মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে সাক্ষাৎ করেছেন পরিবারের ৬ সদস্য।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- নিজামীর স্ত্রী সামছুন্নাহার, দুই ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান ও ডা. নাঈমুর রহমান, পুত্রবধূ রায়য়ান ও ফালুয়া এবং মেয়ে মহসিনা ফাতেমা।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নিজামীর স্বজনরা তার সঙ্গে দেখা করতে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এ প্রবেশ করেন। গত মার্চ থেকে এ কারাগারের ফাঁসির সেলে বন্দি আছেন তিনি।
কাশিমপুর কারাগার পাট-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার জানান, শুক্রবার সকালে মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের ৬ সদস্য কাশিমপুর কারাগারে আসেন। পরে তারা আবেদন করলে বেলা ১১টার দিকে তাদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর দিন স্বজনরা নিজামীর সঙ্গে দেখা করছেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন।
বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এদিন সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি করেন মাওলানা নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত ২৯ মার্চ ৭০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনটি করেন নিজামীর আইনজীবীরা। এতে মোট ৪৬টি কারণ দেখিয়ে আপিল বিভাগের ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাস ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আরজি জানানো হয়।
গত ৩ ও ১০ এপ্রিল রিভিউ আবেদনটি কার্যতালিকায় এলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে দুই দফা পিছিয়ে যায় শুনানির দিন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির একই আপিল বেঞ্চ।
গত ১৫ মার্চ আপিল মামলাটির ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত।
৭২ বছর বয়সী মাওলানা নিজামী হলেন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা তৃতীয় ব্যক্তি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যিনি এখন সর্বোচ্চ দণ্ডের মুখোমুখি।
পাবনা-১ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত মাওলানা নিজামী ২০০১ সালে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। প্রথমে দুই বছর কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে সরকারের পরের তিন বছর তিনি ছিলেন শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বে।
বাকি শুধু প্রাণভিক্ষার আবেদন
রিভিউ আবেদন খারিজের মধ্য দিয়ে মাওলানা নিজামীর আইনি লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি হয়েছে। এখন সংবিধানের ৪৯ অনু্চ্ছেদ অনুসারে শেষ সুযোগে দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন।
আসামি তা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পেলে সরকার দিনক্ষণ ঠিক করে কারা কর্তৃপক্ষকে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেবে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে।
আর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।
তাদের দুজনের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি।
এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় গতবছরের ২১ নভেম্বর।
এর বাইরে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামিদের মধ্যে কেবল জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় এসেছে আপিল বিভাগে। ট্রাইব্যুনালে তাকে দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায় কমিয়ে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছে, তার রিভিউ চেয়েছে দুই পক্ষই।