কলাপাড়া প্রতিনিধি ঃ
পটুয়াখালী কলাপাড়ায় ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন আইন অমান্য করে তিন ফসলী জমি,ও নদীর চারদিকে রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আন্ধারমানিক নদীর দীর্ঘ এলাকা সাগর মোহনা পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম। অথচ এই নদীর পাড় ঘেঁষে একের পর ইটভাটা করা হয়েছে।শহরতলীর জনবসতিপূর্ন এলাকায় ও সরকারী খাস জমিতে গড়ে উঠেছে প্রভাবশালীদের ৩২টি ইটভাটা। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবন উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকার যখন বৃক্ষরোপনের পাশাপাশি জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচী গ্রহন করছে তখন স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান এমনকি জাপা, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের ব্যক্তিগত ও যৌথ মালিকানাধীন লাইসেন্স বিহীন ইটভাটার কাঠের যোগান দিতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল।কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষিজমির টপসয়েল, নদী তীরের মাটি। এসকল ইটভাটার পাশে কৃষিজমি,বসতবাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বনাঞ্চল থাকার পরও প্রতিনিয়ত নির্গমন করা হচ্ছে কার্বনডাইঅক্সাইড।ইউপি চেয়ারম্যানদের তথ্যানুসারে নীলগঞ্জে ১০টি, টিয়াখালীতে ১০টি, মিঠাগঞ্জে ২টি, চম্পাপুরে ১টি, চাকামইয়ায় ১টি, ধানখালীতে ১টি, লতাচাপলীতে২টি, মহিপুরে ৩টি ইটভাটা করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২/৩টি ইটভাটাকাজ চলছে। সরকারি হিসেবে কলাপাড়ায় কতটি ইটভাটা আছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই ইউএনও-এর কার্য্যালয়ে। এসব ইটভাটায় কয়লার পাশাপাশি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।আর ইটভাটার ইট পরিবহনে ব্যবহৃত ছয় চাকার অবৈধট্রলি ব্যবহৃত হওয়ায় সরকারি অর্থায়নে করা রাস্তাঘাট ভেঙ্গেএকাকার হয়ে গেছে। এনিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ক্যাডার দ্বারা লাঞ্ছিত করা হয়সাধারণ মানুষকে। ইটভাটার কারনেএখন বেড়িবাঁধের বাইরের বনাঞ্চলসবচেয়ে বেশি অনিরাপদ হয়ে গেছে।পাউবোর সরকারি খাস জমি পর্যন্তদখল করে ইটভাটা করা হচ্ছে।এতে বসতভিটা পর্যন্ত বসবাস উপযোগিতা হারাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ইটভাটার কাছাকাছি গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ব-মিল।ইটভাটার মালিকরা খাসজমি দখল করার পরেও সরকারের স্বার্থ রক্ষায় ভূমি অফিসের নেই কোন উদ্দ্যেগ। জেলা প্রশাসনের তহবিলে টাকা জমা না পড়লে মাঝে মধ্যে অভিযান চলার গুঞ্জন রয়েছে। পরিবেশ অধিদপতর বলছে, আইন মেনে গড়ে তুলতে হবে ইটভাটা, ব্যত্যয় হলেই নেয়া হবে ব্যবস্থা। যা কেবল মৌখিক ঘোষনাও কাগজেই থেকে যাচ্ছে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন আইন। ফলে পর্যটন এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও কৃষিজমি রয়েছে এখন চরম বিপর্যয়ের শঙ্কায়। নীলগঞ্জ ইউনিয়নে অন্তত: ১০টি স¦-মিল করা হয়েছে। অথচ নীলগঞ্জের অধিকাংশ জমি তিন ফসলী। অর্ধেক জমিতে ১২ মাস সবজির আবাদ হয়। রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জোরপূর্বক জমি দখলে নিয়ে ইটভাটা তৈরী ও খুন জখমের হুমকীর অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলা করারপর বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।এদিকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) ২০১৩ এ বলা হয়েছে- লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা করা যাবে না। কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুতে কৃষিজমি কিংবা পাহাড়কেটে মাটি ব্যবহার করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া খাল, পুকুর, নদীরপাড় কিংবা চরাঞ্চল কোন সড়কইটসহ কাঁচামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোন ধরনের কাঠ পোড়ানো যাবে না। এমনকি মান সম্পন্ন কয়লা পোড়াতেহবে। আবাসিক, সংরক্ষিত বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা কিংবা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান কিংবা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। এসব মেনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়েনিষিদ্ধ এলাকার এক কি.মি. দূরে, বনাঞ্চলের দুই কি.মি. দূরে, ক্লিনিক হাসপাতালের দুই কি.মি. দূরে এবং গ্রামীণ সড়ক থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরে ইটভাটা করতে হবে। এসব নিয়ম মেনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রনিয়ে ইটভাটার জন্য আবেদন করতে পারবে। জেলা প্রশাসক তদন্ত করেআইনের সবকিছু ঠিক থাকলে লাইসেন্স দেয়ার বিধান রয়েছে। প্রত্যেক লাইসেন্সএর মেয়াদকাল হবে তিন বছর। কিন্তু কলাপাড়ায় অধিকাংশ ইটভাটার ক্ষেত্রে এসব নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। এসব নিয়ম-কানুন না মানলে জেল-জরিমানাসহ বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে যে যার মতো করে ইটভাটা নির্মাণ করে পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে।নীলগঞ্জের একাধিক সবজিচাষী জানান, ইটভাটার কারনে কৃষিজমি থেকে শুরু করে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িঘরের গাছপালা পর্যন্ত মরে যাচ্ছে। ছাই কিংবা্এ্যাশে বাড়ি-ঘরে বসবাস করা যায়না। নদীরপাড়ের মনোরম পরিবেশউজাড় হয়ে যাচ্ছে। একাধিক নতুন ইটভাটার মালিকের দাবি তারা আবেদন করেছেন। যা প্রক্রিয়াধীনরয়েছে। নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করায় ইতোমধ্যে কয়েকটি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তানভীর রহমান।বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোঃ আহসান হাবিব বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের প্রচলিত আইনমেনেই ইটভাটা করতে হবে। এর ব্যত্যয় পেলে তার বিরুদ্ধে বিধিমতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’তিনি আরও বলেন,’কলাপাড়ায় পরিবেশঅধিদফতর থেকে একটি মাত্র ইটভাটার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে যেটি নবায়নের আবেদন সহ নতুন ২৩টি ইটভাটার লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন তারা পেয়েছেন।’