বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তারা বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক খ্যাতিমান আইনজ্ঞসহ বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।
রবিবার টেকিওর সাইতামা সিটিতে অনুষ্ঠিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘সেভ হিউম্যানিটি ইন বাংলাদেশ, জাপান’ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, দালাল আইনে ৩৭ হাজার লোকের নামে মামলা করা হলেও তখন মাওলানা নিজামীর নামে কোথাও একটি জিডিও করা হয়নি। ৪৩ বছর পর বর্তমান সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি কার্যকর করেছে যা আইনের শাসন ও মানবাধিকারের চরম লংঘন।
এসময় বক্তারা নিজামীর ফাঁসিকে বিচারের নামে নাটক ও প্রহসন ও সুস্পষ্ট জুডিশিয়াল কিলিং বলেও মন্তব্য করেন।
সমাবেশে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা এটিএম মিছবাহুল কবির বলেন, ‘আমরা প্রবাসীরা গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়! বিশিষ্ট আলেম ও জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর এবং জামায়াতে ইসলামী ও তার দলের নেতৃবৃন্দকে টার্গেটকরণ এক বড় ধরণের রাজনৈতিক ধৃষ্টতা, যার সাথে ন্যায় ও সুবিচারের কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সর্বদা ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থী চিন্তার লালন করে, আইন পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ডে কখনই জড়িত হয়নি তারা নিজেরাই এই সাক্ষ্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার যোগসাজশে ইসলামী সংগঠন ও শক্তিগুলোকে টার্গেট বানিয়েছে। জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেবার প্রচেষ্টা বিশ্ব থেকে ইসলামী রাজনীতি নির্মূলে ব্রাহ্মণ্যবাদ ও ইহুদিবাদী প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ।
মিছবাহুল বলেন, মতিউর রহমান নিজামী পাঁচ বছর দুটি মন্ত্রণালয় চালালেও কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও প্রাণভিক্ষার সামান্য চিন্তাও তাকে স্পর্শ করেনি বরং সন্তুষ্ট চিত্তে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে হাসিমুখে শাহাদাতকে বরণ করে নিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
সমাবেশে বক্তারা সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভারতের সাথে সাম্প্রতিক যে চুক্তিগুলো বর্তমান সরকার করেছে তা এখন পর্যন্ত জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হয়নি । তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় এই চুক্তিগুলো সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতের সমর্থন নিতে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো গোপন চুক্তি?
তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের এই সকল ক্ষেত্রে ভারতের কাছে পরাধীনতার ও গোলামীর যে হুঁশিয়ারি জামায়াতে ইসলামী দিয়ে এসেছিলো আজ তা হুবুহু মিলে যাচ্ছে । আমরা বাংলাদেশিরা স্বাধীনতা তথা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল প্রকার স্বাধীনতার বিসর্জন দিয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নিজ কেন্দ্রিক সুবিধার জন্য দেশকে আজ বিকিয়ে দিতে যাচ্ছি। আর এই বিরোধিতা করতে গিয়েই জামায়াতে ইসলামীদের শীর্ষ নেতারা এক একজন করে ফাঁসিতে ঝুলছেন।
সেভ হিউম্যানিটি ইন বাংলাদেশের আহ্বায়ক আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামিক মিশন জাপানের কেন্দ্রীয় সভাপতি কমিঊনিটি লিডার হাফেজ আলাউদ্দিন, প্রিন্সিপাল মাওলানা ছাবের আহমদ, কমিউনিটি লিডার সিরাজুল হক, ব্যবসায়ী আব্দুল মোমেন, সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুর রহমান শিমুল, ময়িনুর রহমান, বশির আহমদ প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফেজ ছাবের আহমেদের পরিচালনায় মাওলানা নিজামীর জন্য আল্লাহর কাছে তার শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনায় দোয়া করা হয়।