদ মরহুম এড. খান টিপু সুলতান, বর্তমান সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য চাঁদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম, এম নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, মরহুম আকুঞ্জী মোঃ নূর, (অবসর প্রাপ্ত) অধ্যাপক ফজলুর রহমানসহ মণিরামপুরের শিক্ষানুরাগী বেশ কিছু গুণিজন।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের শুরুতে নারী শিক্ষার ব্রত নিয়ে মহিলা কলেজ স্থাপিত হয়ে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে। অফিসিয়াল কার্যক্রমের জন্য ১টি ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ছিল মাত্র ৪টি কক্ষ। জীর্ণশীর্ণ পরিবেশে লেখাপড়ার কার্যক্রম শুরু হলেও ধীরে-ধীরে কলেজটির সার্বিক উন্নয়নে, ফলাফল ও শিক্ষার পরিবেশ সময়োপযোগি করতে পরিশ্রম করতে হয়েছে কলেজের প্রতিষ্ঠাতাবৃন্দসহ প্রতিষ্ঠাকালিন অধ্যক্ষ (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত) কাজী মাহমুদুল হাসান, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের। বর্তমানে কলেজে ৬৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ১৯ কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। দিন যত গড়াচ্ছে-ততোই মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা, জেলাসহ দেশব্যাপী। শিক্ষার মান-উন্নয়নে কলেজের শিক্ষকবৃন্দ যেমন আন্তরিক-তেমনি তৎপর। খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরপুর কলেজটি। ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই উচ্চ মাধ্যমিক অনুমোতি লাভ করে এবং পরের বছর ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই স্বীকৃতিসহ একই সাথে এমপিও ভূক্তি লাভ করে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ডিগ্রী (বিএ), (বিএসএস), (বিকম) ও বিএসসি অধিভূক্তি লাভ করে ১ জুলাই ১৯৯৫ সালে এবং ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে স্বীকৃতি লাভ ও ১৯৯৮ সালের ১ মার্চে এমপিও ভূক্তি হয় । এরপর বিএম শাখা খোলার অনুমোদন লাভ করে ২০০৪ সালে ১ জুলাই এবং একই সাথে স্বীকৃতি ও এমপিও ভূক্তি লাভ করে। ২০১৭ সালে পাবলিক পরীক্ষায় মণিরামপুর উপজেলার বে-সরকারী ( এমপিও ভূক্ত কলেজ) কলেজের মধ্যে মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজ শীর্ষস্থান লাভ করে। যা এ যাবৎ পর্যন্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে উপজেলার সর্বোচ্চ অর্জন। অবশ্য ইতিপূর্বে ২০০৬ সালেও একবার উপজেলার শ্রেষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করেছিল।
কলেজ অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান জানান, এ প্রতিষ্ঠন থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভাল ফলাফল অর্জন করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছে। তারা অনেকেই এখন দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা মিতা সরকার বিচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, এই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বুয়েটের শিক্ষিকা সীমিতা রায় সিথী, মৎস্য কর্মকর্তা মিতা সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মরিয়ম জামিলা মুন্নি, কৃষি কর্মকর্তা ডলি, বিভিন্ন পাবলিক ও বে-সরকারী বিশবিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক এবং ব্যাংক-বীমাসহ দেশের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের অফিস আদালতে কর্মরত থেকে দেশ সেবার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া অষ্ট্রেলিয়ান প্রবাসী নিপা সরকার, কানাডিয়ান প্রবাসী মোনালিসার মতো অনেকেই বিভিন্ন বৃত্তি নিয়ে প্রবাস জীবন শুরু করেছেন।
উচ্চ মাধ্যমিক, বিএম, ডিগ্রী (পাশকোর্স) অনার্সসহ মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রয়েছে ৯৭০ জন। ২০১৭ সালেই এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ (এ+) অর্জন করেছে। চলতি বছরেও কলেজটি উপজেলার শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করে পুরষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে ১টি ত্রি-তল, ১টি দ্বি-তল ভবন বিদ্যমান রয়েছে। শ্রেণি কক্ষ, গ্রন্থাগার, সুবিশাল কম্পিউটার ল্যাব, শিক্ষক কমনরুম, মেয়েদের কমনরুম, প্রয়োজনীয় খেলার সারঞ্জামাদি, আধুনিক সৌচাগার, মনোরম প্রধান ফটক, চারিদিকে প্রাচীর আর সবুজে ঘেরা ছায়া ঢাকা-পাখি ডাকা সুবিশাল চারিপাশে প্রাচীরে ঘেরা একটি মনোরম পরিবেশে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে কলেজটি। সৃষ্টি লগ্নের অনেক মহান ব্যক্তিদের অনেকেই চলে গেছেন পরপারে কিন্তু তাদের মহৎ কীর্তির নিদর্শন হয়ে দাড়িয়ে আছে মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজটি। উপজেলার সর্বসাধারণ মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে মৃত ও জীবিত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মহৎ ব্যক্তিদের।
কলেজের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমান অধ্যক্ষ নূরুজ্জামান সাহেব যোগদানের পর কলেজটি অতীত সব রেকর্ড ছাড়িয়ে উন্নয়নের স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করতে স্বক্ষম হয়েছে।