
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি :
নড়াইলে জঙ্গি সন্ত্রাস, ও মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, নড়াইল শহরে প্রকাশ্য সভায় এ বিশেষ অভিযানের ঘোষনা দেন। ঘোষনা মোতাবেক চলতে থাকে একের পর এক অভিযান। ভয়ে আতংকে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিতে শুরু করে। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, মুর্হুমুহু পুলিশের ঝটিকা অভিযানে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা আটক হতে থাকে। জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত ভয়ে কেঁপে উঠেন। মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের কাছে মূর্তমান আতংক হিসেবে দেখা দেন সরদার রকিবুল ইসলাম। বেশিরভাগ অভিযানে তিনি নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। হয়েছেন সফল। ধরা পড়েছে সন্ত্রাসী। আটক হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমান মাদক। আর্থ-সামাজিক ও ভৌগলিক কারনে মাদক ব্যবসায়ীরা নড়াইলকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে। নড়াইল জেলার উপর দিয়ে বিভিন্ন সড়ক পথে সুকৌশলের মাদক পাচার করেন ব্যবসায়ীরা। এক পর্যায়ে নড়াইলে গ্রামীণ রাস্তা দিয়েও দিয়ে পাচার হতে থাকে মাদক। অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় মাদক পাচার। অল্প সময়ে অধিক আয়ের লোভে অনেকে ঝুকে পড়ে এ ব্যবসায়। বাড়তে থাকে মাদকসেবীর সংখ্যা। বলাচলে মাদক মহামারী আকারে দেখা দেয়। এসমন মূহুর্তে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি),মেহেদী হাসান, মো: জাহিদুল ইসলাম,সহকারি পুলিশ সুপার শারমীন আলম, নিজের পছন্দে ডিবি পুলিশকে ঢেলে সাজান। তাদেরকে অঙ্গীকারাবদ্ধ করান মাদকের আপোষ না করার জন্য। মাদক ধরতে শিখিয়ে দেন কিছু বাড়তি কলা কৌশল। নড়াইল-কালনা মহাসড়ক সহ জেলার প্রত্যেকটি সড়কে চেকপোষ্ট বসিয়ে সুচারু রূপে তল্লাশী অভিযান শুরু করে সুশৃঙ্খল ডিবি পুলিশ বাহিনী। তাদের পাশাপাশি থানা ও ফাড়ির পুলিশদের সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেন। চতুর দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে অভিযান চলতে থাকে। পুলিশের নিত্য নতুন কৌশলের কাছে হার মেনে যায় নতুন মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অনেক পুরাতন মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারীরা। আটক হতে থাকে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগী বহনকারীরা। বাধ্য হয় তারা নড়াইলের রুট পরিবর্তন করতে। মাদকসেবীরাও তটস্থ রয়েছেন। উঠতি বয়সী যুবকেরা যে সমস্ত জায়গায় বসে মাতক সেবন করতো, সেসব জায়গায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়েছে। অনেক শিশু কিশোরকে মাদক সেবন অবস্থায় ধরে পুলিশ তাদের অভিভাবকের নিকট পৌছে দিয়েছে। অভিভাবকরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ায় সেসব কিশোররা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। যে কারনে অনেক পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলামকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নড়াইল রুট পরিবর্তন করে দুইটা রুটে মাদক পাচার হচ্ছে। একটা হলো যশোর, ঝিনেদা ও মাগুরা দিয়ে ঢাকা হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে যাচ্ছে। অপরটি হলো বেনাপোল থেকে নওয়াপাড়া হয়ে খুলনা দিয়ে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের দিকে যাচ্ছে। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ৯০ দিনের জঙ্গি দমন ও মাদকবিরোধী অভিযান শেষ হয়েছে গত ২৩ মে। এই সময়ের মধ্যে পুলিশের দুঃসাহসিক অভিযানে ২ হাজার ২শ পিচ ইয়াবা, ৩শ ৭০ বোতল ফেনসিডিল, ৪৩ লিটার মদ, ২৪ পুরিয়া হেরোইন এবং ১২ কেজি ২শ ৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। এ অভিযানে মোট ২০৬ টি মামলা হয়েছে। আটক হয়েছে ২০৬ জন। নড়াইল সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে ৯০ দিনের বিশেষ অভিযানে সদর থানার পক্ষ থেকে কড়া দৃষ্টি রাখা হয়েছিল। সে হিসেবে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযান অনেকটা বেগবান হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তারপরও এসপি স্যারের নির্দেশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান। গোয়েন্দা পুলিশের নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স এসআই নয়ন পাটোয়ারী, এএসআই জহিরুল, এএসআই সোহেল রানা, এ.এস.আই আলমগীর এ.এস.আই রাজ্জাক, কনস্টেবল শরীফ, শিমুল, বায়েজীদ, মুরাদ, ওলিয়ার, সাজ্জাদ কনস্টেবল জামান, বখতিয়ার, ইমরান, জুয়েল, নাইমুল, টিটো, সোহাগ, শিপন, জব্বার, জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশ ও উপদেশ মেনে কাজ করায় গত তিন মাসে আমরা কয়েকজন বড় মাদক ব্যবসায়ীসহ মাদক চক্রকে ধরে আদালতে সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের কাজ অব্যহত আছে। আশা করি এভাবে কাজ করতে পারলে মাদক নির্মূলে আরো সফল হবো। পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় গত তিন মাসের অভিযানে জঙ্গি ও মাদকবিরোধী অভিযান সফল হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।