
খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় বসন্তের শুরু থেকেই রক্তিম রঙে রঙ্গীন হয়ে উঠেছে শিমূল গাছের ফুল। শুধু ফুল আর ফুল-পাতা নেই, ফুটন্ত এ ফুলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কোকিলের সুমিষ্ট কুহুধ্বনিতে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া যেন সকলের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। আর এই রক্ত লাল থেকে সাদা ধূ-সর হয়ে তৈরি হয় তুলা। কিন্তু এখন বিভিন্ন প্রযুক্তি তে তুলা তৈরি ও ফোম ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিমূল তুলা ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে।
আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে গ্রামাঞ্চলেরর বিভিন্ন জায়গায় গাছে গাছে শোভা বর্ধন করতো এই শিমূল ফুল। তবে কালের বিবর্তনে ঋতুরাজ বসন্তের এখন আর যেখানে সেখানে চোখে পড়ে না রক্তলাল শিমূল গাছ। এক সময়ে শিমূল গাছের শাখাগুলো বসন্তের আগমনে লাল শাড়ির ঘোমটা পরা গ্রাম্য নববধূর সাজে সজ্জিত হতে দেখা যেত। যা দেখে ব্যর্থ প্রেমিকের মনেও আশা জাগিয়ে তুলতো। মূল্যবান শিমূল গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ানের বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলল ফুটান্তে ফুলের রক্তলাল শিমূল গাছ। শিমূল গাছের রক্তলাল শিমূল যেন চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে রঙ। এটি অন্যান্য গাছ থেকে অনেক উঁচু বিধায় বহুদূর থেকে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না- কবির প্রেরনা, গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা, ভেষজগুণ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব। শিমূল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বোমবাক্স সাইবা লিন’ । এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে হয় এর বংশ বিস্তার। রোপনের ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে ফুল ফোটে। এ গাছ নব্বই থেকে একশ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তুলনামুলক ভাবে মোটাও হয়। নানা প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরা, বসন্তের শুরুতে গাছে ফুল ও পুষ্ট ফল হয়।
বৈশাখে ফল পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনিই ফেটে প্রাকৃতিক ভাবে দূর-দূরান্তে উড়ে ছড়িয়ে বীজ থেকে এর জন্ম হয়। অন্যান্য গাছের মত এটি কেউ শখ করে লাগাই না। অযতেœ অনাদরে প্রাকৃতিক ভাবেই এ গাছ বেড়ে ওঠে।পৌর সদরের কবিরাজ অরুন মন্ডল বলেন, এই শিমূল ঔষধি গাছ হিসাবেও পরিচিত। গ্রামের মানুষ এক সময় আখের গুড় তৈরিতে শিমূলের রস, বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠ-কাঠিণ্য নিরাময়ে শিমূল গাছের মূলকে ব্যবহার করতো।
এগাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর পাতা,ফুল ও ছাল গবাদি পশুর পছন্দের খাদ্য। লেপ, তোষক ও বালিশ তৈরিতে শিমূলের তুলা যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহন করে। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকোমর তুচ্ছ ভেবে কারণে অকারণে কাটচ্ছে। আগে ব্যাপকহারে নির্মাণ কাজে, টুখপিক,বিভিন্ন ধরণের প্যাকিং বাক্স তৈরিসহ ইটভাটার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপন করা হয়নি। ফলে এই গাছ বিলুপ্তির পথে। এর নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশের উপর পড়েছে। এ গাছ অনেক উচু হওয়ায় বক, চিল, কাক, কোকিলসহ বিভিন্ন ধরণের পাখি বাসা বাঁধত। গাছ উজার হওয়ায় এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে। একটি বড় গাছ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকার আয় সম্ভব। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর তেমন চোখে পড়ে না শিমূল গাছ। বিভিন্ন প্রযুক্তিতে তুলা তৈরি ও ফোম ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিমূল তুলা অনেকে ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে। বাংলার চিরন্তর রূপ শিমূল পলাশের লালা সুন্দর্য থেকে আজ আমরা সরে আসছি। ফলে শিমূল গাছ বিলুপ্তর পথে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাণিজ্যিক ভাবে এই উপজেলায় কোথাও শিমূল গাছ বা তুলা চাষ হয় না। যার কারণে এটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এর তুলাটা ভাল, বাণিজিক ভাবে চাষ হলে মানুষ আসল তুলার মর্ম বুঝতে পারতো।