
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি –
নড়াইলে আশ্বিন মাস থেকে কার্তিক অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত আদিবাশীদের হাতে তেমন কাজ-কর্ম না থাকায় তাদের। এ সময় অলস সময় কাটে। হাতে কাজ না থাকায় অর্থ অভাবের তাড়নায় আগাম শ্রম বিক্রিসহ বিভিন্নভাারদেনা করতে হয়। তাদের ভাষায়, এই সময়টুকু তাদের কাছে কষ্টের সময়।কষ্টের সময়টা পার করতে গ্রামের আদিবাসী নারীরা হাতে শাবল,খন্তা নিয়ে দলে দলে প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে পড়েন ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দুরের মিঠা পুর নলদী পুড়া বাদুড়িয়া শিখালী কুমলাপুর বন এলাকা থেকে বন আলু সংগ্রহের জন্য। অবশ্য তাদের শিশু-কিশোর সন্তানরাও সঙ্গে যায় বন আলু সংগ্রহের জন্য। যেটি তাদের রাতের খাবার হয়। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের পাঠানো তথ্যর ভিতিতে জানা যায়। বন আলু ধান আলু সুকুর আলু সহ সংগ্রহে করে যাবার পথে। নড়াইল পুলিশ লাইনের সামনের রাস্তায় দেখা একদল আদিবাসী নারীর সাথে। সঙ্গে রয়েছে বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর-কিশোরী। প্রত্যেকেরই হাতে রয়েছে মাটি খোঁড়ার শাবল (খন্তা)। আদিবাসী নারীর বলেন, বেঁচে থাকার একমাত্র কাজই হচ্ছে ক্ষেত-খামারে মজুরি দেয়া। কিন্তু এ সময় ক্ষেত-খামারে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। সংসারের অভাবের কারণে ধারদেনা করতে হয়। বাধ্য হয়ে অনেকে গৃহস্থদের কাছে আগাম শ্রমও বিক্রি করে দেন। কিন্তু তারা আগাম শ্রম বিক্রি কিংবা ধারদেনা না করে রাতের খাবারের জন্য প্রতিদিন সকালে দল বেঁধে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে বাগানের মাটির নিচে থাকা বন আলু খুঁড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এক একজন আন্তত ১৩ থেকে ১৫ কেজি বন আলু সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরেন। এই আলু খুবই তেতো হওয়ায় আগের দিন সিদ্ধ করে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভাতের পরিবর্তে সেগুলো খেয়ে থাকেন। এলাকার আদিবাসী নেতারা বলেন, এ সময় আদিবাসীদের হাতে কাজকর্ম থাকে না বলেই কমবেশি সব পরিবারেই অভাবে থাকে। অনেকে অভাবের কারণে আগাম শ্রম বিক্রিসহ ধারদেনা করে থাকেন। তবে কম মূল্যে আগাম শ্রম বিক্রি করতে হয়। আবার ধারদেনা করতে গেলে চড়া সুদ দিতে হয়। অনেকের জন্য এগুলো মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়ায় বলে এগুলো না করে বন আলু সংগ্রহ করে ভাতের পরিবর্তে সেগুলো খেয়ে থাকে। সরকার হতদরিদ্রদেরকে ১০টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার ব্যবস্থা করলেও বেশির ভাগ আদিবাসীই সেই কার্ড পায়নি। সরকারের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলো থেকেও বঞ্চিত হন আদিবাসীরা।